এই অংশে আয়রা ও তার পরিবারের এক আড্ডার মুহূর্ত তুলে ধরা হয়েছে। ছোটফুপি আলেয়া খালাকে ছাদে খাবার নিয়ে যেতে বলেন, কিন্তু তিনি হাতমোজা-পামোজা পরে যেতে চান। আলেয়া খালার এই ছোট্ট কথাটি আয়রাকে গভীর চিন্তায় ফেলে দেয়, কারণ সে নিজে সাধারণত মাথায় কাপড় দেয় না। আয়ান আয়রার অন্যমনস্কতা বুঝতে পেরে তাকে ডাক দেয় এবং খাওয়ার জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু খেতে যেতেই পরিবারের অন্যরা তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে শুরু করে—সে এতক্ষণ কোথায় ছিল, কেন ডাক শুনতে পায়নি ইত্যাদি। আয়রা মজা করে বলে, সে এত প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে বাকিরা সব খাবার খেয়ে ফেলবে। এতে সবাই হাসিতে মেতে ওঠে। এই অংশটি পারিবারিক উষ্ণতা,…
Author: মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া
“মাম্মাম, বাপী কবে আসবে? আমার ড্রয়ারটাতো ভর্তি হয়ে গেল চিঠিতে। বাপী কবে আমার সব চিঠি পড়বে?”__সূহা আমার মধ্যমা আঙ্গুল আলতো হাতে ধরে নাড়া দিচ্ছিল। যেমনিভাবে বাচ্চারা কিছু একটার বাহানা করে। আমি শেষ বিকেলের আকাশটা দেখছিলাম। মৃদুমন্দ বাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছিলো আমায়। নীলিমার সব রং ফিকে হয়ে যাচ্ছে। আকাশে রাজত্ব করছে শুধুই ধূসর মেঘ। আকাশ তার মোহনীয় রুপে মেঘেদের সাজিয়ে রেখেছে। মনে হচ্ছে, গগন-হৃদয়ে বারীশের আবির্ভাব শুরু হবে খানিক পরেই। হোক না শুরু ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। কতদিন বৃষ্টিতে ভেজা হয় না। শেষবার আয়ানের সাথে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম, সেই কয়েক বছর আগে। বৃষ্টি আয়ানের খুব পছন্দের ছিল। বৃষ্টি হলেই সে পাগলের মতো আমাকে নিয়ে ছাদে…
কবিতার এই অংশে মূল চরিত্র ও নিঝুমের মধ্যে এক ধরনের অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং অমীমাংসিত সম্পর্কের অনুভূতি ফুটে উঠছে। ছাদে গিয়ে কিছু সময়ের জন্য নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে, যেখানে দুজনের মধ্যে কথা বলার এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতা চলছে। নিঝুম প্রথমে কথা শুরু করে, যা থেকে বোঝা যায় যে সম্পর্কের মাঝে কোনো অপ্রকাশিত তিক্ততা বা অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে। নিঝুমের কথা মনে করিয়ে দেয়, কিছু বিষয় এখনও পুরোপুরি মেনে নেওয়া হয়নি, এবং এই সম্পর্কের কিছু গোপনীয়তা বা অমীমাংসিত দিক রয়েছে। “আপনি আমাকে এখনো মেনে নিতে পারেন নি বোধ হয়” এই বাক্যটি সম্পর্কের গভীর অনিশ্চয়তা ও অসঙ্গতির এক স্পষ্ট চিত্র। ছাদে এসে প্রথম কয়েক মিনিট আবারও…
আপনার বিভিন্ন সবুজ প্লান্ট ভাল লাগে। তার জন্য আমার ঘরটি আমি সবুজ রঙ্গের হরেক রকমের প্লান্ট দিয়ে সাজিয়েছি। বেলকনিতে লাগিয়েছি আপনার পছন্দের পর্তুলিকা ফুল। জানেন নুসাইবা, এই রুমটাতে আমি কাউকে আসতে দেই না। সবসময় লক করে রাখি। এমনকি নিঝুমকেও বলে দিয়েছি এই রুমে কখনও যেন ঢোকার চেষ্টা না করে! সেও আসে নি। আপনাকে সারপ্রাইজড করার আগেই আপনি আমাকে সারপ্রাইজড করেছেন। শকড হয়ে গিয়েছিলাম। চোখের সামনে দেখতে লাগলাম, আপনাকে ঘিরে আমার স্বপ্নগুলো ধূলোয় লুটোপুটি খাচ্ছে। বিয়ের মাত্র ১৫দিন আগে আপনি সব শেষ করে দিয়ে চলে গেলেন। না ফেরার দেশ আপনি খুব ভাল আছেন, তাই না? জানেন, মায়ার এই পৃথিবীতে আমি ভাল…
আজ অনেক বেশি কথা হলো নিঝুমের সাথে। কিন্তু খাবার টেবিলে আবারও নিরবতা! ভালই হয়েছে। বেশি কথা বললে সে আরও খাবার তুলে দিত। আল্লাহ্ বাঁচাইছে! ডিনার শেষ করে ফ্রেস হয়ে এসে বেডে যখন বসলাম, ঘড়িতে তখন দুইটা বেজে সাত মিনিট। ভাগ্যিস কালকের দিনটা শুক্রবার! না হলে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে অফিস টাইমের অর্ধেক চলে যেত। ঘুম আসছে না আজ। তাই বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম। আজ রাতের আবহাওয়াটা দারুণ তো! সতেজতা বিরাজ করছে। রাতের আকাশে আজ চাঁদ নেই। মিটিমিটি জ্বলছে কয়েকটা তারা। অখিলের বিশালতায় যে তারাগুলো মিটমিটিয়ে হাসছে, সেই তারাগুলো মাঝে কী নুসাইবাও আছে? পাগলি একটা মেয়ে। ওর নাকি চাঁদ ভাল লাগতো না,…
-আপনি এখনও খান নি?-নাহ্! আজ আপনার পছন্দের সর্ষে ইলিশ, মুড়িঘণ্ট, গরুর মাংসের ভূনা, ডিম আর টমেটোর ঝোল আর আলুভর্তা করেছি। আপনি আসলেই একসাথে খাব ভেবে বসে আছি।-কিন্তু!ওর কপালে চিন্তার ভাঁজ খেয়াল করলাম। উৎকণ্ঠা হয়ে উঠেছে সে। বেশ অস্থিরতার সাথেই বললো,-কিন্তু কী? আমি কী সত্যি কথাটা বলে ফেলবো? খুব বেশি নির্দয় শোনাবে না কথাটা? এত কষ্ট করে আমার পছন্দের সব খাবার যে মেয়ে রান্না করেছে। অপেক্ষায় ছিল ৪ ঘন্টার মতো! কোনো অভিযোগ পেশ করেনি। সে মেয়েটাকে কষ্ট দেয়া ঠিক হবে? নিশ্চয়ই কথাটা শোনার পর তারও খাবারের রুচি উঠে যাবে। না খেয়েই শুয়ে পড়বে। আর ঘুমটাও ভাল হবে না। নিজের সাথে হিসাব…
জনৈক ইসলামবিদ্বেষী পশ্চিমা মনোবিজ্ঞানী বলেন : ‘ধর্মের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা মানুষের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যকে ব্যাহত করে। এবং পাপ অনুভূতি তার জীবনকে বিস্বাদ করে রাখে। এই অনুভূতি বিশেষত ধার্মিক লোকদের বন্দী করে রাখে। তাদের কাছে মনে হয় যে, তারা যে পাপ করেছে, তা জীবনের আনন্দ থেকে বিরত থাকা ছাড়া ক্ষমা করা হবে না।’ আর কিছু লোক নিম্নলিখিত কথা বলে : ‘ইউরোপ যতদিন ধর্মকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিল, অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। অতঃপর যখন ধর্মের সেকেলে শৃঙ্খলাগুলি খুলে ফেলল, তখন ধর্মের বন্দিদশা থেকে তাদের অনুভূতিগুলো মুক্ত হলো এবং কাজ ও উৎপাদনের জগতে যাত্রা শুরু করল।’ তারা প্রশ্ন করে : ‘(ধর্মের দাওয়াত দেওয়ার মাধ্যমে) তোমরা কি…
আবু লুবাবা রা. মদিনার বিখ্যাত আউস গোত্রের বনু আমর বিন আউফ শাখার সন্তান হজরত আবু লুবাবা রা.।তিনি আকাবার শেষ বাইয়াতে অংশগ্রহণ করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের ওপর ইমানের ঘোষণা দিয়ে নিজ গোত্রের নাকীব (দায়িত্বশীল) মনোনিত হন। বদর যুদ্ধের যাত্রাকালে প্রতিটি উটের ওপর তিনজন করে আরোহী ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের উটের ওপর আরোহনের সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন আবু লুবাবা ও আলি ইবনু আবি তালিব রা.। তবে পথিমধ্যে আবু লুবাবাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম নিজের অনুপস্থিতিতে মদিনার প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়ে যুদ্ধ থেকে ফেরত পাঠান। বদর যুদ্ধের সম্মুখ সমরে অংশ নিতে না পারায় তাঁর আফসোস হয়। নবিজি তাকে বদরে অংশগ্রহণকারী সাহাবি হিসেবে মর্যাদা দেন এবং…
রুমাইছা বিনতু মিলহান আল-আনসারিয়্যা রা. তার উপনাম উম্মু সুলাইম। এ নামেই তিনি প্রসিদ্ধ। অনেক গুণ ও বৈশিষ্ট্যের আধার ছিলেন তিনি। ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী সাহাবিদের অন্যতম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম জান্নাতে তাঁর উপস্থিতির শব্দ শুনেছেন। আনাস ইবনু মালিক রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন, “স্বপ্নে আমি জান্নাতে প্রবেশ করি। হঠাৎ কারো নড়াচড়ার শব্দ শুনতে পাই। ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তারা বললেন, রুমাইছা বিনতে মিলহান, আনাস ইবনু মালিকের মা। (মুসলিম, হাদিসঃ ২৪৫৬, মুসনাদু আহমাদ, হাদিসঃ ১১৯৫৫;) মালিক ইবনু নজরের সঙ্গে উম্মু সুলাইমের বিয়ে হয়েছিল। সেই ঘরেই আনাস রা. জন্মগ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণ করায় ক্ষোভে স্বামী মালিক ইবনু নজর দেশত্যাগ করে…
মদিনার বিখ্যাত গোত্র আউসের সন্তান সাদ ইবনু মুয়াজ রা.। মুসআব ইবনু উমাইর রা. ইসলাম প্রচারক হিসেবে মদিনায় আসেন। নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে মদিনার প্রতিটি লোকের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেন। একদিন সাদ ইবনু মুয়াজও তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েন। মুসআব রা. তার সামনে ইসলামের বাস্তবতা তুলে ধরেন। কুরআনের কয়েকটি আয়াত তিলাওয়াত করে শুনান। তখন সাদ ইবনু মুয়াজ কালিমা পড়ে মুসলিম হয়ে যান। তার গোত্রে এই সংবাদ মূহুর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে। সাদ রা. ঘরে যান। তিনি তার সম্প্রদায়ের মধ্যে অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তার প্রভাবে সন্ধ্যা হতে না হতেই পুরো গোত্র মুসলিম হয়ে যায়। মদিনার আকাশ-বাতাস তখন তাকবির ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। ইসলামের প্রচার প্রসারের…
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের অন্যতম প্রিয় সাহাবি মুসআব ইবনু উমাইর রা.। তিনি মুসআব আল খায়ের নামেও পরিচিত, ছিলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর একজন সাহাবা। কুরাইশ বংশের শাখা বনু আব্দুল দর গোত্রের লোক ছিলেন তিনি। ৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ইসলামের প্রথম দূত ছিলেন। তিনি উহুদের প্রান্তরে ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে শহীদ হন। মুসআব বিন উমাইরের জন্মের প্রকৃত সাল জানা যায়নি। অনুমান করা হয় তিনি ৫৯৪ থেকে ৫৯৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬১৪ সালে তরুন বয়সেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি কুরাইশ বংশের বনু আব্দুর দার শাখায় জন্মগ্রহণ করেন। মুসআবের পিতা উমাইর ইবনে হাশিম এবং মাতা খুন্নাস বিনতে মালিক। তারা পিতামাতা বিত্তশালী ছিলেন। তরুন বয়সেই তিনি…
আবদুল্লাহ ইবনু উম্মু মাকতুম। শারীরিকভাবে দৃষ্টিশক্তিহীন জন্মান্ধ। কিন্তু এক অসাধারণ অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী। তিনি ছিলেন পবিত্র কুরআনের হাফিজ। তার সম্মানে মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ১৬টি আয়াত নাজিল করেছেন। ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম পর্যায়ের ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনু উম্মু মাকতুম রা.। তিনি খাইরুল কুরুনীর (শ্রেষ্ঠ তিন যুগ- সাহাবা যুগ, তাবেয়ী যুগ, তাবে তাবেয়ীন যুগ ) প্রথম সারির সদস্য। তিনি প্রথমদিকে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তিনি কুরআনের হাফেজ ছিলেন একই সাথে বেলাল (রাদিঃ) সাথে সমন্বয়ে মসজিদে নববীর মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করতেন। এমনকি মাঝে মাঝে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের এর অনুপস্থিতিতে ইমামের দায়িত্বও পালন করেছেন। কোরআনের ৮০ তম সূরা আবাসার…