কল্যাণ কামনায় পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন,ব্যর্থতার গ্লানি ঝেড়ে ফেলে জাতি তার সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব পয়লা বৈশাখ উদযাপন করছে নতুন বছরে সমৃদ্ধির শুভেচ্ছায়। প্রতিবারের মতো এবারও উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয় দিনের শুরু থেকেই। রাজধানীর রমনা উদ্যান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাহবাগ চত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, টিএসসি, বাংলা একাডেমি এলাকা ছিল উৎসবের মূল কেন্দ্র।
কল্যাণ কামনায় পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন
কল্যাণ কামনায় পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন, প্রতি বছরের মতো এবারও ছায়ানটের আয়োজনে রমনা বটমূলে সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান। এবারের অনুষ্ঠানের থিম ছিল ‘ধর নির্ভয় গান’। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে গান ও আবৃত্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি।
রমনা উদ্যানের পশ্চিমে শিশুপার্কের নারকেল বিড়ি চত্বরে ‘নব আনন্দে জাগো’ স্লোগানে লোকসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরের প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ‘ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী’। এটি ছিল তাদের 40তম ইভেন্ট। সকাল সাড়ে ৭টায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা, সংগঠনের সভাপতি সুরাইয়া আলমগীর, সহ-সভাপতি শিল্পী ফকির সিরাজ ও সাধারণ সম্পাদক শিল্পী সমর বড়ুয়া বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। পরে ঋষিজির শিল্পীরা ‘এসো হে বৈশাখ’, ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’, ‘নোঙ্গার ছেইয়া নায়ার দে রে মাঝি ভাই’সহ বিভিন্ন গান গেয়েছেন। একক গান গেয়েছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রফিকুল আলম, আবু বকর সিদ্দিক, ফকির শাহাবুদ্দিন, অনিমা মুক্তি গোমেজ, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, ফকির সিরাজসহ অনেকে। ‘ফোক ব্রাসার্স’ নামে একটি লোকসংগীত দলও অনুষ্ঠানে অংশ নেয় এবং সঙ্গীত পরিবেশন করে।
মঙ্গল শোভাযাত্রা
মঙ্গল শোভাযাত্রা, পয়লা বৈশাখের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান হল চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা যা বের হয় রাত নয়টার পর। দেশের প্রাণী সম্পদ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশের বিলুপ্ত ও বিপন্ন প্রাণীদের নিয়ে শোভাযাত্রার মূল ভাস্কর্য তৈরি করা হয়। এতে ছিল বিশাল নীলগাই, ময়ূর, হাতি, বাঘ ও ভেড়া। এ ছাড়া ছিল রাজা-রাণী, পেঁচা, ফুল, পাখির মুখোশ, সূর্যমুখীসহ বিভিন্ন লোকসংস্কৃতির উপকরণ। মঙ্গল শোভাযাত্রার স্লোগানটি নেওয়া হয়েছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান- ‘বারীশ চাই মহলে শান্তির বাড়ি’। মঙ্গল শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে টিএসসি চত্বর হয়ে উপাচার্যের বাসভবন চত্বর প্রদক্ষিণ করে চারুকলা অনুষদে ফিরে আসে।
শিশুদের প্রোগ্রাম
শিশুদের প্রোগ্রাম, বেলা ১১টার দিকে টিএসসির স্বপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে মহানগর খেলাঘর আসরের আয়োজনে শিশু-কিশোরদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে গাছের ছায়ায় দর্শকরা অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ লাইব্রেরি ভবনের পূর্ব পাশে নববর্ষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বাংলা একাডেমিতে বৈশাখী মেলা
বাংলা একাডেমিতে বৈশাখী মেলা, বাংলা একাডেমি মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা। দুপুর ১২টার দিকে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমদ মজুমদার ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিসিআইসির জনসংযোগ কর্মকর্তা পারুল আক্তার জানান, বিসিআইসি ডিজাইন সেন্টারের আয়োজনে এবারের বৈশাখী মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৮৮টি হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। মেলা চলবে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত।
প্রতিবছরই বিকেলের পরও উৎসব এলাকার পরিবেশ থাকে জমজমাট। এবার বিকাল ৪টার মধ্যে উৎসব শেষ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশ জারি করা হয়েছে। কিন্তু তার আগেই প্রায় নীরব হয়ে পড়ে উৎসব এলাকা।