বাঙালির ঐতিহ্য মাটির কলসির এক আধুনিক রূপ যেন মাটির ফিল্টার..!!

সুস্থ জীবনযাপনের জন্য নিরাপদ পানির বিকল্প নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির সরবরাহ থাকলেও বর্তমান সময়ে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ অনেক ক্ষেত্রেই থাকে না। সব জায়গায় টেপের পানির গুনমান সবসময় ঠিক থাকে না। তাই প্রয়োজন পড়ে পানি ফিল্টারিংয়ের বা বিশুদ্ধকরণের। 

বাজারে বিভিন্ন ধরণের পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার পাওয়া যায়।  আবার আমরা চাইলেও ঘরে বসে খুব কম খরচে তৈরি করতে পারি মাটির তৈরি পানি বিশুদ্ধিকরণ ফিল্টার।  যা দেখতে একদম আমাদের সেই ঐতিহ্যবাহী মাটির কলসির মতই। তাই বলা যায় যে,  সেই পুরোনো কলসিই যেন  ফিরে এসেছে  আধুনিক রূপে, মাটির ফিল্টার হিসেবে। মাটির ফিল্টারে পানি থাকে ঠান্ডা, বিশুদ্ধ ও স্বাদযুক্ত।  

আমেরিকান বই ” The Drinking Water Book” এর মতে, চিরাচরিত মাটি ও সিরামিকের তৈরি ফিল্টারই হল সবচেয়ে কার্যকরী ও উপকারী ফিল্টার। অনেক সময় একে ‘প্রাকৃতিক পানির জার’ ও বলা হয়ে থাকে। 

এখানে ফিল্ট্রেশন মূলত ঘটে থাকে মাটির কলসির ভিতর থাকা সিরামিক ক্যান্ডেল এর মধ্য  দিয়ে এবং  গ্র্যাভিটিকে কাজে লাগিয়ে। এই ক্যান্ডেলগুলো পওরাস বা ছোট ছোট ছিদ্রযুক্ত ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি যা সহজেই পানির মধ্যে থাকা ক্লোরাইড, আয়রন, কীটনাশক,  লিড, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদিকে ছেঁকে আটকিয়ে দেয় ফলে পরিষ্কার পানি টেপের দিকে যায়।  

এই ফিল্টারে পানি পরিষ্কার করার জন্য কোন আলাদা কোনো রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। তবুও পানির গুনাগুন শতভাগ বজায় থাকে। পানি সতেজ থাকে।  মাটির কলসিতে থাকার কারণে পানির টেম্পারেচার,  রুম টেম্পারেচারের থেকেও প্রায় ৫ ডিগ্রি কম থাকে।  এছাড়াও, এই পুরো সিস্টেমটি অত্যন্ত ইকোনোমিকাল, এখানে কোনো ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই লাগে না,  প্রাকৃতিক ভাবেই মাটির উপাদান পানিকে ঠান্ডা রাখে। আর সিরামিক ক্যান্ডেলগুলো বানাতে  খরচ কম হয়,  মর্ডান ফিল্টারের রিফিল এর চেয়ে। 

মাটির ফিল্টারে পানি রেখে তা পান করলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।  প্রথমত, মাটির তৈরি বলে এটি পরিবেশবান্ধব। অন্যান্য ফিল্টারের চেয়েও এখানে পানি বেশি ঠান্ডা থাকে। সহজেই ব্যাকটেরিয়া শোষণ করে মাটির ফিল্টার। আমরা জানি, কাদা-মাটি হয় খনিজ উপাদান ও  ইলেক্ট্রম্যাগনেটিক শক্তিতে সমৃদ্ধ।  তাই মাটির পাত্রের পানি রাখলে সেই পানি শরীরের  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। মাটির পাত্রের পানি পান করার ফলে শরীরের মেটাবলিজম ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায় কারণ মাটির পাত্রের পানির টেস্টরন ব্যালেন্স করার প্রচুর ক্ষমতা থাকে । 

একটি মাটির ফিল্টার প্রায় পাঁচ থেকে আট লিটার পর্যন্ত পানি ধারণ করতে পারে। অনেক দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায় মাটির ফিল্টার। বাংলাদেশে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে বাজারে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে এই ফিল্টার। এছাড়া অনলাইনেও এই ফিল্টারের বেচাকেনা হচ্ছে বেশি। মূলত তরুণ উদ্যোক্তারাই এই মাটির কলসির আধুনিক ও উন্নত ব্যবহারের জন্য তার মোডিফাইড রূপ ‘মাটির ফিল্টার’ এর পরিচিতি ও প্রচার বেশি ঘটিয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে।

মাটির ফিল্টারের মাধ্যমে যেমন কম খরচে পানি বিশুদ্ধিকরণ করা যাচ্ছে তেমনি দেশের মৃৎশিল্পেরও প্রসার ঘটছে। তাই বলা যায় যে,  মাটির ফিল্টার বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের ঐতিহ্যকেও মানুষের সামনে তুলে ধরছে। 

Leave a Comment