দুর্ভোগের খাল শ্যামাসুন্দরী, মেলে না নাগরিক সুবিধা

রংপুর সিটি করপোরেশনের বয়স ৯ বছর হলেও বর্ধিত এলাকাসহ প্রায় ৬০ ভাগ স্থানে এখনো নাগরিক সুবিধা পৌঁছেনি। সেই সঙ্গে শ্যামাসুন্দরী খাল খনন ও পাড় নির্মাণে ৩৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও তা কাজে আসেনি। উল্টো বৃষ্টির পানিতে পাড় ভেঙে খালটি ভরাট হয়ে ময়লা-আবর্জনা, ঝোপজঙ্গলে ভরে গেছে।জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বলেন, বর্ষায় শহরের জলাবদ্ধতা দূর হচ্ছে না এই খাল সংস্কার ও খনন না হওয়ার কারণে। সেই সঙ্গে নগর বাড়ানো হলেও বর্ধিত এলাকার মানুষ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

শ্যামাসুন্দরী, শহরবাসীর দুঃখ
রংপুর নগরের উত্তর-পূর্ব দিকে সিও বাজার এলাকা থেকে শুরু হয়ে শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মাহিগঞ্জ এলাকা ঘাঘট নদের উৎসমুখ পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটারব্যাপী শ্যামাসুন্দরী খাল। এটি খনন, সংস্কার, পাড় নির্মাণ ও খালের ওপর তিনটি সেতু নির্মাণ বাবদ ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দুই দফায় প্রায় ৩৭ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে বৃষ্টিতে পাড় ভেঙে আবার খাল ভরাট শুরু হয়।২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাতভর প্রবল বর্ষণে রংপুরে ৭০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল। পুরো শহর পানিতে তলিয়ে যায়। খালটি খনন করা থাকলে পানিনিষ্কাশন সহজ হতো বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন।

বর্ষায় শহরের জলাবদ্ধতা দূর হচ্ছে না এই খাল সংস্কার ও খনন না হওয়ার কারণে। সেই সঙ্গে নগর বাড়ানো হলেও বর্ধিত এলাকার মানুষ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।খন্দকার ফখরুল আনাম, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতিসম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেল, কাছারিবাজার থেকে ইঞ্জিনিয়ারপাড়া হয়ে সদর হাসপাতালের পেছন দিয়ে গোমস্তাপাড়া সেতু হয়ে কামারপাড়া মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার খাল বেহাল। স্থানে স্থানে কাদা আর ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। সেই সঙ্গে ঝোপজঙ্গলে ভরে গেছে খালের দুই পাড়। কোনো পানিপ্রবাহ নেই। ময়লাপানিতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ময়লার ভাগাড় হয়ে উঠেছে যেন।

কেরানিপাড়া এলাকায় খালপাড়ের একটি সেতুর মুখ ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। কেরানিপাড়া ডিসির মোড়ের পাশে খাল সংস্কার হলেও পাড় ভেঙে গেছে। কেরানিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মানিক মিয়া বলেন, এই খাল নিয়ে এত এত পরিকল্পনা হয়। কিন্তু তা কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এটি এখন দুর্ভোগের খাল হয়ে উঠেছে।খনন, সংস্কার, পাড় নির্মাণ ও খালের ওপর তিনটি সেতু নির্মাণ বাবদ ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দুই দফায় প্রায় ৩৭ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন, খাল পুনঃখনন করে দুই পাড়ে সীমানা দেয়ালের জন্য ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

শ্যামাসুন্দরী খাল প্রসঙ্গে রংপুরের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘আমার আমলে খালের ১৭০টি অবৈধ স্থাপনা ইতিমধ্যে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বর্তমানে খাল সংস্কারের জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাউবো খাল পুনঃখননে একটি উদ্যোগ নিয়েছে।’

নাগরিক সুবিধা বাড়েনি
এদিকে প্রায় ১০ লাখ মানুষের এই নগরে বাড়েনি সেবার মান। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন, পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তোলাসহ আধুনিক নগর গড়ে তোলার কথা বলা হলেও এসবের কিছুই হয়নি বলে নগরবাসীর অভিযোগ আছে।সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সাবেক পৌরসভার আয়তন ছিল ৫২ বর্গকিলোমিটার। তখন ওয়ার্ড ছিল ১৫টি। সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর এর আয়তন বেড়ে হয়েছে ২০৩ বর্গকিলোমিটার। ওয়ার্ড হয়েছে ৩৩টি।

খাল পুনঃখনন করে দুই পাড়ে সীমানা দেয়ালের জন্য ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীবর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ড আদতে এখনো গ্রামই থেকে গেল। নাগরিক সুবিধা বাড়েনি তেমন। নাগরিকদের জন্য পানির সুব্যবস্থা, পয়োনিষ্কাশনের জন্য নালা গড়ে তোলা এবং অধিকাংশ রাস্তা পাকা হয়নি আজও। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তপোধন এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী সামসুল হক বলেন, প্রধান রাস্তাটি পাকা হলেও অধিকাংশ রাস্তা এখনো কাঁচা। সড়কবাতির স্বল্পতা আছে। এত বছরেও নিশ্চিত হয়নি এসব ব্যবস্থা।৮ নম্বর ওয়ার্ডের গুলালগুদাই এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রুস্তম আলী বলেন, ‘আসলে আমরা আগেই (পৌরসভা) ভালো ছিলাম। তখন এত ট্যাক্স (কর) ছিল না। এখন ট্যাক্স দিলেও সিটির সুবিধা পাই না।’

নগরবাসীর অভিযোগ, বর্ধিত এলাকায় আগে ১ শতাংশ জমির ভূমি কর ছিল ৭ টাকা। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর তা তিন গুণ বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা। একতলা পাকা ভবনের কর ছিল প্রতি বর্গফুট ৫ টাকা হারে। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর তা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে।সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন বলেন, নগর উন্নয়নের জন্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। তা না হলে অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ণে ভবিষ্যতে ধরনের সমস্যায় পড়বে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।‘আমার আমলে খালের ১৭০টি অবৈধ স্থাপনা ইতিমধ্যে উচ্ছেদ করা হয়েছে। বর্তমানে খাল সংস্কারের জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাউবো খাল পুনঃখননে একটি উদ্যোগ নিয়েছে।’

রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে। রংপুর উন্নয়ন প্রকল্প যত দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে, ততই এই নগরের জন্য ভালো হবে।বর্ধিত অংশের উন্নয়নের বিষয়ে মেয়র বলেন, কাঁচা রাস্তাগুলো পর্যায়ক্রমে পাকা করা হচ্ছে। পানি সমস্যা দূর করার জন্য অনেক স্থানে পানির পাইপলাইনের কাজ হয়েছে। সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। সিটির নিয়ম অনুযায়ী কর বাড়ানো হয়েছে

Leave a Comment