নাটকের পর নাটক, তবুও পাকিস্তানের জয়

পাকিস্তান ইনিংসের ১৯তম ওভার পর্যন্ত কোনো রোমাঞ্চ নেই। উইকেটে প্রাণ নেই। ব্যাটিংয়েও চার-ছক্কা নেই। বোলাররা দৌড়ে এসে বল ছাড়ছে আঙুল ঘুরিয়ে। স্পিনাররা চেষ্টা করছে যতটা নিচু বাউন্সে বল করা যায়। এমন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দেখতে দেখতে কার ভালো লাগে? কিন্তু ম্যাচের শেষ ওভারে যখন পাকিস্তানের ৮ রান দরকার, তখন মাহমুদউল্লাহ হাতে বল তুলে নিলে দর্শকদের মধ্যে হইচই বেড়ে যায়। ২০১৬ সালের বিপিএলে শেষ ওভারে বোলিং করে দুইবার ম্যাচ জেতানোর রেকর্ড আছে মাহমুদউল্লাহ। স্ট্রাইকে থাকা সরফরাজ আহমেদ প্রথম বলে কোনো রান নিতে ব্যর্থ হলে সেই আশার সলতেটাও জ্বলে উঠল। পরের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেট বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিলেন সরফরাজ। রোমাঞ্চ আরও ঘনীভূত হয় ওভারের তৃতীয় বলে হায়দার আলীর আউটে। তিনিও ছক্কার মারার চেষ্টায় ক্যাচ তোলেন লং অনে।

মাহমুদউল্লাহ তখন হ্যাটট্রিকের সামনে, ভোজবাজির মতো পাশার দান যেন মুহূর্তেই পাল্টে গেল। পাকিস্তানের জিততে তখন দরকার ৩ বলে ৮ রান। সদ্য ক্রিজে আসা ইফতেখার আহমেদ হ্যাটট্রিক বলেই বিশাল ছক্কা মেরে বল পাঠিয়ে দেন সাইটস্ক্রিনের ওপারে। পরের বলে রাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়ে বলটি অফ স্ট্যাম্পের অনেকটাই বাইরে ঠেলে দিয়ে ইফরেখারকে ফাঁদে ফেলেন মাহমুদউল্লাহ। সেই বলে ছক্কা মারার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেন তিনি। মিরপুরের গ্যালারিতে তখন প্রত্যাশা আর প্রার্থনা। কিন্তু সেটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। বাঁ হাতি মোহাম্মদ নেওয়াজ ক্রিজে এসে আরেকটি নাটকের জন্ম দিলেন। মাহমুদউল্লাহর শেষ বল থেকে তখন পাকিস্তানের প্রয়োজন ২ রান। বাংলাদেশ অধিনায়ক বল ছুড়লেন ক্রিজের একটু ভেতর থেকে। বল দেখতে পাননি বলে নেওয়াজ স্টান্স ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। মাহমুদউল্লাহর ছোড়া বলটি যদিও নেওয়াজের স্টাম্প ভেঙেছিল। কিন্তু আম্পায়ার তা ডেড বল দিলেন। এরপর মাহমুদউল্লাহ আবারও খেললেন ছোট্ট একটা মনস্তাত্ত্বিক খেলা। নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকা খুশদিল শাহকে ‘মানকাডিং’ করার একটা সুযোগ পেয়েও যেন নিলেন না তা। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ যখন শেষ পর্যন্ত বলটি করলেন, সেটি নেওয়াজ কাভার দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন সীমানার বাইরে। তাতেই ৫ উইকেটের জয় নিশ্চিত হয় পাকিস্তানের।

পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় আগেই নিশ্চিত হয়েছিল আগেই। অর্জনের নেই তেমন কিছু— এমন ম্যাচে নতুন কয়েকজন ক্রিকেটারকে দেখার সুযোগ করে দেওয়াই বরং ভালো। বাংলাদেশ দল নতুন চেহারার পাকিস্তান দলটিকে পেয়েও সুবিধা নিতে পারেনি। আগে ব্যাটিং করে ৭ উইকেটে ১২৪ রানের বেশি করা যায়নি। রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান ভালোই এগোচ্ছিল। এক-দুই, কিংবা ওভার প্রতি একটি করে বাউন্ডারি। জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল পাকিস্তানের। তবে তাদের ইনিংসে প্রথম ছন্দ পতন বাবর আজমের উইকেট। লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলামকে পুল করতে গিয়ে আউট হন তিনি। তাঁর রান ছিল ১৯। এর পরেও মোহাম্মদ রিজওয়ান ও হায়দার আলীর ৪৯ বলে ৫১ রানের জুটিতে জয়ের কাছেই চলে গিয়েছিল পাকিস্তান।কিন্তু ১৬তম ওভারে রিজওয়ানকে নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক শিকার বানিয়ে আউট করেন পেসার শহীদুল ইসলাম। ৪৩ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলেন রিজওয়ান। কিন্তু অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের আউটটাকে চাপ হতে দেননি হায়দার। পরের ওভারেই দুটি ছক্কা মেরে রান রেট নাগালে নিয়ে আসেন তিনি। কিন্তু নাগালে থাকা ম্যাচটিই শেষ ওভারে এসে কঠিন করে জিতেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন ইনিংসের শেষ ওভার করা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। এ ছাড়া আমিনুল ও শহিদুল একটি করে উইকেট নিয়েছেন।

Leave a Comment