তিস্তায় হঠাৎ ভয়াবহ বন্যায় রেড অ্যালার্ট জারি

ভারতের ভয়াবহ বন্যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের তিস্তা নদীতে। এতে নীলফামারী ও লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত এলাকা তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার (৫২.৬০) ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে (৫৩.১০) প্রবাহিত হয়। যা সকাল ৯টায় আরও ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার (৫৩.২০) উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা অববাহিকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড রেড অ্যালার্ট (লাল সংকেত) জারি করে মানুষজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য ঘোষণা দিয়েছে।

উজান ও ভাটি অংশ তীব্র স্রোতে নদীর দুই ধারের সকল ফসলি জমি ডুবে গেছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেও তিস্তার পানি সামাল দিতে পারছে না সংশ্লিষ্টতা। এতে তিস্তা ব্যারাজ রক্ষায় উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত ফ্লাড ফিউজ হুমকির মুখে পড়েছে। যে কোনো সময় তা বিধ্বস্ত হতে পারে। এটি ভেঙে গেলে তিস্তা ব্যারাজের সঙ্গে লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারী, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধার সঙ্গে নীলফামারী জেলার সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তিস্তার ভয়াবহ বন্যায় এলাকার হাজার হাজার পরিবার ঘরবাড়ি ছেলে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

কার্তিক মাসে তিস্তা নদীতে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি এলাকাবাসী ১৯৬৮ সালে একবার দেখেছিল। দীর্ঘ ৬২ বছর পর ফের তিস্তায় এমন বন্যা দেখে তিস্তা পাড়ের প্রবীণ ব্যক্তি হাতেম আলী (৮৮) এ কথা জানান। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পানি পরিমাপক নুরুল ইসলাম জানান, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে প্রবাহিত হচ্ছিল। সেই পানি ১২ ঘণ্টায় ১০৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা সকাল ৯টায় আরও ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পায়।

ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে তিস্তা নদীর পানি ভয়ানকভাবে বেড়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি দো-মহনী পয়েন্টে বুধবার সকাল ৬টায় বিপৎসীমার (৮৫.৯৬) ৬৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে (৮৬.৬৩) প্রবাহিত হচ্ছে। সেই পানি সকাল ৭টায় আরও ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুর দুয়ার এলাকা তলিয়ে গেছে। নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, এলাকার জিরো পয়েন্টে তিস্তার ডান তীর ও গ্রোয়েন বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে গ্রোয়েন বাঁধটির উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ওই গ্রোয়েনটি বিধ্বস্ত হলে ডান তীর বাঁধসহ এলাকার শত শত বাড়ি তিস্তা নদীতে ভেসে যাবে।

টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, পরিস্থিতি খুব খারাপ। তিস্তা বাজার, তেলিরবাজার, দোলাপাড়া, চরখড়িবাড়ি এলাকা তলিয়ে গেছে। চরের ফসলের জমি সব পানির নিচে। ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষজন গবাদি পশুসহ নিরাপদে সরে গেছে।খালিশাচাঁপানী ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, কার্তিক মাসের এমন হঠাৎ বন্যা এলাকাবাসীকে পথে বসিয়ে দিচ্ছে। এলাকার ছোটখাতা,বাইশপুকুর, সুপারীপাড়া গ্রাম এখন নদীতে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া নীলফামারীর ডিমলাও জলঢাকা উপজেলার ২২টি চরের ৫০ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা ও পাটগ্রাম কালিগঞ্জ,আদিতমারী উপজেলার দহগ্রাম, সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, ভোটমারী, কাকিনা, অ মহিষখোচা, পলাশী খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী মানুষেরা পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তবে কতগুলো পরিবার পানিবন্দী তা এখনো জানা যায়নি। হঠাৎ তিস্তায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের সবজিসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ফসল ইতিমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী পরিবারগুলো শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

চরাঞ্চলের রমজান আলী (৬৫) জানান, রাতে হঠাৎ তিস্তার পানি বেড়ে যাবে ভাবতে পারিনি। রাতে পরিবার নিয়ে কোথায় যাব ভেবে পাচ্ছি না। পানি উন্নয়নের লোকজন আগে কোনোরকম ঘোষণা দেয়নি যে বাড়ি সরিয়ে ফেলতে হবে। পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে আছি। এদিকে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তার পানির তীব্র স্রোতে কোলকোন্দ ইউনিয়নে বিনবিনা চরে সদ্য নির্মিত স্বেচ্ছাশ্রমের বাঁধের প্রায় আধা কিলোমিটার বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার কারণে তলিয়ে গেছে চাষাবাদকৃত বিভিন্ন ফসল ও হুমকিতে পড়েছে কয়েক গ্রামের বাড়ি ও রাস্তাঘাট।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদ্দৌলা প্রিন্স বলেন, উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রেখেও পানি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। আমরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর রাখছি। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেছে। যে কোনো সময় তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড ফিউজ বিধ্বস্ত হতে পারে। আমরা তিস্তা অববাহিকায় লাল সংকেত দিয়ে মানুষজনকে নিরাপদে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।

Leave a Comment