মোদির বৈঠকে যোগ দেবে গুপকর জোট

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকা বৈঠকে যোগ দেবে জম্মু-কাশ্মীরের সপ্তদলীয় জোট গুপকর অ্যালায়েন্স । এ কথা জানান গুপকর জোটের চেয়ারম্যান ফারুক আবদুল্লা আজ মঙ্গলবার শ্রীনগরে বৈঠক শেষে । তিনি আর বলেন, বৃহস্পতিবার দিল্লিতে জম্মু-কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সর্বদলীয় যে বৈঠক ডেকেছেন, তাতে তিনি, পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি ও সিপিএম নেতা মহম্মদ তারিগামি যোগ দেবেন । ফারুক আর বলেন, ‘বৈঠকে যোগ দিয়ে আমরা আমাদের কথা জানাব ।’

তবে সেই কথা বা দাবি কী, মেহবুবা মুফতি তা স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে যা যা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, আমরা তা ফেরত চাইব । আর যা করা হয়েছে, তা অন্যায় । তবে যেভাবে করা হয়েছে, তা বেআইনি ও অসাংবিধানিক । তবে বৈঠকে বলব, সেসব ফেরত না দিলে কাশ্মীরে শান্তি ফেরানো যাবে না । তবে ’ বৈঠক ডাকা হলেও আজকেও সরকার সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি ।

তবে সিপিএম নেতা তারিগামি সেই প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘কী কী বিষয়ে আলোচনা হবে, তা আমাদের জানানো হয়নি । আমরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে দেব জোট কী চায় । তবে তাঁকে অনুরোধ করব, সংবিধান আমাদের যা নিশ্চিত করেছিল, তা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখা হোক ।’

‘৩৭০ অনুচ্ছেদ ও ৩৫(ক) ধারার বিষয়ে কোনো আপস নয় আওয়ামি ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা মুজাফফর শাহ বলেন । তবে ’ ৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ৩৫(ক) ধারায় রাজ্যের অধিবাসী কারা, তা নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রাজ্য বিধানসভাকে । আর রাজ্যের অধিবাসী ছাড়া আর কেউ জম্মু-কাশ্মীরে জমি কিনতে পারেন না। তবে বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে । আর বৈঠকে কংগ্রেস নেতা ও জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবী আজাদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে । তবে কংগ্রেস বৈঠকে যোগ দিয়ে ৩৭০ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের দাবি জানাবে কি না, সেই বিষয়ে আজাদ স্পষ্ট কোনো অভিমত দেননি ।

তবে কংগ্রেস বরাবর বলে আসছে, যে প্রক্রিয়ায় ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়েছে, তা সংবিধানসম্মত নয় । আর ওই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বহু আবেদন সুপ্রিম কোর্টে বিবেচনাধীন । তবে দুই বছর অতিবাহিত হলেও সর্বোচ্চ আদালত তা শোনেননি । দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনিক বিষয়ে স্থগিতাদেশও দেননি। ফলে মামলার নিষ্পত্তি না হলেও দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের যাবতীয় সিদ্ধান্ত রূপায়িত করে চলেছে । তবে বৈঠক প্রসঙ্গে গুলাম নবী আজাদ শুধু বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা ফেরত পাওয়ার বিষয়টিই প্রধান বিবেচ্য ।

সরকারি সূত্রের বরাতে গতকাল বলা হয়, বৈঠকের আলোচ্যসূচি একটাই। দ্রুত নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিয়ে রাষ্ট্রপতির শাসনের অবসান ঘটানো। জম্মু-কাশ্মীর দ্বিখণ্ডিত হয় ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট। তার আগের দিন গঠিত হয় সপ্তদলীয় জোট গুপকর অ্যালায়েন্স। জোটের লক্ষ্য ছিল, জম্মু-কাশ্মীরকে ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী অবস্থায় ফেরত আনা। অর্থাৎ সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বহাল করা ও রাজ্যের মর্যাদা পুনরুদ্ধার। দুই বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার বারবার বলে এসেছে, কোনো অবস্থাতেই ৩৭০ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের প্রশ্ন ওঠে না।

পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, ঠিক সময়ে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে এই দুই দাবির প্রশ্ন কীভাবে আলোচিত হয়, সেটাই দেখার। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কাশ্মীরি নেতাদের মতানৈক্য থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে তাঁরা স্বাগত জানিয়েছেন। ফারুক, মেহবুবা, তারিগামি বা পিপলস কনফারেন্স দলের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ লোন—প্রত্যেকেই বলেছেন, আলোচনাই সমাধানের একমাত্র উপায় ।

Leave a Comment