ওপারে বাংলাদেশের ছবির খবর কী

স্টার সিনেপ্লেক্সের চারটি শাখায় চারটি মিলনায়তনে চলছে ভারতীয় ছবি গোলন্দাজ। সাফটা চুক্তির আওতায় গত শুক্রবার শো মোশন লিমিটেডের ব্যানারে বাংলাদেশে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। বিপরীতে ভারতের ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের কাছে এ দেশ থেকে রপ্তানি করা হয়েছে প্রেমিক ছেলে। একই নিয়মে গত অক্টোবরে তিতাস কথাচিত্র রাত্রির যাত্রী ছবিটি রপ্তানির বিপরীতে কলকাতা থেকে বাজি ছবিটি এনে দেশের প্রায় ৪০টি হলে মুক্তি দিয়েছে। অথচ রাত্রির যাত্রী ছবিটি কলকাতার কটি হলে মুক্তি পেল, তার কোনো তথ্য নেই তিতাস কথাচিত্রের কাছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আবুল কালাম বলেন, ‘রাত্রির যাত্রী কলকাতায় বিক্রি করে দিয়েছি। কোথায় চলল, না চলল, তার খবর আমার রাখার কথা নয়। তা ছাড়া আমি যে ছবি এখানে এনেছি, সেটি কটি হলে চলল, তা–ও তাদের দেখার নেই। আমরা বিনিময় নীতিমালা মেনে ছবিগুলো আদান–প্রদান করছি কি না, সেটাই দেখার বিষয়।’চলচ্চিত্র বিনিময় চুক্তিতে এভাবে গত ১০ বছরে ভারতের কলকাতায় অর্ধশতাধিক বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্র রপ্তানি করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজা বাবু, ছুঁয়ে দিলে মন, তুমি আমার মনের মানুষ, প্রাণের মানুষ, অনন্ত ভালোবাসা, সম্রাট, আমি তোমার হতে চাই, রাজা ৪২০, মাস্তানি, প্রেম চোর, বিয়ে বাড়ি প্রভৃতি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ছবিগুলো কলকাতায় তিন থেকে সাতটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ছবি প্রেক্ষাগৃহেই ওঠেনি। অন্যদিকে ভারতীয় বাংলা ছবিগুলো এখানে এনে বিভিন্ন সময় ৭০ থেকে ১০০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।


বিনিময় চুক্তিতে বাংলাদেশের ছবি কলকাতায় মুক্তির বিষয়টির কোনো খোঁজখবরই রাখেন না এখানকার আমদানি–রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। তাঁরা আমদানির বিপরীতে যেকোনো একটি সিনেমা রপ্তানি করেই সব কাজ শেষ মনে করেন। ভারতে রপ্তানি করা ছবিগুলো সেখানকার প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বরাবরই অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে রপ্তানির বিপরীতে আমদানি করা ভারতীয় বাংলা ছবিগুলো বাংলাদেশে পাচ্ছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব। ২০১৯ সালের জুন মাসে কলকাতার এসকে মুভিজ বাংলাদেশে ভোকাট্টা ছবিটি রপ্তানি করে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে প্রেম চোর। বাংলাদেশে ভোকাট্টা অর্ধশতাধিক হলে মুক্তি পেলেও কলকাতায় প্রেম চোর ছবিটি মুক্তি পায় মাত্র তিনটি হলে। এ ব্যাপারে এসকে মুভিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অশোক ধানুকা বলেন, ‘তিনটি হল থেকেই লোকসান গুনতে হয়েছে।’ তাঁর কথা, বাংলাদেশি শিল্পীদের সঙ্গে এখানকার দর্শকের পরিচিতি কম। এ কারণে বাংলাদেশি সিনেমার প্রতি এখানে তেমন আগ্রহ নেই।আমদানির বিপরীতে বাংলাদেশের অনেকগুলো ছবি ভারতে রপ্তানি করেছে ইন উইন এন্টারপ্রাইজ। ২০১৯ সালে সর্বশেষ প্রতিষ্ঠানটি ভারত থেকে বচ্চন ছবিটি এনে সেখানে পাঠায় বাংলাদেশের পলকে পলকে তোমাকে চাই। সেখানে মাত্র চারটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এই ছবি

। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ জানান, বাংলাদেশের ছবিগুলো তাঁরা নামমাত্র কেনেন। সুতরাং তাঁদের প্রদর্শনীর প্রতি আগ্রহ কম থাকে। তা ছাড়া পুরোনো ছবি দেখবেই–বা কে। তাহলে নতুন ছবি, ভালো মানের ছবি সেখানে রপ্তানি করেন না কেন? জানতে চাইলে এই প্রযোজক বলেন, নতুন ছবি তো তাঁরা বেশি দামে কিনবেন না। বাংলাদেশের ছবির প্রতি তাঁদের খুব একটা আগ্রহ নেই। তবে বাংলাদেশের সব ছবির মানই যে খারাপ, তা–ও কিন্তু নয়। কলকাতায় বাংলাদেশি ছবির অবহেলার বিষয়ে প্রযোজক সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা নিয়মিতই কলকাতার চ্যানেলে তাঁদের বিনোদন অঙ্গনের সবকিছু দেখছি। কিন্তু বাংলাদেশি কোনো চ্যানেল কলকাতায় দেখার সুযোগ নেই। ফলে আমাদের শিল্পীরা সেখানে অনেকটাই অপরিচিত। ফলে এসব শিল্পীর সিনেমায় আগ্রহ কম সেখানকার দর্শকদের। আগে আমাদের শিল্পীদের তাঁদের চেনাতে হবে। এ জন্য বেশি বেশি যৌথ প্রযোজনার ছবি তৈরি করা একটা উপায় হতে পারে।’

কলকাতায় বাংলাদেশি ছবির অবহেলার বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন চলচ্চিত্র পরিচালক ও আলোচক মতিন রহমান। বাংলাদেশ থেকে যাঁরা সাফটা চুক্তির মাধ্যমে ছবির আদান–প্রদান করছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুললেন মতিন রহমান। তিনি বলেন, ‘যাঁরা এই কাজের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের মূল উদ্দেশ্য কী, তা পরিষ্কার করতে হবে আগে। আমার মনে হয়, তাঁদের উদ্দেশ্য ভারতীয় বড় বাজেট, বড় শিল্পীদের ছবি এখানে এনে ব্যবসা করা, লাভবান হওয়া। এখানকার ছবিগুলো নিয়ে তাঁদের মাথাব্যথা নেই, আগ্রহ নেই। তাঁরা এখানে ভারতীয় সিনেমা, প্রযোজকদের স্বার্থ দেখছেন।’এই পরিচালকের কথা, সাফটা চুক্তির মূল মর্ম হলো সংস্কৃতির বিনিময়, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের ছবির স্বার্থ রক্ষা হবে, বাজার বাড়বে, শিল্পীদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত তৈরি হবে। ফ্লপ বা নকল ছবি না পাঠিয়ে ভালো মানের ছবি পাঠিয়ে বাংলাদেশের সিনেমার বাজার তৈরি করবে। কিন্তু তার উল্টোটা হচ্ছে এখানে। এই কাজ যাঁরা করছেন, তাঁদের মনমানসিকতার পরিবর্তন দরকার।

Leave a Comment