শর্টপ্যান্ট পরলেই নায়িকা হওয়া যায় না: প্রিয়াঙ্কা জামান

উপস্থাপনা দিয়ে মিডিয়ায় যাত্রা শুরু প্রিয়াঙ্কা জামানের। তারপর বিজ্ঞাপন ও নাটকে অভিনয় করেন। সম্প্রতি প্রিয়াঙ্কার অভিষেক হয়েছে চলচ্চিত্রেও। নতুন জার্নি নিয়ে তিনি কথা বললেন দেশ রূপান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুদীপ্ত সাইদ খান।

বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে?

সিনেমা নাটক দুটো নিয়েই ব্যস্ত আছি। আগে নাটক নিয়েই ছিলাম। এখন চারটা সিনেমা করছি।

নাটকের কি খবর?

গত ঈদে ৯টা নাটক প্রচারিত হয়েছে আমার। রেসপন্স ভালো পেয়েছি। এসএ টিভি, নাগরিক টিভি, চ্যানেল নাইন-এসব চ্যানেলে নাটকগুলো প্রচারিত হয়েছে। চ্যানেল নাইনেরটা থেকে বেশি সাড়া পেয়েছি। বাকিগুলোরও রেসপন্সও ভালো।

সিনেমার কাজ কেমন চলছে?

‘তবুও প্রেম’ আমার প্রথম সিনেমা, দ্বিতীয় ছবি হচ্ছে ‘কী করে বলব তোমায়’, তৃতীয় সিনেমা করছি অপূর্ব রানার ‘যন্ত্রণা’। আর চতুর্থ সিনেমা হচ্ছে মনতাজুর রহমান আকবরের ‘যেমন জামাই তেমন বউ’ এটার সব কাজ কমপ্লিট করেছি। এগুলোর কোনোটিই এখনো মুক্তি পায়নি।

সিনেমায় অভিনয় করতে ভালো লাগছে। যাদের সঙ্গেই কাজ করছি সবাই আমার নাচ গান অ্যাক্টিং- সবকিছুর প্রশংসা করছে। অনেকেই বলছে সিনেমায় কেউ কিছু শিখে আসে না, কিন্তু আমি নাচ গান অভিনয় সবকিছুই শিখে এসেছি। আবৃত্তি সবকিছুই পারি। প্রথম প্রথম সিনেমায় আসলে কষ্ট করতে হয় কিন্তু আমি যেহেতু আগে থেকেই শিখে এসেছি তাই তেমন কষ্ট করতে হচ্ছে না। বেশির ভাগ শট এক টেকেই হয়ে যাচ্ছে। আমার পরিচালকরা আমাকে নিয়ে খুব আশাবাদী।

নাটক থেকে সিনেমায় এসে কোনো ঝুট ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয়েছে কিনা?

আপাতত ওইরকম কোনো ঝুট ঝামেলার মুখোমুখি এখনো হতে হয়নি। বাট আমি প্রত্যেকটা বিষয়েই প্রস্তুত নিয়ে এসেছি। চার বছর আগেই সিনেমা করার প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার পরিকল্পনা ছিল নাচ, অভিনয় সবকিছুতে পারফেক্ট হয়ে তারপর সিনেমায় আসব। তো সবকিছুতেই পারফেক্ট হয়েই সিনেমায় পা রেখেছি। গত চার বছরে নিজেকে গড়েছি।

প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?

আমি ছোটবেলা থেকেই নাচ শিখেছি। নাচ খুব ভালোবাসি। তারপরে অভিনয় শিখেছি। এমনকি নানা জেলার আঞ্চলিক বাচনভঙ্গিও শিখেছি, এক্সপ্রেশনও শিখেছি। এগুলো শেখার জন্য নিয়মিত নাটক করেছি। এই কয় বছরে প্রায় ৭৩টির মতো নাটক করেছি। আরএফএল গ্রামীণফোন সহ টিভিসি করেছি প্রায় ৩৬টার মতো। এসব করে করে নিজেকে ভেঙেছি, গড়েছি। নাটকে এসে আমার অভিনয় অনেক উন্নত হয়েছে। সিনিয়র আর্টিস্টদের সঙ্গে কাজ করে করে নিজেকে ডেভেলপ করেছি। সিনেমায় আসার পর যারাই স্পটে আমার অভিনয় দেখেছে তারাই বলেছে তুমি খুবই সাড়া পাবা। বাংলাদেশে এখন নায়িকার সংকট, তুমি ইজিলি জায়গা করে নিতে পারবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঝে মাঝেই আপনার আক্ষেপমূলক স্ট্যাটাস দেখা যায়। আক্ষেপ কি নিয়ে?

আমি মাঝে মাঝেই নানা বিষয় নিয়ে স্ট্যাটাস দিই। সেখানে নানা অনিয়মের কথাও বলি। সবশেষ যে স্ট্যাটাস দিয়েছি সেটার বিষয় ছিল, চলতি ট্রেন্ড। কিছু কিছু নতুন মেয়ে আছে, যারা সহজেই সবকিছু পেতে চায়। অনেকেই তাদের ভুল ধারণা দেয় যে, শর্টপ্যান্ট পরলেই নায়িকা হওয়া যায়। কিন্তু আমি মনে করি, শর্টপ্যান্ট পরলেই নায়িকা হওয়া যায় না। আমার অভিজ্ঞতা বলে যে একজন নায়িকা হতে হলে তাকে অভিনয় ভালো করতে হবে, বিনয়ী হতে হবে। কিন্তু এসব না শিখিয়ে শেখানো হয় শর্টপ্যান্ট পরা, বা বেয়াদবী করা। কিছু লোক আছে যারা নায়িকা বানানোর কথা বলে অনৈতিক কাজের দিকে মেয়েদের ধাবিত করে দেয়। কিন্তু এসবে নায়িকা হওয়া যায় না। মিডিয়ার সবকিছুই সম্মানের। কোনো শিল্প কখনো খারাপ হতে পারে না।

আপনি বললেন, মিডিয়ার মেয়েদের অনৈতিক পথে ধাবিত করা হয়। এমন পরিস্থিতির শিকার কি আপনি কখনো হয়েছিলেন?

অনেক সময়ই কাস্টিং কাউচের অফার এসছে। কিন্তু আমি কখনো বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হইনি। কারণ আমি হুট করেই মিডিয়ায় আসিনি। আগে থেকেই মিডিয়া সম্পর্কে জানাশোনা ছিল। ফলে আমি সচেতন ছিলাম ও নিজের মেধার ওপর ভরসা রেখেছি। আমি সব সময় নিজের বুদ্ধিতে চলি। আমি সব সময় আমার সিনিয়র আর্টিস্টদের অনুসরণ করি। যারা গুণী আর্টিস্ট তাদেরকে ফলো করি। তাদের আদর্শ অনুসরণ করে সব সময় নিজেকে প্রস্তুত রাখি যাতে কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আমাকে কেউ ফেলতে না পারে, কেউ যেন আমাকে মিসইউজ করতে না পারে। আমি চেষ্টা করি সব সময় সচেতন থাকার। ভবিষ্যতেও সচেতন থাকব। আমার জুনিয়রদেরও আমি ভালো পরামর্শ দিই। আর কখনো আমি বা কেউ যদি মিসগাইড হয় তাহলে আমি তা গণমাধ্যমে তুলে ধরব। তবে একটা কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, যে মেয়ে যে দিকে যেতে চায় সে সে দিকেই যাবে। আমি যদি ভালো দিকে যেতে চাই তাহলে আমি ভালো দিকেই যাব। আর যদি আমি মনে করি আমার এতো কষ্টের প্রয়োজন নেই, সহজেই সবকিছু পেতে হবে তাহলে সে অনৈতিক পথেই যাবে। যে যেদিকে যেতে চায় তার গন্তব্য সেদিকেই ধাবিত হয়। এগুলোই বাস্তব সত্য। আমি সব সময় বুঝে শুনে আগাচ্ছি। অভিনয়ের ওপর আমি বেশি গুরুত্ব দিই।

Leave a Comment