হামলার ঘটনার ব্যখ্যা দিল বরিশাল আওয়ামী লীগ

ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে বরিশালে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার ব্যাখা তুলে ধরে বরিশালে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় নগরের কালি বাড়ি রোডের মেয়রের বাসভবন আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বাসায় এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বরিশাল সিটি কপোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, ‘‘বরিশাল সিটি কপোরেশনের রুটিন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কর্মকর্তা কর্মচারীরা শোক দিবসে নগরীজুড়ে ছেড়া, শুভেচ্ছা বার্তাসহ বিভিন্ন বিল রোড, ব্যানার অপসারণে যায়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে ব্যানার অপসারণের কাজ শুরু করে।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার বাসভবন থেকে নিজে বের হয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজে বাধা দেন। পরে কর্মচারীরা ব্যানার অপসারণের বিষয়টি বললে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদেরকে বলেন- আমার কম্পাউন্ডে কোনো মেয়রগিরি চলবে না, তোমরা চলে যাও। পরে সেখানে থাকা কর্মচারীরা বিষয়টি মেয়রকে অবহিত করেন।’’

লিখিত বক্তব্যে বিসিসি’র প্যানেল মেয়র বলেন, ‘‘এ খবর শুনে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু ও প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু উপজেলা কর্মকর্তা উল্টে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন ও তদের গুন্ডা হিসেবে আখ্যায়িত করে হাসান মাহমুদ বাবুকে হাত ধরে টেনে নিজের বাস ভবনে আটকে রাখেন।

সেখানে উপস্থিত বিসিসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে তার নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আনসার সদস্যদের গুলি করার নির্দেশ দেন।’’

‘‘আনসার সদস্যরা নিবৃত থাকলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার সদস্যদের হাত থেকে অস্ত্র নিজে নিয়েই বিসিসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর গুলি করেন। এ সময় বিসিসি’র প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসসহ ৬/৭জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকতাকে ফারুক আহম্মেদকে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।’’

এ সময় মেয়রকে উদ্দেশ করে গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

‘‘পরে শত শত নেতাকর্মী মিলে মেয়রকে উদ্ধার করে বাসায় পাঠিয়ে দেন। সেই সময় গুলিবিদ্ধ হন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া, ২৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. মনির। এরপর রাতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে আটক মহানগর আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবুর মুক্তির জন্য উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে সিএন্ডবি রোডে কয়েকশত নেতাকর্মী উপস্থিত হন।  

সে সময় তারা পুনরায় গুলি বর্ষণ শুরু করে। এতে বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বিসিসি’র প্যালেন মেয়র অ্যাডভোটেক রফিকুল ইসলাম গুরুতর আহত হন। এ সময় বিসিসি’র আড়াই মনিকসহ আরও ৭/৮জন গুলিবিদ্ধ হন।’’

‘‘পরে হাজারো নেতাকর্মী ও জনতা বিএন্ডবি রোডে অবস্থান নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করে স্লোগান দিতে থাকলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ বাহিনী সেখানে উপস্থিত হয়ে লাঠিচার্জ, দলীয় নেতাকর্মীদের মোটরবাইক ভাঙচুর করে। এ সময় আহতরা বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও তাণ্ডব চালায় পুলিশ বাহিনী।’’

তিনি দাবি করেন, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে ৬০ জন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং ৫০ জনের অধিক পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন।

তারা অভিযোগ করেন, বুধবার রাতের ঘটনায় বরিশাল জেলা ও নগর আওয়ামী লীগ মেয়রের বাসভবনে সভা ডাকলে সকাল ৮টা থেকে দুই শতাধিকের উপর পুলিশ মেয়রের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। তারা মেয়রের নিরাপত্তার অজুহাত দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ‘‘একটি শান্ত শহরকে অশান্ত করতে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ইউএনও’র বাসায় কেউ হামলা করেনি। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। আমরা মনে করি শোকের মাসে এটি একটি মানবতা বিরোধী কাজ। আমরা এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।’’

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সিটি মেয়রকে বির্তকিত করতে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা শান্ত বরিশালকে অশান্ত করার চেষ্টার করছে।

এ সময় তিনি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি ও আহত নেতাকর্মীদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানান।

এদিকে ইউএনও মুনিবুর রহমান অভিযোগ করেছিলেন, উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে শোক দিবস উপলক্ষে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের ব্যানার ও পোস্টার লাগানো ছিল। বুধবার রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসব ছিঁড়তে আসে। রাতে লোকজন ঘুমাচ্ছে জানিয়ে তাদের সকালে আসতে বলা হয়। এ কারণে তারা আমাকে গালিগালাজ করে। আমার বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়।

ঘটনার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইউএনওর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এরপর তারা পুলিশের ওপরও চড়াও হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। লাঠিচার্জ করা হয়।

Leave a Comment