আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে বাস্তব জীবনের অনেক পার্থক্য।আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা বিজ্ঞানসম্মত নয়।বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে কর্মী হওয়ার মনোভাবের বদলে কেরানি হওয়ার মনোভাবই বেশি।এখন পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি ও বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা পদ্ধতির আগমন ঘটেনি।শিক্ষার্থীরা শুধু সার্টিফিকেট অর্জন ও চাকরির পিছনে ছুটছে।
আমরা জ্ঞান অর্জনের জন্য মূলত লেখাপড়া করি না।আমরা শিক্ষার বাস্তব কোনো প্রয়োগ করি না।আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রকৃত মেধাবীদের মেধার মূল্যায়ন করতে পারছে না।এ জন্য প্রতি বছর এ দেশ থেকে বহু শিক্ষার্থী বিদেশে চলে যাচ্ছে।কম মেধাবীদের জন্যও বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায়।আর এই শিক্ষা ব্যবস্থার পরিণতি বেকারত্ব ছাড়া আর কিছু নয়।বেকারত্বের অভিশাপে আজ শিক্ষার্থীরা দিশেহারা। এ জন্য তারা স্বনির্ভর হতে পারছে না,পারছে না অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবন ধারায় কোনো অবদান রাখতে।বাল্যকাল থেকেই আমাদের শিক্ষার মাঝে কোনো আনন্দ নেই।
পরীক্ষায় পাসের জন্য যা আবশ্যক, তা মুখস্থ করাই যেন আমাদের মূল কাজ।আমরা জানি বিদ্যার সাথে সম্পর্কহীন জীবন অন্ধ এবং জীবনের সাথে সম্পর্কহীন বিদ্যা পঙ্গু। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এই পঙ্গুত্বের অভিশাপ বয়ে আনছে দীর্ঘকাল হতে।ঔপনিবেশিক শাসনামলের প্রথাবদ্ধ ভ্রান্ত পদ্ধতি এবং পুঁথিগত শিক্ষা ব্যবস্থা এখনও প্রচলিত রয়েছে। ফলে এর দ্বারা দেশের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, যন্ত্রবিজ্ঞানী ও কারিগর যেমন সৃষ্টি হয়নি,বিশ্ববিদ্যালয়ের পাস করা ব্যক্তিদের অন্ন সমস্যারও তেমন সমাধান হয়নি।আচার্য কুমার দত্ত ঠিকই বলেছেন,’বাঙালিরা বিলাস বাসনে গা ঢালিয়া দিয়াছে।
তাহারা বিদ্যা শিক্ষা করে ডিগ্রি লাভ করে শুধু আরামে কাজ করিবার জন্য,তাই তাহাদের কেরানিগিরি ছাড়া গত্যন্তর নাই।’অথচ বিজ্ঞান প্রযুক্তির এ যুগে কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য সর্বত্রই যন্ত্রকুশলতার যেখানে স্পর্শ, সেখানে কলম পিষে জীবিকা অর্জনের প্রচেষ্টা অনেক হাস্যকরও বটে।এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কর্মমুখী শিক্ষা অতীব জরুরি। কর্ম সংশ্লিষ্ট যে শিক্ষা তাই কর্মমুখী শিক্ষা। অর্থাৎ হাতে-কলমে শিক্ষা লাভ করে বাস্তব জীবনে যার যথাযথ প্রতিফলন ঘটে তাই কর্মমুখী শিক্ষা। আমাদের দেশে কর্মমুখী শিক্ষা একেবারে সম্প্রসারিত হয় নি তা বলা যাবে না।এ শিক্ষার ক্ষেত্র ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে।দেশে প্রকৌশল,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
২২টি মেডিকেল কলেজ ও একাধিক ডেন্টাল কলেজের মাধ্যমে চিকিৎসা বিদ্যার প্রসার ঘটেছে। এছাড়াও ৪ টি প্রকৌশল ইনস্টিটিউট, অনেকগুলো পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, লেদার টেকনোলজি কলেজ,টেক্সটাইল টেকনোলজি কলেজ,গ্রাফিক আর্ট ইনস্টিটিউট ইত্যাদির মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
তবে তা যথেষ্ট নয়।দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়নের জন্য কর্মমুখী শিক্ষার আরও ব্যাপক প্রসার ঘটানো প্রয়োজন।এ উদ্দেশ্যে সরকার ও জনগণের প্রচেষ্টায় পর্যাপ্ত কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন।বিশেষ করে কৃষিকাজে সহায়ক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্থাপনের প্রতি অধিক জোর দিতে হবে।প্রয়েজন বৃত্তি কেন্দ্রিক কর্ম নিয়োগ কেন্দ্রের প্রসারতা।যুগ প্রয়োজনে কর্মমুখী শিক্ষা আজ অপরিহার্য।
Reporter: Al Shahab