❝প্রমাণ সহকারে হিজাবের বিধান❞-১

❝প্রমাণ সহকারে হিজাবের বিধান❞

০১। আমাদের কতটুকু আবৃত করতে হবে?

নিম্নোলিখিত প্রমাণের ভিত্তিতে, যে পোশাক প্রকাশ্যে পরা হবে, সেটি অবশ্যই নির্দিষ্টভাবে বাদ দেওয়া অঙ্গ ব্যতীত সম্পূর্ণ শরীর আবৃত করতে হবে।

i) আল্লাহ ﷻ বলেনঃ
“ঈমান আনয়নকারিনী নারীদেরকে বলঃ তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযাত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নীপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারও নিকট তাদের আভরণ প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশে সজোরে পদক্ষেপ না ফেলে। হে মু’মিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো”
[নূরঃ ৩১]

বর্তমান ও অতীতের আলিমদের মাঝে জুয়ুবিহিন্নাহ এর সংজ্ঞা কখনই সমস্যা ছিল না। ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه), ক্বাতাদাহ, ইবনে কাছির, ইমাম কুরতুবি, ইবনে হাজার আল আসকালানি, ইমাম আশ শাওকানি, আত তাবারি, ইমাম আয যাহাবি (رهمهم الله) প্রমুখ আলিম জুয়ুবিহিন্নাহ এর সংজ্ঞা দিয়েছেন এটি শুরু হবে মাথা থেকে, বুক থেকে নয়। নারী সাহাবীরা, বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর স্ত্রীগণ কীভাবে হিজাবের আমল করেছেন সেটি থেকেই এই বিধান স্পষ্ট। তাঁরাই এই উম্মতের আদর্শ।

খুমুর শব্দ দ্বারা এমন কাপড় বুঝানো হয় যা মাথা, চুল, ঘাড় ও বুক আবৃত করে রাখে।

মুফাসির আল কুরতুবি বিশ্লেষণ করেনঃ
“অতীতে নারীগণ খিমার দ্বারা মাথা ঢেকে রাখতেন এবং এর প্রান্তদেশ পিঠের উপর ঝুলিয়ে রাখতেন। এর ফলে তাঁদের ঘাড় ও বুকের উপরাংশ অনাবৃত থাকত যা খ্রিস্টানদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হত। অতঃপর আল্লাহ তাঁদের খিমার দ্বারা এই অংশগুলো আবৃত করতে আদেশ দেন।”

একইসাথে এই আয়াতটি কোন কোন পুরুষদের সাথে নারীরা হিজাব ছাড়া থাকতে পারবে সেটি তালিকাবদ্ধ করে দেয়।

ii) আল্লাহ ﷻ বলেনঃ
“হে নাবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মু’মিনা নারীদেরকে বলঃ তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবেনা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”
[আহযাবঃ৫৯]

উপরের আয়াতে জিনাহ অর্থ সজ্জা। আল্লাহ আযযা ওয়াযাল তাদেরকে যে সজ্জা দিয়েছেন (যেমন তাদের স্বাভাবিক বা শারীরিক সৌন্দর্য) এবং যা দিয়ে তারা নিজেরা নিজেদের সজ্জাকরণ করে (যেমন গহনাগাঁটি, কাজল, আকর্ষণীয় পোশাক, মেহেদী ইত্যাদি।) উভয়ই জিনাহের অন্তর্ভুক্ত।

এই পয়েন্টের সাথে যেসকল হাদীস উল্লেখযোগ্য তার একটি নিম্নোক্তঃ

ইবনে উমার رضي الله عنه হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
“যে পুরুষ গর্বভরে তার কাপড় ঝুলিয়ে হাঁটে তার দিকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকাবেন না।” উম্মে সালামাহ رضي الله عنه অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন, “নারীদের তাদের পোশাকের প্রান্তের ব্যাপারে কী করা উচিত?” তিনি জবাব দিলেন, “তারা সেটা এক হাত পরিমাণ নিচু করুক।” উম্মে সালামাহ বললেন, “তাদের পা ত অনাবৃত হয়ে পড়বে!” রাসূলুল্লাহ ﷺ তখন জবাব দিলেন, “তবে তারা সেটা তাদের বাহু পরিমাণ নিচু করুক কিন্তু এর চেয়ে বেশি আর নয়।”
[আত-তাবারানি কর্তৃক বর্ণিতঃ সহীহ]

উক্ত আয়াতে মুসলিম নারীদের বাইরে যাওয়ার সময় নিজ শরীর তাদের জিলবাব দ্বারা আবৃত করতে আদেশ করা হয়েছে।
আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন,
আয়িশা رضي الله عنه বলেন,
“এই আয়াত নাযিলের পর আনসারের এক নারীকে দেখতে কাকের মত লাগছিল (তাদের জিলবাবের রঙ ও আকৃতির দরূন)।”
সুতরাং, প্রকাশ্যে বের হওয়ার সময় বা অপরিচিতদের উপস্থিতিতে মুসলিম নারীদেরকে পোশাকের উপর অতিরিক্ত একটি কাপড় বা জিলবাব পরিধান করতে হবে।

২। পোশাক কতটা মোটা হতে হবে?

ভেদ করে দেখা যায়, পোশাকটি এমন হবে না। বাইরে থেকে গায়ের রঙ এবং দেহাকৃতি বুঝা যাবে না। স্বচ্ছ কাপড় দ্বারা যথাযথ হিজাব হয় না। নিম্নের হাদীসটিই এর প্রমাণঃ

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
“আমার উম্মতের শেষভাগে অল্প পরিমাণে পোশাক পরিহিত নারী থাকবে, যাদের মাথার শীর্ষভাগের চুল হবে উটের কুঁজের ন্যায়। তাদের অভিশাপ দাও কারণ নিশ্চয়ই তারা অভিশপ্ত।” অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন,
“অল্প পরিমাণে পোশাক পরিহিত নারী থাকবে, যারা নিজেরাও বিপথগামী এবং অন্যকেও বিপথগামী করবে। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এমনকি তার ঘ্রাণও পাবে না, যদিও তার ঘ্রাণ বহুদূর হতে পাওয়া যায়।”
[তাবারানি এবং সহীহ মুসলিম]

অল্প পরিমাণের পোশাক দ্বারা বুঝায় এমন পোশাক যা যতটুকু গোপন করে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করে। সুতরাং এ জাতীয় পোশাক আকর্ষণ আরও বৃদ্ধি করে এবং কুকর্মের পথ সুগম করে দেয়।

 

©

Leave a Comment