রাশিয়ার আগ্রাসনের আশঙ্কায় ইউরোপে আরও সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের আশঙ্কার মুখে ইউরোপে অতিরিক্ত সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি সপ্তাহেই এ সেনা মোতায়েন করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র মস্কোকে যুদ্ধে নামানোর চেষ্টা করছে—রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এমন মন্তব্যের এক দিন পর আজ বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউস জানায়, নর্থ ক্যারোলাইনার একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে ২ হাজারের মতো মার্কিন সেনা পোল্যান্ড ও জার্মানিতে পাঠানো হবে এবং জার্মানিতে ইতিমধ্যে অবস্থান করা ১ হাজার সেনা রোমানিয়ায় যাবে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার মস্কোতে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সঙ্গে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলন করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। তিনি বলেন, তাঁর দেশকে ইউক্রেনে একটি যুদ্ধে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এতটা উদ্বিগ্ন নয়…রাশিয়ার উন্নয়নকে আটকে রাখাই তার প্রধান কাজ। সেই অর্থে ইউক্রেন হলো এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটি হাতিয়ার।’

প্রায় ছয় সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা ইউক্রেন সংকট নিয়ে এই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কোনো মন্তব্য করলেন পুতিন। তিনি বলেন, রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের অজুহাত হিসেবে একটি সংঘাতকে ব্যবহার করাই যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য।

বেশ কিছু দিন ধরে ইউক্রেন সীমান্তে ট্যাংক, গোলন্দাজ, গোলাবারুদ, যুদ্ধবিমানসহ সমরসজ্জায় সজ্জিত প্রায় এক লাখ সেনা জড়ো করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনসহ পশ্চিমা দেশগুলোর দাবি, কিয়েভে আগ্রাসন চালানোর প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই ক্রেমলিন এই সেনা সমাবেশ করেছে। তবে ক্রেমলিন সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

ইউক্রেন সংকট বাড়তে থাকায় তা মধ্যস্থতা করতে রাশিয়া সফর করেছেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান। ন্যাটোর সদস্যভুক্ত দেশটির নেতাকে সঙ্গে নিয়ে করা সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, এটা এখন স্পষ্ট যে রাশিয়ার মৌলিক উদ্বেগ উপেক্ষা করা হয়েছে।

পুতিন একটি সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ পরিস্থিতিও বর্ণনা করেছেন; যেখানে ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যুক্ত করার পর ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলবে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া। তিনি বলেন, ‘ধরুন, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হয়েছে এবং এ ধরনের সামরিক কার্যক্রম শুরু করেছে। আমরা কি তখন ন্যাটোর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়াব? কেউ কি তা নিয়ে চিন্তা করেছে? সম্ভবত কেউ এ নিয়ে ভাবছে না।’

পুতিনের সঙ্গে আলোচনার পর আপসের একটি পথ বের হবে—এই বিশ্বাসের কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশ্বস্ত হয়েছি যে বিদ্যমান পার্থক্যগুলো দূর করা সম্ভব হতে পারে। একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব, যা শান্তি ও রাশিয়ার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার পাশাপাশি ন্যাটো সদস্যরাষ্ট্রের জন্যও গ্রহণযোগ্য হবে।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মঙ্গলবার সতর্ক করে বলেছেন, রুশ আগ্রাসন ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যকার যুদ্ধ হবে না, এটা হবে ইউরোপের একটি যুদ্ধ, একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ।

এদিকে ইউক্রেনে সম্ভাব্য রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেশটি সফর করছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ইউক্রেনের মাথায় পুতিনের বন্দুক তাক করে রাখার অভিযোগ করে তিনি ক্রেমলিনকে একটি সামরিক বিপর্যয় এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার পর বরিস জনসন সাংবাদিকদের বলেন, আক্রমণ করা হলে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী পাল্টা জবাব দেবে।

আলোচনার পথ খোলা

প্রেসিডেন্ট পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পর বলেছেন, আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে। এএফপি জানায়, পুতিনের মন্তব্যের পর আজ থেকেই ন্যাটো নেতারা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করেছেন। এরই মধ্যে পশ্চিমা নেতারা প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করতে ইউক্রেনে ছুটছেন। বরিস জনসন ও পোলিশ প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার কিয়েভ গেছেন। নেদারল্যান্ডস ও তুরস্কের প্রেসিডেন্টও যাচ্ছেন সেখানে।

আর পুতিন বলেছেন, শিগগিরই মস্কো সফর করবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ।

Leave a Comment