বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মোরশেদুল বারী। তিনি ধর্ষণ মামলার আসামি। তিনি ওই ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন এক কলেজছাত্রী। তদন্ত করে ধর্ষণের সত্যতা পেয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিল পুলিশ।
স্থানীয় ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় একটি কলেজের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ছাত্রীর সঙ্গে মুঠোফোনে মোরশেদুল বারীর পরিচয় হয়। এই সূত্র ধরে মোরশেদুল ওই ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কলেজছাত্রী বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট শাজাহানপুর থানায় নারী নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বগুড়া শহরের সাতমাথায় নানা সংগঠন মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। ওই বছরের ২২ অক্টোবর তিনি ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের মাস তিনেক যেতে না যেতেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ওই ছাত্রীকে মারধর এবং আপসনামায় সই নেন বলে ছাত্রী অভিযোগ করেছিলেন। সেই আপসনামার ভিত্তিতে ওই বছরের ২৮ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এরপর মোরশেদুল বারী মেয়েটিকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
আদালত সূত্র জানায়, চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ছাত্রী নারাজি দিলে আদালত তা আমলে নিয়ে পুনঃ–তদন্তের নির্দেশ দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক নুর মোহাম্মদ ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি চেয়ারম্যান মোরশেদুল বারীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মোরশেদুল কলেজছাত্রীকে বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায় মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখান এবং মারধর করেন। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন এসে তাঁকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। এ ঘটনার কয়েক দিন পর কলেজছাত্রী ইউপি চেয়ারম্যান মোরশেদুল বারীর বিরুদ্ধে বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৬ মার্চ মোরশেদুল বারীর বিরুদ্ধে নন্দীগ্রাম থানায় দুই লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলা করেছিলেন উপজেলার কুমিড়া পণ্ডিতপুকুর এলাকার হাসান মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি। মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে হত্যার হুমকির অভিযোগ আনা হয়েছিল। মামলার তদন্ত শেষে ওই বছরের ২৬ নভেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বেনজীর আহমেদকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে তাঁর মা বেলি বেওয়া ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ নন্দীগ্রাম থানায় মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।
নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল আশরাফ বলেন, আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে চেয়ারম্যান মোরশেদুল বারীর নানান অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার বিষয় উল্লেখ করে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য স্থানীয় নেতাদের একাংশ কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। তবে তা আমলে না নিয়ে তাঁকেই নৌকার প্রার্থী করা হয়েছে।অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোরশেদুল বারী বলেন, ‘ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাঁকে ধর্ষণের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁকে মারধর, নির্যাতন কিংবা ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগও সঠিক নয়। এই মামলা আদালতের মাধ্যমে আপস হয়েছে। অন্য অভিযোগেরও ভিত্তি নেই।’