আমের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

আমের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা, আমকে বলা হয় ফলের রাজা। আমের মতো সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয় এত পছন্দনীয় ফল পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। এমন কোন জাতি নেই যারা আম পছন্দ করেনা। তাই একে সম্মান দিয়ে ফলের রাজাʼ বলা হয়। বাঙ্গালিও আম খেতে খুব পছন্দ করে। কিন্তু সুস্বাদু স্বাদের পাশাপাশি আমের অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও আছে। আসুন জেনে নিই আমের কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা:

আমের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

আমে ভিটামিন এ, সি, ই এবং কে এর পাশাপাশি ভিটামিন বি-এর মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ রয়েছে। এগুলোতে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং কপারের মতো খনিজ রয়েছে। 

আমে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট আছে। আমের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা, ফোলেট কোষ বিভাজন এবং ডিএনএ প্রতিলিপনের কাজে ব্যবহৃত হয়। চিকিত্সকরা গর্ভবতী হতে পারেন এমন নারীদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০মাইক্রোগ্রাম ফোলেট খেতে বলেন। শিশুর জন্মগত ত্রুটি এড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ফোলেট গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আমে যেসব পুষ্টি রয়েছে

ভিটামিন এ

ভিটামিন সি

ভিটামিন কে

পটাসিয়াম

বিটা-ক্যারোটিন

ফোলেট

কোলিন

ম্যাগনেসিয়াম

একটি মাঝারি আকারের আমে রয়েছে

ক্যালোরি: ২০২গ্রাম

প্রোটিন: ৩ গ্রাম

চর্বি: ১ গ্রাম

কার্বোহাইড্রেট: ৫০গ্রাম

ফাইবার: ৫গ্রাম

চিনি: ৪৫গ্রাম

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি

আম অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এসবের মধ্যে রয়েছে ম্যাঙ্গিফেরিন, কোয়ারসেটিন এবং বিটা-ক্যারোটিনের মতো যৌগ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিক্যালগুলোকে নাকচ করে দেয়। আমের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা, এর দ্বারা অ্যান্টিঅএক্সিডেন্টগুলো দেহের কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে এবং হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশনসহ বিভিন্ন গুরুতর রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। আমে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বজিয়ে রাখবে। ডায়েটে আম অন্তর্ভুক্ত করার দ্বারা আপনিও একটি স্বাস্থ্যকর ও প্রাণবন্ত জীবনযাপন করতে পারবেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

আম খাওয়ার একটি বাড়তি সুবিধা হচ্ছে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে। আমের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা, আমে থাকা উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি কমায়।

ভিটামিন সি শ্বেত রক্তকণিকা সহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধক কোষের উৎপাদন এবং কার্যকলাপ বৃদ্ধি করার ক্ষমতা রাখে। এটি শরীরকে ক্ষতিকারক রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করেএটি অ্যান্টিবডি, প্রোটিন উৎপাদনকে বৃদ্ধি করে। ফলে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের মতো দেহের বাইরে থেকে আসা ফরেন পার্টিকেলকে সনাক্ত ও নিরপেক্ষ করতে সহায়তা করে।

আমের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার দ্বারা আম ইনফেকশনের ঝুঁকি কমায় এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে দেহকে সক্ষমতা জোগায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি গ্রহণ করলে শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের তীব্রতা এবং অসুস্থতাকাল কমে যায়। শাসযন্ত্রের রোগের একটি উদাহরণ হচ্ছে সাধারণ সর্দি। 

পাকস্থলির সুস্বাস্থ্য রক্ষা করে

আমে রয়েছে ডায়েটারি ফাইবার, যা হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে। আমে উপস্থিত আছে অ্যামাইলেজ ও প্রোটিয়েজের মতো যেগুলোকে প্রোটিনকে ভাংতে এবং সামগ্রিক হজমশক্তির উন্নতিতে সহায়তা করে।

পাকস্থলিতে অ্যামাইলেজ নামক একটি পাচক এনজাইম রয়েছে। আমের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা, পাচক এনজাইমগুলো বড় বড় খাদ্যকণাকে ভেঙ্গে ফেলে যেন দেহ সেগুলো সহজে শোষণ করতে পারে। 

অ্যামাইলেজ গ্লুকোজ ও ম্যাল্টোজের মতো জটিল কার্বোহাইড্রেটকে সুগারে ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করে। সুগার হচ্ছে সরল কার্বোহাইড্রেট। এসব এনজাইমগুলো পাকা আমে অনেক সক্রিয়। এ জন্য কাঁচা আমের চেয়ে পাকা আম বেশী মিষ্টি।

এ ছাড়া, আমে প্রচুর পরিমাণে পানি ও ডায়েটারি ফাইবার থাকায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়ার মতো হজম সংক্রান্ত সমস্যা নিরসনে সাহায্য করতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে চার সপ্তাহব্যাপী একটি গবেষণা চালানো হয় যেখানে দেখা যায় যে, দ্রবণীয় ফাইবার খাওয়ার চেয়ে একই পরিমাণ আমের ফাইবার খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ উপশমে বেশী কার্যকরী।

চোখের উপকারিতা 

আমে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে, যা থেকে শরীর ভিটামিন এ উৎপাদন করে। দৃষ্টিশক্তি অটুট রাখতে, রাতকানা প্রতিরোধ করতে এবং বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশনের ঝুঁকি কমাতে ভিটামিন এ অপরিহার্য।

আমে যেসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায় সেগুলো চোখের সূক্ষ্ম গঠনকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। ফ্রি র‌্যাডিক্যাল কোষের ক্ষতি করতে পারে।আমের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা,  চোখের বিভিন্ন রোগ যেমন চোখের ছানি এবং গ্লুকোমার বিকাশে অবদান রাখতে পারে। এই ফ্রি র‌্যাডিক্যালগুলো নিরপেক্ষ করার দ্বারা আম চোখের টিস্যুগুলির স্বাস্থ্য এবং দৃঢ়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

আমের মধ্যে রয়েছে লুটেইন এবং জিক্সানথিন। এই দুটি ক্যারোটিনয়েড ম্যাকুলায় জমা হয়। ম্যাকুলা রেটিনার কেন্দ্রে অবস্থিত একটি অঞ্চল। এটি দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ণ রাখে।আমের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা,  লুটেইন এবং জিক্সানথিন প্রাকৃতিক ফিল্টার হিসাবে কাজ করে, ক্ষতিকারক ব্লু লাইট শোষণ করে এবং সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে ম্যাকুলাকে রক্ষা করে। ক্যারোটিনয়েডগুলো বয়স-সম্পর্কিত দৃষ্টিশক্তি হ্রাস এবং ছানি তৈরির ঝুঁকির সাথে সম্পর্কিত।

ত্বকের স্বাস্থ্য

আমে থাকা ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে সুন্দর রাখে। এগুলো কোলাজেন উৎপাদনে অবদান রাখে। কোলাজেন হল একটি প্রোটিন যা ত্বককে দৃঢ় এবং স্থিতিস্থাপক রাখে।আমের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা,  একই সাথে অতিবেগুণী রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।

হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে

আমে অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

যেমন, আমে ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম রয়েছে। আম স্বাস্থ্যকর রক্ত ​​প্রবাহ বজায় রাখতে সহায়তা করে। এই পুষ্টিগুলো আপনার রক্তনালীগুলোকে শিথিল রাখবে, রক্তচাপের মাত্রা নিচু থাকবে। 

আমের সুপার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ম্যাঙ্গিফেরিন আছে। আমের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা, এটাকেও হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল বলে মনে করা হয়। 

প্রাণীদের ওপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে যে, ম্যাঙ্গিফেরিন প্রদাহ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং কোষের মৃত্যুর বিরুদ্ধে হৃদকোষকে রক্ষা করতে পারে।

উপরন্তু, এটি আপনার রক্তের কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড এবং ফ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

ওয়েট ম্যানেজমেন্ট

আমে ক্যালোরি তুলনামূলকভাবে কম হলেও ফাইবার বেশি। ফলে নাস্তা হিসেবে আম চমৎকার।আমের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা,  সুষম খাদ্যের তালিকায় আমকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

By মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া

My name is Mahazabin Sharmin Priya, and I am an author who studied Mathematics at the National University. I have a deep passion for writing in various genres, including Islam, technology, and mathematics. With my knowledge and expertise, I strive to provide insightful and engaging content to readers in these areas.

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *