চট্টগ্রামে ‘ক্রসফায়ারের’ ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ঃ নুরুল হক

চট্টগ্রাম নগরের জে এম সেন হল পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের নেতাদের পুলিশ নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন নুরুল হক নুর। তাঁর দাবি, এ ঘটনা স্বীকার না করলে চোখে কালো কাপড় বেঁধে ক্রসফায়ারেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেকের পরিবারের কাছে পুলিশ এক লাখ টাকা চেয়েছে। টাকা না দিতে পারায় মামলায় জড়িয়ে জোরপূর্বক একজনের কাছ থেকে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।

আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে স্পষ্ট ভাষায় বলে আসছি, এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, একটা নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। বিচারবিভাগীয় তদন্ত করা হোক। পুলিশ বলেছে, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তাঁদের (ছাত্র ও যুব অধিকারের নেতা) গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু সেই ফুটেজ পুলিশ গণমাধ্যমের কাছে উপস্থাপন করুক। তারা কিন্তু সেটি করছে না। বরং তারা হুমকি দিচ্ছে, আমরা যেন এটি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করি।’

চট্টগ্রামের জে এম সেন হল পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় ছাত্র অধিকার পরিষদের চট্টগ্রাম কমিটির সাবেক আহ্বায়ক হাবিবুল্লাহ মিজান রোববার চট্টগ্রামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে তিনি ১৫ অক্টোবরের ওই হামলার দুদিন আগে এ বিষয়ে পরিকল্পনা করার কথা বলেছেন বলে আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

পূজামণ্ডপে হামলার মামলায় গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছাত্র–যুব অধিকার পরিষদের ৯ নেতা–কর্মীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা-পুলিশ বলছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী মণ্ডপে হামলার দিন মুসল্লিদের জড়ো করেন যুব অধিকার পরিষদের নেতারা।

পুলিশের তদন্তে জনগণের আস্থা নেই বলে মন্তব্য করেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক। সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান তিনি।

নুরুল হকের অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দিন বলেন, মিছিলে অংশ নেয়ার ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জোর করে কারও কাছ থেকে পুলিশ জবানবন্দি নেয়নি। পুলিশ কারও কাছে টাকা চায়নি। ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকির অভিযোগ ভিত্তিহীন।

সংবাদ সম্মেলনে নুরুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা কর্তৃত্ববাদী শাসনের মধ্যে ভিন্নমত ও বিরোধী রাজনীতিকেরা দমন–পীড়নের মধ্যে আছেন। সেই সময় আমরা তারুণ্যের নেতৃত্বে একটা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছি। সেই দল গঠন করার কথা ছিল গত মার্চে। কিন্তু আমরা পুলিশের দমন–পীড়ন, হামলা–মামলার কারণে তা পারিনি।

মোদিবিরোধী আন্দোলনের সময় আমাদের ৬২ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ভুক্তভোগী শাকিলুজ্জামান আছেন, মোল্লা বিন ইয়ামিন আছেন, তাদের ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল। তারা যেন রাজনীতি না করেন, সেই অঙ্গীকার চাওয়া হয়েছিল।’

২৬ অক্টোবর নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করার কথা জানিয়ে নুরুল হক বলেন, ‘২০ অক্টোবর আমাদের রাজনৈতিক দল ঘোষণার কথা ছিল। আমরা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট ভাড়া নেওয়ার জন্য আবেদনও করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ নিষেধ করায় আমরা তখন মিলনায়তনটি পাইনি। আগামী ২৬ অক্টোবর দল ঘোষণার তারিখ ঠিক করেছি। পুলিশের কাছে মিলনায়তন ভাড়া চেয়ে লিখিত আবেদন করেছি। এখন পর্যন্ত পুলিশ আমাদের কোনো কিছু জানায়নি। অনুমতি না পেলেও সেদিন নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র ও যুব অধিকার পরিষদের মুহাম্মদ রাশেদ খান, শাকিলুজ্জামান, ঝুনু রঞ্জন দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Comment