বিশ্বে মৃত্যু ছাড়াল ৫০ লাখ

বিশ্বে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৫০ লাখ পার হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হিসাবে, গত শুক্রবার বিশ্বজুড়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৫০ লাখের মাইলফলক পার হয়। এ ছাড়া বিশ্বের টিকা না নেওয়া অনেক মানুষ এখনো করোনার ডেলটা ধরনে সংক্রমিত হচ্ছেন। করোনার এই ধরন টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বের ধনী ও গরিব দেশগুলোর মধ্যে বৈষম্য বাড়িয়েছে এবং পশ্চিমা কিছু দেশে টিকা নিয়ে দ্বিধাও তৈরি করেছে।

রয়টার্সের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় প্রথম ২৫ লাখ মৃত্যুর ক্ষেত্রে এক বছরের বেশি সময় লেগেছে। পরবর্তী ২৫ লাখ মৃত্যু হয়েছে মাত্র আট মাসে। গত সপ্তাহে বিশ্বে গড় দৈনিক মৃত্যু ছিল ৮ হাজারের বেশি। অর্থাৎ গত সপ্তাহে বিশ্বে প্রতি মিনিটে ৫ জন করে করোনায় মারা গেছেন।

তবে আগের তুলনায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে করোনায় বিশ্বে মৃত্যুর হার অনেক কমেছে।

সম্প্রতি দরিদ্র দেশগুলোতে টিকা দেওয়ার গুরুত্ব বেড়েছে। অনেক দেশে এখনো টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে ধনী দেশগুলোতে টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে।

আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডেটা নামের একটি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ এখনো করোনার একটি ডোজ পাননি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ সপ্তাহে জানিয়েছে, তাদের কোভ্যাক্স উদ্যোগের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সবচেয়ে কম টিকা দেওয়া হয়েছে এমন দেশে টিকা বিতরণ করা হবে। গত জানুয়ারি মাস থেকে এই উদ্যোগের মাধ্যমে ১৪০টির বেশি দেশকে জনসংখ্যার অনুপাত অনুসারে টিকা বিতরণ করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অ্যাকসেস টু ভ্যাকসিন কর্মসূচির সহকারী মহাপরিচালক ম্যারিঅ্যাঞ্জেলা সিমাও বলেন, অক্টোবরে আমরা একটি ভিন্ন পদ্ধতি নিয়েছি। যেসব দেশে টিকা সরবরাহ কম সেখানে এখন টিকা সরবরাহ করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যু ৭ লাখ ছাড়াল

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে মৃত মানুষের সংখ্যা সাত লাখ ছাড়িয়েছে। রয়টার্সের পরিসংখ্যানে এমন তথ্য জানা গেছে।

করোনাবিষয়ক পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারসের সর্বশেষ তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে মৃত মানুষের সংখ্যা ৭ লাখ পার হয়েছে। করোনা শনাক্ত মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৪ লাখ ছাড়িয়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যুক্তরাষ্ট্রে বয়স্ক এবং ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় কর্মরত মানুষকে সুরক্ষার জন্য টিকার বুস্টার ডোজ চালু করেছে দেশটির সরকার।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটিতে গত সপ্তাহে প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। রয়টার্সের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ সংখ্যা জানুয়ারিতে মৃত্যুর প্রায় ৬০ শতাংশ।

রয়টার্স ও ওয়ার্ল্ডোমিটারসের পরিসংখ্যান অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও শনাক্তের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বে করোনায় মোট শনাক্তের ১৯ ও মৃত্যুর ১৪ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে ঘটেছে।

দ্রুত সংক্রমণশীল করোনার ডেলটা ধরনের কারণে গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা আরও বেড়ে গিয়েছিল। তবে গত এক সপ্তাহের তথ্যের গড় বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ওই সংখ্যা কমে গিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার ৬২৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউসি বলেছেন, এ সংকট শেষ হওয়া প্রয়োজন।

রয়টার্স বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে টিকার ভুয়া তথ্য নিয়ে ভুগছে। ফলে দেশটির জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ টিকা গ্রহণ থেকে বিরত থেকেছে। তবে দেশটিতে এখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির হার কমেছে। কিন্তু দেশটিতে আরও করোনা সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

গত শুক্রবার রাশিয়ায় এক দিনে ৮৮৭ জন মারা গেছেন। করোনা শুরুর পর থেকে দেশটিতে এক দিনে এটাই সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা। দেশটির ৩৩ শতাংশ মানুষ এখন পর্যন্ত টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন।

এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় দক্ষিণ আমেরিকায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। সেখানে করোনায় মৃত্যুর হার ২১ শতাংশ। এরপর রয়েছে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ অঞ্চল। সেখানে করোনায় মুত্যুর হার ১৪ শতাংশ। বিশ্বে প্রথম করোনার ডেলটা সংস্করণ শনাক্ত হয় ভারতে। সেখানে একসময় দিনে ৪ হাজার মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড হয়েছিল। কিন্তু করোনার টিকা কর্মসূচি চালুর পর করোনায় মৃত্যু দৈনিক ৩০০ জনে নেমে এসেছে। দেশটিতে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৪৭ শতাংশকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে।

এখন পর্যন্ত বিশ্ব করোনার ডেলটা ধরনটি আধিপত্য ধরে রেখেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৪টি সদস্যদেশের মধ্যে ১৮৭টি দেশ ও অঞ্চলে ডেলটা ধরন শনাক্ত হয়েছে।

Leave a Comment