ঠকাচ্ছি কাকে?


বড়ো দুঃসময় পার করছি আমরা। আমি, আপনি এবং সে – আমরা সবাই।

আমরা জুমুআর সালাত ছাড়া মাসজিদে যাই না।

রমাদানের ৩০টি সাওমের সবগুলো রাখা হয়ে ওঠে না আমাদের।

আমরা যাকাতের বিষয়ে উদাসীন। যাকাত আদায় করলেও হিসেব করে সঠিক পরিমাণ যাকাত দিই না।

পৃথিবীর অর্ধেক দেশ ঘুরে ফেললেও মক্কাতে গিয়ে হাজ্জ করার মতো টাকা-পয়সা ম্যানেজ করতে পারি না আমরা।

আমরা হিজাব করতে অস্বস্তি বোধ করি। কোনোভাবে শরীরের হিজাব পালন করলেও মনের হিজাবের কথা বেমালুম ভুলে আছি।

সুদ-কে ‘ইন্টারেস্ট’ হিসেবে বিবেচনা করতে আনন্দ হয় আমাদের। প্রতিনিয়ত আমরা খুঁজে বেড়াই ‘সুদ এবং ইন্টারেস্ট-এর পার্থক্য’ এবং ইন্টারেস্ট গ্রহণের যৌক্তিকতা।

ইসলাম-শিক্ষা আমাদের কাছে চতুর্থ বিষয় বা ফোর্থ সাবজেক্ট। ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান পড়ার পরে সময় থাকলে পড়া যাবে। পাশ করলে কিছু নাম্বার যোগ হবে, ফেল করলে ক্ষতি নেই।

এক মাস পরের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা/বি.সি.এস পরীক্ষা/পদোন্নতির পরীক্ষা নিয়ে আমরা দারুণ ব্যস্ত। অথচ এক সেকেন্ড পরেই যে মৃত্যুর পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা আছে— ভুলে থাকি আমরা।

নজরুল-রবীন্দ্রনাথ-গোর্কি গুলে খেয়ে ফেলেছি। আলমারির ওপরে রাখা পবিত্র কুরআনের ওপরে দুই ইঞ্চি ধুলোর প্রলেপ।

চে গুয়েভারা, মাষ্টারদা আমাদের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। অন্যদিকে ৪ জন খলীফা ছাড়া রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ১০ জন সাহাবিদের নাম বলতে পারব না আমরা, জীবন-কাহিনি তো অনেক দূরের কথা।

আমাদের যে কোনো আড্ডা-আলোচনার সিংহভাগ জুড়ে থাকে পরনিন্দা।

দিনান্ত পরিশ্রম করি ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য। আখিরাতের ঘরের ব্যাপারে উদাসীন সবাই।

গাড়ি-বাড়ি-শাড়ি-গহনা নিয়ে আমরা অন্য পরিবারের সাথে আমৃত্যু প্রতিযোগিতা করি। উত্তম বিষয়ে প্রতিযোগিতা করা আমাদের স্বভাবে নেই।

বেতন-পদোন্নতির জন্য মামা-চাচা-খালুর পায়ে ধরতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকি আমরা। মহিমান্বিত আল্লাহর জন্য দুই পায়ে কিবলার দিকে দাঁড়ানোর শক্তি পাই না।

ব্যক্তিগত ও সামাজিক উৎকর্ষতার জন্য হেন চেষ্টা নেই যা করছি না, শুধু পবিত্র কুরআন ও রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ ছাড়া।

এ রকম আরও হাজার হাজার উদাহরণ দিতে পারব, কিন্তু আমল করার বিষয়ে বড়ো বেখেয়াল আমরা।

ধিক! আফসোস!!


ফজরে উঠতে পারিনি আজকে, বাকি ৪ ওয়াক্ত পড়ে আর কী হবে? এরচেয়ে কালকে ফজর থেকে নতুন করে শুরু করব।

এই-যে সুদ-ঘুষ খাই, এগুলো খারাপ জানি। একেবারে হাজ্জ করে এসে সব ছেড়ে দেব।

শালীনভাবে চলা আমাদের দরকার—এটা মানি। কিন্তু এখন বিভিন্ন কারণে পারি না। যখন পর্দা ধরব, তখন একেবারে বোরকা-হিজাব-নিকাব করব।

একটু-আধটু প্রেম-ভালোবাসা খারাপ না। বিয়ের পরে স্ত্রীর প্রতি সৎ থাকলেই তো হলো।

হিজাব তো করি। দু-একটা প্রোগ্রামে শুধু হিজাব করি না। ক্লোজ বন্ধু-আত্মীয়দের বিয়ে তো তাই।

মুখের ওপরে মামাতো বোন, ফুফাতো বোন, খালাতো বোনদের গায়েরে মাহরাম কীভাবে বলি? এতদিন একসাথে বড়ো হয়েছি। পিঠাপিঠি বয়স। আমি তো আসলে বোনের মতো দেখি ওদের।

জন্মের পর থেকেই মামি-চাচিদের কাছে মানুষ। উনারা আমার মায়ের মতো। উনাদের সাথে দেখা না দিলে মানুষ কী বলবে?

বিয়ে তো জীবনে একবারই করতেছি। একটু মজা করে (হারাম বিষয়াদি সহ) না করলে কি হয়?

লিস্ট লম্বা করতে চাইলে সাচ্ছন্দে করা যাবে।

আল্লাহ তাআলা শয়তানের ওয়াসওয়াসা এবং নাফসের তৈরি নিজস্ব যুক্তি থেকে হিফাজত করুন।

“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন হলো ইসলাম।” [৯]

“তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস করো এবং কিছু অংশ অবিশ্বাস করো? যারা এমন করে, পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনোই পথ নেই। কিয়ামাতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেওয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে গাফিল নন। ” [১০]
.
.
.
.
[৯] সূরা আল ইমরান, ০৩: ১৯
[১০] সূরা আল-বাকারা, ০২:৮৫

————————————————
গল্পঃ ঠকাচ্ছি কাকে?
বইঃ অনেক আঁধার পেরিয়ে
লেখক : মুহাম্মাদ জাভেদ কায়সার (রহ)

Leave a Comment