দাবি না মানলে কাল থেকে আবার আন্দোলন

বাসের চাপায় ২০১৮ সালে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে ১১ দিন রাজধানীর রাজপথ ছিল শিক্ষার্থীদের দখলে। তাদের দাবি ছিল একটাই—নিরাপদ সড়ক। সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়। কিন্তু তিন বছর পরে আবার একই দাবিতে রাজপথে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন শিক্ষকরাও।তবে এবারের দাবি আদায়ে এখন পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের উদ্যোগ নেওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে শিক্ষার্থীরা। আজ শনিবারের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি না এলে আগামীকাল রবিবার থেকে আবার আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।


২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই বাসের দ্রুতগতিতে ছোটার প্রতিযোগিতায় চাপা পড়ে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাজীব ও দিয়া নিহত হয়। প্রায় তিন বছর পর গত বুধবার ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যু হয়। এতে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ শেষে গত বৃহস্পতিবার ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে রাজপথ ছেড়েছে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা।নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রধানত ছয় দাবিতে আন্দোলন করছে। সেগুলো হচ্ছে সবার জন্য নিরাপদ সড়ক, ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পর পাস হওয়া আইন বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া, নাঈমের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করা, নাঈমের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, গুলিস্তানের মতো ব্যস্ততম সড়কে পদচারী সেতু স্থাপন করা এবং সব ধরনের ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা।


২০১৮ সালেও শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল ৯টি। সেগুলো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া, ফুটপাত-ফুট ওভারব্রিজ স্থাপন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সবার ক্ষতিপূরণ, পরিকল্পিত বাস স্টপেজ নির্মাণ, দুর্ঘটনার বিচারকাজ দ্রুত করা, চালকদের প্রশিক্ষণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন, বিকল্প সড়ক ব্যবস্থা ও সাইকেল লেন করা এবং ট্রাফিক আইন পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা।
নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শনিবারের মধ্যে কোনো জবাব না পেলে রবিবার আমরা ফের আন্দোলনে নামব। নাঈমকে যেহেতু সিটি করপোরেশনের গাড়ি চাপা দিয়েছে, সে জন্য আমরা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সামনে আন্দোলন করছি। সরকারের আরো নানা সংস্থার কাছেও আমাদের দাবি রয়েছে। তবে মেয়র আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দাবিগুলো পৌঁছে দেবেন। সেটা যদি না হয়, তাহলে ঢাকার অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে দাবি আদায়ে আরো বড় পরিসরে আমরা মাঠে নামব।’

নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তাদের সঙ্গে রয়েছেন ওই কলেজের শিক্ষক তিতাস ভিনসেন্ট রোজারিও। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নাঈমের প্রতি আবেগ-ভালোবাসার জায়গা থেকেই আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্ম হয়েছি। আমরা চেয়েছি, সরকারের উচ্চ মহলে আমাদের বার্তা পৌঁছে দিতে। আশা করছি, তা আমরা পেরেছি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের যে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, তা যেন দৃশ্যমান হয়। সবাই যেন নিয়ম-কানুন মেনে চলে পদার্থবিজ্ঞানের এই শিক্ষক আরো বলেন, ‘আমরা মানুষের দুর্ভোগ বাড়াতে চাই না। আমরা নগরীর স্থবিরতা চাই না। আমরা চাই ছাত্ররা ক্লাসে ফিরে আসুক, তারা পড়ালেখা করুক। এ জন্য নিরাপদ সড়কের যে দাবি ছাত্ররা তুলেছে, তা সরকারকেই বাস্তবায়ন করতে হবে।’


গত বৃহস্পতিবার নগর ভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের সমাবেশে এসে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, ‘আপনারা যে দাবি দিয়েছেন, সেই দাবির সঙ্গে আমি একমত। আমি দাবি করি, সেই খুনির যেন ফাঁসি হয়। এই শহরের সড়কে আর যেন কোনো নাঈমের প্রাণহানি না ঘটে।’ তাপস বলেন, ‘আপনাদের দাবি সরকারের কাছ থেকে আদায়ের ব্যবস্থা করব। ঢাকা নিরাপদ শহর হবে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল। নিরাপদ সড়ক করতে আপনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব।’ এ ছাড়া তিনি দুর্ঘটনাস্থলে এ বছরের মধ্যেই নাঈমের নামে ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন।

Leave a Comment