ভালোবাসার স্তরে পৌঁছার আলামত কী? কীভাবে পৌঁছাবেন সেই কাঙ্ক্ষিত স্থানে?

পারাপারের সাকোঁ বা সাম্পান

 

ভালোবাসার স্তরে পৌঁছার আলামত কী?

কীভাবে পৌঁছাবেন সেই কাঙ্ক্ষিত স্থানে?

 

শুনুন হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা কী বলে,

‘আমি তার কান, তার চোখ, তার পা, তার হাত হয়ে যাই।’

 

আপনার কান সব সময় আল্লাহর আদেশ মেনে চলবে।

– কখনো শয়তানের আদেশ মেনে চলবে না,

– কখনো প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে না। 

 

কান যা শ্রবণ করে, তা অন্তরে গেঁথে যায়।

আপনি যদি দৃঢ় প্রত্যয়ী এবং আল্লাহমুখী হন – তাহলে আল্লাহর অপছন্দনীয় কথা শোনামাত্রই তা থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন।

ছুড়ে ফেলবেন আস্তাকুঁড়ে কোনো বিকৃত চিন্তা কিংবা ভ্রান্ত মতবাদ শ্রবণে আপনার কান হবে বধির, অন্তর হবে আবদ্ধ।

 

আপনার চোখ বা দৃষ্টি অন্তর্দৃষ্টিতে পরিণত হবে।

এই চোখ দিয়ে হারাম কোনো কিছুর দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না।

দুনিয়াবি চোখ দিয়ে আখরাতের দৃষ্টিকোণ থেকে যেকোনো কিছুর বিচার করবেন।

 

যা-কিছু আপনার আখিরাতের পাথেয় জোগাবে তা-ই সুন্দর ও কল্যাণকর হিসেবে বিবেচিত হবে আপনার দৃষ্টিতে।

আর আখিরাতে যা আপনার পাল্লাকে হালকা করবে তা বিকৃত ও অরুচিকর এবং পরিত্যাজ্য বলে গণ্য হবে।

 

কারণ আপনি দৃষ্টি অবনত করেছেন। চোখের হেফাজত করেছেন।

ফলে আল্লাহ তাআলা আপনার অন্তর্দৃষ্টি খুলে দিয়েছেন।

 

তার বিপরীতে অন্যরা হারামের প্রতি নিজের দৃষ্টিকে ছেড়ে দিয়েছে, ফলে তাদের অন্তর অন্ধত্বের কালো রঙে ঢাকা পড়েছে।

 

আপনার পা ওই পথে হাঁটবে যে পথে আপনার রব খুশি হন। আপনার পা প্রতিযোগিতামূলক কল্যাণকর কাজে এবং সত্যকে সাহায্য করতে আগোয়ান হবে।

দাওয়াতি ও ভালো কাজে থাকবে আপনার পদচারণা।

 

মন্দ ও গর্হিত কাজের দিকে, জুলুমকে সাহায্য করার পথে এবং গুনাহের প্রতি আপনার পা আপনাকে নিয়ে যাবে না।

আপনার হাত আল্লাহর রাস্তায় কাজ করবে, আল্লাহর জন্য লিখবে এবং আল্লাহর জন্য কোনো কিছু বহন করবে।

আপনার হাত জালিমের হাতকে জুলুম থেকে বাধা দেবে। অসহায়-বিপদ্গ্রস্তদের সহযোগিতায় এগিয়ে যাবে।

কখনো জুলুম কিংবা হারামের প্রতি হাত আগাবে না। এ হাত কখনো চুরি করবে না, খেয়ানত করবে না।

 

আপনি যখন আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক চলবেন তখনই আপনি খাঁটি বান্দা হতে পারবেন। সর্বদা আল্লাহর রহমতের ছায়ায় থাকবেন।

আল্লাহর পছন্দনীয় জিনিসের প্রতিই আপনি দৃষ্টি দেবেন। আল্লাহর অপছন্দনীয় জিনিস থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবেন। আপনি হারাম থেকে অমুখাপেক্ষী হয়ে হালাল নিয়ে তুষ্ট থাকবেন। আল্লাহর নৈকট্য আপনার কাছে প্রিয় মনে হবে।

 

তিনিই আপনার যাবতীয় কঠিন বিষয়াদিকে সহজ থেকে সহজতর করে দেবেন। যে বিষয়গুলো নিয়ে অনেকে উদভ্রান্ত হয়। হতাশার কালো মেঘ তাদেরকে ঘিরে রাখে।

 

ভালোবাসার স্তরে পৌঁছাটা আপনাকে রক্ষা করবে দোদুল্যমানতা ও সিদ্ধান্তহীনতা থেকে।

এটি হলো ফিতনা যুগের সমাজে অনেক মানুষের কাছে একটি কাঙ্ক্ষিত মণিমুক্তা এবং হারানো ভান্ডার।

 

আল্লাহ তাআলা আপনার অঙ্গপত্যঙ্গকে তাঁর সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করবেন। তাঁর ভালোবাসা জন্ম নেবে আপনার অন্তরে। ফলে আল্লাহ যা ভালোবাসেন তাই আপনি দেখবেন। তিনি যা ভালোবাসেন তাই আপনি শুনবেন। প্রেমিকা আবলার জন্য আনতারার ভালোবাসা একজন মানুষের শেখার আছে অনেক কিছু।

 

জাহিল কবি আনতারা তার প্রেমিকাকে সম্বোধন করে বলেন, ‘যখন বর্শাসমূহ আমার রক্তপান করছিল এবং শুভ্র উজ্জ্বল ভারতীয় তরবারি দিয়ে আমার রক্ত ঝরছিল তখন (সেই দুঃসময়ে) আমি তোমাকে স্মরণ করেছি।’

 

আমার ইচ্ছে হচ্ছিল তরবারিকে চুম্বন দিই, কেননা তা তোমার হাস্যোজ্জ্বল দাঁতের মতো চকচক করছে।’

 

প্রচণ্ড যুদ্ধ ও তীব্র আক্রমণের সময় একজন মানুষ তার প্রেমিকাকে ভুলতে পারছে না, এমনকি তা স্মরণ যেন তার মাঝে সাহস সঞ্চার করে, সাহস জোগায় শত্রুদের প্রতি আক্রমণ করতে। তির নিক্ষেপণের মাঝে সে তার প্রিয়াকে দেখতে পায়। এতো একজন মাখলুকের প্রতি অন্য মাখলুকের ভালোবাসার নমুনা। এতো প্রেমিকার জন্য এক প্রেমিকপুরুষের ভালোবাসার নমুনা।

 

আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মাঝে এই ভালোবাসার নমুনা কীরূপ হবে!

যার অগণিত নিয়ামতের মাঝে আমরা ডুবে আছি।

আমরা তাকে ভালোবাসার পূর্বে তিনি আমাদের ভালোবেসেছেন। আমরা তাকে স্মরণ করার পূর্বে তিনি আমাদের স্মরণ করেছেন। তিনি আমাদেরকে তার পরিবার হিসেবে গণ্য করেছেন অথচ আমরা তার যোগ্য নই।

 

আল্লাহর ভালোবাসার কিছু নমুনা বা আলামত রয়েছে,যা শুধু অবস্থার পরিবর্তনঃ

 

▪️ কুরআন তেলাওয়াত করা, কুরআন অনুধাবন করা, কুরআন দ্বারা প্রভাবিত হওয়া এবং কুরআন তেলাওয়াতের সময় কাঁদা – সবই ভালোবাসার নিদর্শন।

 

▪️রাগ বা ক্রোধকে প্রশমিত করা ক্ষমার মাধ্যমে, যিনি কষ্ট দিয়েছেন তার প্রতি ইহসান বা দয়া করা।

 

▪️ যাকাত আদায়ে সম্পদ ব্যয়ে আনন্দবোধ করা, আত্মত্যাগে শান্তি অনুভব করা এবং দানে প্রশান্তি পাওয়াও ভালোবাসার নিদর্শন।

 

▪️ আল্লাহর রাস্তায় ধৈর্যধারণ ও কষ্ট সহ্য করাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির উপলক্ষ্য মনে করাও ভালোবাসার নিদর্শন।

 

পরিশেষে জেনে রাখুন,

বেলায়েত তথা আল্লাহর অভিভাবকত্বের জন্য গুনাহ থেকে মুক্ত হওয়া শর্ত নয়।

বরং গুনাহের ওপর অটল না থেকে খাঁটি তাওবা করা এবং গুনাহে লিপ্ত হওয়ার ভয় থাকা।

 

এজন্য সত্যিকারের ওলির অনুভূতি ইবনুল কাইয়্যিম রহ-এর কথার সাথে মিলে।

তিনি বলেন,

” হারাম কাজে বা গুনাহের মজায় বীভৎসতা ও কদর্যতার মিশ্রণ রয়েছে।

মজাটা চলে গেলে দিলের মাঝে হতাশার কষ্ট জন্ম নেয়। “

 

– ড. খালিদ আবু শাদি

Leave a Comment