জনৈক ইসলামবিদ্বেষী পশ্চিমা মনোবিজ্ঞানী বলেন : ‘ধর্মের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা মানুষের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যকে ব্যাহত করে। এবং পাপ অনুভূতি তার জীবনকে বিস্বাদ করে রাখে। এই অনুভূতি বিশেষত ধার্মিক লোকদের বন্দী করে রাখে। তাদের কাছে মনে হয় যে, তারা যে পাপ করেছে, তা জীবনের আনন্দ থেকে বিরত থাকা ছাড়া ক্ষমা করা হবে না।’ আর কিছু লোক নিম্নলিখিত কথা বলে : ‘ইউরোপ যতদিন ধর্মকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিল, অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। অতঃপর যখন ধর্মের সেকেলে শৃঙ্খলাগুলি খুলে ফেলল, তখন ধর্মের বন্দিদশা থেকে তাদের অনুভূতিগুলো মুক্ত হলো এবং কাজ ও উৎপাদনের জগতে যাত্রা শুরু করল।’ তারা প্রশ্ন করে : ‘(ধর্মের দাওয়াত দেওয়ার মাধ্যমে) তোমরা কি…
Author: মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া
আবু লুবাবা রা. মদিনার বিখ্যাত আউস গোত্রের বনু আমর বিন আউফ শাখার সন্তান হজরত আবু লুবাবা রা.।তিনি আকাবার শেষ বাইয়াতে অংশগ্রহণ করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের ওপর ইমানের ঘোষণা দিয়ে নিজ গোত্রের নাকীব (দায়িত্বশীল) মনোনিত হন। বদর যুদ্ধের যাত্রাকালে প্রতিটি উটের ওপর তিনজন করে আরোহী ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের উটের ওপর আরোহনের সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন আবু লুবাবা ও আলি ইবনু আবি তালিব রা.। তবে পথিমধ্যে আবু লুবাবাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম নিজের অনুপস্থিতিতে মদিনার প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়ে যুদ্ধ থেকে ফেরত পাঠান। বদর যুদ্ধের সম্মুখ সমরে অংশ নিতে না পারায় তাঁর আফসোস হয়। নবিজি তাকে বদরে অংশগ্রহণকারী সাহাবি হিসেবে মর্যাদা দেন এবং…
রুমাইছা বিনতু মিলহান আল-আনসারিয়্যা রা. তার উপনাম উম্মু সুলাইম। এ নামেই তিনি প্রসিদ্ধ। অনেক গুণ ও বৈশিষ্ট্যের আধার ছিলেন তিনি। ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামী সাহাবিদের অন্যতম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম জান্নাতে তাঁর উপস্থিতির শব্দ শুনেছেন। আনাস ইবনু মালিক রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন, “স্বপ্নে আমি জান্নাতে প্রবেশ করি। হঠাৎ কারো নড়াচড়ার শব্দ শুনতে পাই। ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তারা বললেন, রুমাইছা বিনতে মিলহান, আনাস ইবনু মালিকের মা। (মুসলিম, হাদিসঃ ২৪৫৬, মুসনাদু আহমাদ, হাদিসঃ ১১৯৫৫;) মালিক ইবনু নজরের সঙ্গে উম্মু সুলাইমের বিয়ে হয়েছিল। সেই ঘরেই আনাস রা. জন্মগ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণ করায় ক্ষোভে স্বামী মালিক ইবনু নজর দেশত্যাগ করে…
মদিনার বিখ্যাত গোত্র আউসের সন্তান সাদ ইবনু মুয়াজ রা.। মুসআব ইবনু উমাইর রা. ইসলাম প্রচারক হিসেবে মদিনায় আসেন। নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে মদিনার প্রতিটি লোকের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেন। একদিন সাদ ইবনু মুয়াজও তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েন। মুসআব রা. তার সামনে ইসলামের বাস্তবতা তুলে ধরেন। কুরআনের কয়েকটি আয়াত তিলাওয়াত করে শুনান। তখন সাদ ইবনু মুয়াজ কালিমা পড়ে মুসলিম হয়ে যান। তার গোত্রে এই সংবাদ মূহুর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে। সাদ রা. ঘরে যান। তিনি তার সম্প্রদায়ের মধ্যে অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। তার প্রভাবে সন্ধ্যা হতে না হতেই পুরো গোত্র মুসলিম হয়ে যায়। মদিনার আকাশ-বাতাস তখন তাকবির ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। ইসলামের প্রচার প্রসারের…
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের অন্যতম প্রিয় সাহাবি মুসআব ইবনু উমাইর রা.। তিনি মুসআব আল খায়ের নামেও পরিচিত, ছিলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর একজন সাহাবা। কুরাইশ বংশের শাখা বনু আব্দুল দর গোত্রের লোক ছিলেন তিনি। ৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি ইসলামের প্রথম দূত ছিলেন। তিনি উহুদের প্রান্তরে ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে শহীদ হন। মুসআব বিন উমাইরের জন্মের প্রকৃত সাল জানা যায়নি। অনুমান করা হয় তিনি ৫৯৪ থেকে ৫৯৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬১৪ সালে তরুন বয়সেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি কুরাইশ বংশের বনু আব্দুর দার শাখায় জন্মগ্রহণ করেন। মুসআবের পিতা উমাইর ইবনে হাশিম এবং মাতা খুন্নাস বিনতে মালিক। তারা পিতামাতা বিত্তশালী ছিলেন। তরুন বয়সেই তিনি…
আবদুল্লাহ ইবনু উম্মু মাকতুম। শারীরিকভাবে দৃষ্টিশক্তিহীন জন্মান্ধ। কিন্তু এক অসাধারণ অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী। তিনি ছিলেন পবিত্র কুরআনের হাফিজ। তার সম্মানে মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ১৬টি আয়াত নাজিল করেছেন। ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম পর্যায়ের ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনু উম্মু মাকতুম রা.। তিনি খাইরুল কুরুনীর (শ্রেষ্ঠ তিন যুগ- সাহাবা যুগ, তাবেয়ী যুগ, তাবে তাবেয়ীন যুগ ) প্রথম সারির সদস্য। তিনি প্রথমদিকে ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তিনি কুরআনের হাফেজ ছিলেন একই সাথে বেলাল (রাদিঃ) সাথে সমন্বয়ে মসজিদে নববীর মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করতেন। এমনকি মাঝে মাঝে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের এর অনুপস্থিতিতে ইমামের দায়িত্বও পালন করেছেন। কোরআনের ৮০ তম সূরা আবাসার…
দ্বিতীয় হিজরির ১৭-ই রমজান। ঐতিহাসিক বদর প্রান্তরে একটি অসম যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। একদিকে তৎকালীন আরবের সবচেয়ে প্রতাপশালী সম্প্রদায় কুরাইশ। অন্য প্রান্তে অস্তিত্বের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া ক্ষুদ্র মুসলিম সম্প্রদায়। আল্লাহর সাহায্যে এগিয়ে যাচ্ছে মুসলিমরা। লড়াই করতে করতে শত্রু শিবিরে ঢুকে পড়েছে পাতলা ও লম্বা গড়নের এক মুসলিম যুবক। শত্রুমনে ত্রাস সৃষ্টি করে এক এক করে মুশরিকদের কচুকাটা করে চলেছেন তিনি। হঠাৎ তার গতির পরিবর্তন ঘটল। আক্রমণাত্মক কৌশল ত্যাগ করে রক্ষণাত্মক হলেন তিনি। একটু পর পর সামনে এগোতে গেলেই কেউ একজন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। মুসলিম যুবক তাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু লোকটি বারবার তার পথ আটকে দাঁড়াচ্ছে। সুযোগ পেয়ে কাফির লোকটি…
আবু জেহেল নামটি শুনলেই প্রতিটি মুমিন হৃদয়ে এক সমুদ্র ঘৃণার ঢেউ বয়ে যায়। শত কোটি টাকা দিলেও কেউ নিজ সন্তানের নাম আবু জেহেল রাখতে রাজি হবে না। সম্ভবত কোনো অমুসলিমও না। আবু জেহেল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত প্রাপ্তির সূচনা থেকে তার জীবনের অন্তিম নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রাণপণে ইসলামের বিরোধিতা করেছে। মুসলিমদের ওপর চালিয়েছে লোমহর্ষক নির্যাতন। কিন্তু সেই আবু জেহেলের ঘর থেকেই উন্মেষ ঘটে এক মুসলিম তরুণের। তার নাম ইকরামা ইবনু আবু জেহেল। মক্কার অধিকাংশ সম্ভ্রান্ত যুবক ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। ত্যাগ করে নিজেদের জাহিলিয়াতের আভিজাত্য। সেই যুবকদের একজন আবু জেহেলের পুত্র ইকরামা। তবে ইসলামের সূচনার দিকে ইকরামা ছিলেন পিতার…
সায়িদ ইবনু আমের রা. দুনিয়া বিরাগী এক বীর সাহাবি যিনি দুনিয়ার বিনিময়ে আখিরাত খরিদ করে নিয়েছেন। সবাই তার উপদেশ মেনে চলতেন। তিনি খায়বার বিজয়ের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন। হজরত উমর ফারুক রা.-এর খিলাফতের সময়ের কথা। একদিন তিনি সায়িদ ইবনু আমের রা.-কে বললেন, “আমি তোমাকে হিমসের গভর্নর নিযুক্ত করতে চাই।” সায়িদ রা. বললেন, হে উমর, তুমি আমাকে পরীক্ষায় ফেলো না। উমর রা. বললেন, এটা কেমন কথা? তোমরা আমার ওপর সকল দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা দূরে সরে যাবে? অতঃপর তাকে হিমসের গভর্নর নিযুক্ত করা হলো। হজরত উমর রা. হজরত সায়িদ ইবনু আমের রা.-কে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার ভাতা নির্ধারণ করে দিব কি?” তিনি…
আল্লাহ, তাঁর মনোনিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ও আখিরাতে সঠিকভাবে ঈমান আনার মাধ্যমে আল্লাহর সাথে যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, তা আল্লাহ তাআলা নিজেই আল কুরআনের সূরা নাস – এ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ মানুষের রব, বাদশাহ ও ইলাহ বা মাবুদ। কুরআনে আরও একটি সম্পর্কের কথা বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। সেটি আরো আবেগময়। আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে ঈমানদারদের ওয়ালী বা অভিভাবক। জীবন্ত নামায আল্লাহর সাথে এ চার রকম সম্পর্ক মযবুত করতে থাকে। মুমিনের রূহানী তরক্বীর জন্য নামাযই সবচেয়ে বেশি কার্যকর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম নামাযকে তার চোখের মণি বলেছেন। কখনো কোন পেরেশানীর কারণ ঘটলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি…
নামায ও নামাযের বাইরের জীবনে স্বাভাবিক কারণেই একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নামাজ যে মানের হয় সে মানেই বাইরের জীবনে এর প্রভাব পড়ে। যে নামাযকে শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান মনে করে তার জীবনে নামাযের কোন ইতিবাচক প্রভাব পড়ার কথা নয়। কিন্তু যে নামাযকে কালেমায়ে তাইয়েবার ওয়াদা অনুযায়ী চলার, মহান রবের হিদায়াতের পথে শত কষ্ট সত্ত্বেও টিকে থাকার ট্রেনিং হিসেবে গ্রহণ করে তার জীবনে নামাযের প্রভাব অবশ্যই পড়বে। নামায যে পরিমাণ জীবন্ত হবে, সে পরিমাণ ইতিবাচক প্রভাবই নামাযীর বাস্তব জীবনে পড়বে। সচেতন নামাযী সহজেই উপলব্ধি করতে পারবে যে, নামাযের প্রভাব তার জীবনে কতটুকু পড়ছে। নামাযের বাইরের জীবনের প্রভাবও নামাযের উপর পড়ে। বাস্তব…
কোনো কাজে মনোযোগ নষ্ট না হলেও নামাজে দাঁড়ালেই নামাজি ব্যক্তির মনোযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। এটি শয়তানের কাজ। নামাজের সময় হলে যেমন অন্য কাজের স্পৃহা বেড়ে যায়, তেমনি নামাজে বার বার মনোযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। এ থেকে বাঁচতে কিছু আমল করা যেতে পারে। তা হলো- ১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে নামায আদায় করেছেন ঠিক সেভাবেই নামায পড়তে হবে। ২. নামাঘে তিনি যে অবস্থায় যা পড়েছেন তা শুদ্ধ করে পড়া শিখতে হবে এবং তা ঠোঁট ও জিহবা নেড়ে উচ্চারণ করতে হবে। (মনে মনে পড়লে চলবে না)। ৩. কালেমার ওয়াদা অনুযায়ী চলার ট্রেনিং হিসেবে নামায আদায় করতে হবে। নামাযে দেহের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ…