মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

সবজি হিসেবে মিষ্টি কুমড়ার অবদান কম নয়। মিষ্টি কুমড়ার মতো সুস্বাদু সবজি খুব কমই রয়েছে। হালকা মিষ্টি স্বাদের এই সবজিটি পাওয়া যায় সারা বছর জুড়ে। খাদ্যতালিকায় নিয়মিত মিষ্টি কুমড়ার উপস্থিতি আপনাকে রাখতে পারে অনেক অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে। কেননা মিষ্টি কুমড়া এমন একটি সবজি, যার রয়েছে নানাবিধ পুষ্টিগুণ।

জেনে নিন কুমড়োর অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-

চোখের সুরক্ষায় : মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ উপাদান থাকে যা চোখের কর্নিয়াকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে।

দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : কুমড়া হলো বিভিন্ন ধরণের ভিটামিনের ভাণ্ডার। এতে আছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-এ, সি, ই, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং আরও অনেক উপাদান। যা টিস্যুকে রক্ষা করে থাকে।

ওজন কমাতে সহায়ক : কুমড়াতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম। কিন্তু এতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার ও পটাশিয়াম আছে। কুমড়ার ফাইবার দেহের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। পটাশিয়াম দেহ থেকে অপ্রয়োজনীয় পানি ও লবণ বের করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে : পুষ্টি ও ফাইবারে ভরপুর কুমড়া খেলে দেহের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। কুমড়া দেহের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ডায়রিয়া সমস্যায় দূর করতে সাহায্য করে এবং কাঁচা কুমড়োর রস মানবদেহের অ্যাসিডিটি সমস্যা রোধ করে।

উচ্চ রক্তচাপ কমায়: কুমড়াতে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম উপাদান আছে, যা মানবশরীরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন-সি ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে থাকে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ : অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ মিষ্টি কুমড়া ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোলেস্টেরল কম রাখতে সাহায্য করে। আর্টারির দেয়ালে চর্বির স্তর জমতে বাধা প্রদান করে। ফলে মিষ্টি কুমড়া নিয়মিত খেলে হৃদরোগও প্রতিরোধ করা যায়।

মিষ্টি কুমড়া

ঠাণ্ডা লাগা প্রতিরোধ : মিষ্টি কুমড়াতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা লাগা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। মিষ্টি কুমড়ার ভিটামিন এ ও সি চুল ও ত্বক ভালো রাখে। তাই চকচকে উজ্জ্বল চুল ও সুন্দর ত্বকের জন্য নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন।

জ্বালাপোড়ার অনুভূতি কমায় : পেশির জ্বালাপোড়ার অনুভূতি কমানোর ক্ষমতা আছে কুমড়োর বিচির। এ ছাড়া বাতের ব্যথাও কমায় এটি। অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাতে এর তেলও ভালো কাজে দেয়।

ভালো রাখে প্রোস্টে : কুমড়োর বিচিতে আছে জিংক। যা পুরুষের উর্বরতা বাড়ায় ও প্রোস্টেটের সমস্যা প্রতিরোধ করে। এতে আছে ডিএইচইএ (ডাই-হাইড্রো এপি-অ্যান্ড্রোস্টেনেডিয়ন), যা প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।

ডায়াবেটিসেও উপকারী : শরীরে নিয়মিত ইনসুলিন সরবরাহ করে এবং ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ চাপ কমায়। এ ছাড়া হজমে সাহায্য করে এমন প্রোটিনও সরবরাহ করে কুমড়োর বিচি, ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

বয়সের ছাপ কমায় : মিষ্টি কুমড়াতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিংক ও আলফা হাইড্রোক্সাইড। জিংক ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো রাখে ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতেও মিষ্টি কুমড়া সাহায্য করে

দীর্ঘ চুলের নিশ্চয়তা : এতে আছে কিউকুরবিটিন, এমন এক অ্যামিনো অ্যাসিড যা চুলের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ভিটামিন সিও আছে কুমড়োর বিচিতে, যা চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়।

দাঁত ও হাড় গঠন : হার্ট ভালোভাবে রক্ত পাম্প করতে সমর্থ হয়। এছাড়াও মিষ্টি কুমড়া দাঁত ও হাড় গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।

ভালো ঘুম : কুমড়োর বীজে ট্রিপটোফ্যান নামে অ্যামাইনো এসিড থাকে যা রাতে আপনাকে ভালো ঘুম এনে দেবে। তাই একে প্রকৃতিপ্রদত্ত স্লিপিং পিল বলা হয়ে থাকে।

কুমড়ার বীজে প্রচুর প্রোটিনও রয়েছে। এটি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। এর দুটি সুবিধা পাবেন আপনি একদিকে আপনার ওজন কমবে, অন্যদিকে ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। মিষ্টি কুমড়ার বিভিন্ন উপাদান প্রস্রাবের সমস্যা কমায় ও কিডনিতে পাথর হতে বাধা প্রদান করে।

Leave a Comment