বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের চাষ এবং এর ভবিষ্যৎ

ভিনদেশী এক  ফলের নাম হলো ড্রাগন।  ড্রাগন ফলের এই বাংলায় আগমন ঘটেছিল ২০০৭ সালের দিকে।  তখনই প্রথম থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে এ ফলের বিভিন্ন জাত আনা হয় এবং ক্রমান্বয়ে এই ফলের জনপ্রিয়তা এই দেশে বাড়তেই থাকে। 

ড্রাগন ফলের নেটিভ দেশ হলো মেক্সিকো।  প্রচুর পরিমাণে ড্রাগন ফলের বাণিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে এই দেশে। সেন্ট্রাল আমেরিকা, সাউথ আমেরিকা থেকে ড্রাগন ফলের অরিজিন হয়েছে বলে জানা যায়। । ১৯ শতকের দিকে ফ্রেঞ্চরা সাউথইস্ট এশিয়া তে এই ফল প্রথম নিয়ে আসে।  বর্তমানে  সবচেয়ে বেশি ভিয়েতনামে ড্রাগন ফলের চাষ হয়। 

এশিয়ার অন্যান্য  দেশগুলোর মত তাই এখন বাংলাদেশেও এই ফলের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উষ্ণ আবহাওয়া ড্রাগন ফল চাষের জন্য উপযোগী।  তাই বাংলাদেশ গ্রীষ্ম প্রধান দেশ হওয়ার এখানে ড্রাগন ফল চাষের একদম অনুকূল ও উপযোগী পরিবেশ বিরাজমান।  এমনকি এদেশের মাটিও এই ফল ফলানোর জন্য শতভাগ উপযোগী বলে গবেষকরা উল্লেখ করেছেন। 

২০১০ সালের দিকে সাভারের আশুলিয়া গ্রামে রূপা চক্রবর্তী নামে একজন ভদ্রমহিলা সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করেন।  তারপর ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন এলাকাতে এই ফলের পরিচিতি বাড়ে। প্রথম দিকে বাণিজ্যিক চাষ কম হলেও বর্তমানে বিপুল পরিমাণে তা বৃদ্ধি পেয়েছে।  রাজশাহীর চাপাইনবাবগঞ্জ,  ঢাকার নরসিংদী,  খুলনার যশোর এই জায়গা গুলোতে এখন হেক্টরের পর হেক্টর এরিয়া জুড়ে ড্রাগন ড্রাগন ফলের বাগান দৃশ্যমান।  ২০১৪-১৫ সালে মূলত এত বেশি  প্রসার ঘটে এই ফল চাষের এবং তা এখন কয়েক গুণ বেশি ক্রমবর্ধমান।  এমনকি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর,  পঞ্চগড়, নীলফামারী এই জেলাগুলোতেও ড্রাগন ফল চাষ হচ্ছে স্থানীয় ভাবে এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে। 

এখনকার কৃষকদের মধ্যে প্রচলিত কৃষি থেকে সরে এসে অপ্রচলিত ও উচ্চমূল্যের ফল, ফসল উৎপাদনের মনোভাব বেশি দেখা যায়। এই মনোভাবের পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো এদেশের কৃষি খাতে তরুণ উদ্যোক্তা আগ্রহ ও অংশগ্রহণ।  ড্রাগন ফলের মত একটি ভিনদেশী ফলের এই দেশের মাটিতে  এত বিপুল পরিমাণে লাগানোর পিছনে এই শিক্ষিত তরুণ এবং কৃষক দের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি এবং অন্যতম। বলা বাহুল্য যে, কৃষির সামগ্রিক পরিবর্তন ও সাফল্য এজন্যই সম্ভব হচ্ছে। 

ড্রাগন ফল উৎপাদন ও বাজারজাত করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। কারণ এই ফল উৎপাদন প্রক্রিয়াতে নেই কোনো জটিলতা। এমনকি বাড়ির আঙিনায় করা বাগানে,  ছাদবাগানেও এই গাছ লাগাতে পারে মানুষ। আর ড্রাগন ফলের গাছ একবার রোপন করলে তা ফল দেয় কমপক্ষে ২০-২৫ বছর।  আবার এই ফল গাছে পাকা অবস্থাতেও ৫-৭ দিন অনায়াসে রেখে দেয়া যায়। হারভেস্ট এরপর রাখা যায় ৮-১০ দিন। তাই এই ফল উৎপাদনে ‘ হারভেস্ট লস’ খুবই কম হয়।  

বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের উৎপাদনের উজ্জল ভবিষ্যৎ রয়েছে বলে কৃষিবিদ ও গবেষকরা উল্লেখ করেছেন। এই ফল ইতোমধ্যেই একটি লাভজনক ফসলে পরিণত হয়েছে। দেশের প্রায় ২৫ হাজারের মত কৃষক ড্রাগন ফল কাল্টিভেশনের সাথে যুক্ত। বিশেষ করে শিক্ষিত  তরুণদের আগ্রহ অনেক বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে এই কালটিভেশনে।  এগ্রিকালচার মিনিস্ট্রির জরিপ অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৯৯% ড্রাগন ফল উৎপাদক কৃষক হলেন শিক্ষিত এবং তারমধ্যে ৮০% ই হলেন তরুণ। 

দেশের মধ্যে উৎপাদিত ড্রাগন ফলের চাহিদা,  বিদেশ থেকে ইম্পোর্টেটগুলোর চেয়ে অনেক বেশি বলে জানা যায়।  তাই ড্রাগন ফল উৎপাদন দিনকে দিন আরো বাড়ছে।এগ্রিকালচার মিনিস্ট্রি মতে, দেশের প্রায় ৩০০ হেক্টর জমি সরকারকতৃক ডেডিকেটেড করা হয়েছে   ড্রাগন ফল উৎপাদনের জন্য।  বর্তমানে এই জমির আয়তন বেড়ে হয়েছে ৫০০ হেক্টর যেখান থেকে প্রায় ৫৪০০ টন ড্রাগন ফল উৎপাদন করা সম্ভব। 

সুস্বাদু ও মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন ফল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।  এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, ভিটামিন সি, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস্।  

স্বাস্থ্যের উপকারিতা,, বাজারমূল্য,  সহজ প্রডাকশন টেকনোলজি, দীর্ঘমেয়াদি ইনকাম সোর্স, এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ এসব বিষয় বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, ড্রাগন ফল উৎপাদন    খুব বড় পরিসরে    বাংলাদেশের ‘ফ্রুটস  প্রডাকশন সিস্টেমে ‘ সহযোগিতা করতে সক্ষম।  গ্লোবাল মার্কেটে ড্রাগন ফলের চাহিদা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই   বাংলাদেশও একদিন  যাতে দেশের অভ্যন্তরীন ড্রাগন ফলের চাহিদা মিটিয়ে যেন গ্লোবালি এক্সপোর্ট করতে সক্ষম হয় সেই আশাই ব্যক্ত করি আমরা। 

Reporter: Marzia Mustari Progga

Leave a Comment