ঢাবিতে হল প্রাধ্যক্ষের নামে ‘নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি’

শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী নন—এমন অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টারদা সূর্য সেন হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ মকবুল হোসেন ভূঁইয়ার নামে ‘নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি’ সাঁটানো হয়েছে। হল ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে এই বিজ্ঞপ্তি দেখা গেছে। হলটির শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এই বিজ্ঞপ্তি সাঁটিয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই কর্মকাণ্ডকে ‘অরুচিকর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী।গতকাল রোববার সূর্য সেন হলের শৌচাগার ও ক্যানটিনের দেয়াল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্যাডো, মধুর ক্যানটিন ও টিএসসি এলাকায় বিজ্ঞপ্তিটি সাঁটানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে মোহাম্মদ মকবুল হোসেন ভূঁইয়ার ছবি দিয়ে লেখা হয় ‘মিসিং’ (নিখোঁজ)। এর নিচেই লেখা হয় ‘প্রভোস্ট মাস্টারদা সূর্য সেন হল’। হলটির কর্মচারীরা পরে বিজ্ঞপ্তিগুলো ছিঁড়ে ফেলেন।


বিজ্ঞপ্তি সাঁটানোর সময় উপস্থিত ছিলেন—এমন দুজন শিক্ষার্থীর ভাষ্য, সূর্য সেন হলে সম্প্রতি শিক্ষার্থী নির্যাতনের একটি ঘটনা ঘটে। এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে প্রাধ্যক্ষের কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। হলটির ক্যানটিনের খাবার খুবই নিম্নমানের। মশকনিধনে হল প্রাধ্যক্ষের ভূমিকা নেই বললেই চলে। হলে ক্রীড়া সরঞ্জাম নেই। মসজিদে ইমাম নেই। হলের পানির ফিল্টারগুলোর বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। হলের শৌচাগারগুলো খুবই অপরিচ্ছন্ন। হলের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বারবার এসব সমস্যার কথা জানানো হলেও তা সমাধানে প্রাধ্যক্ষের কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। এমনকি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগও রাখেন না তিনি। এর জেরে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞপ্তিটি সাঁটান।সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, বিজ্ঞপ্তিটির পেছনে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক কারণও রয়েছে।

সম্প্রতি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে সূর্য সেন হলের টিভিকক্ষে একটি বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। হল শাখা ছাত্রলীগ সেই অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করে। হল শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক নেতাদের সেই অনুষ্ঠানে ডাকা হয়। কিন্তু হল সংসদ নেতাদের কাউকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এ নিয়ে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হল সংসদ নেতাদের একটি অংশ প্রাধ্যক্ষের ওপর ক্ষুব্ধ। প্রাধ্যক্ষের নামে সাঁটানো বিজ্ঞপ্তিটির পেছনে এই ঘটনারও ভূমিকা আছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, সূর্য সেন হলের প্রাধ্যক্ষ নিখোঁজ হননি। তাঁর সঙ্গে তিনি গতকালও একটি সভা করেছেন। প্রাধ্যক্ষের নামে শিক্ষার্থীদের সাঁটানো হারানো বিজ্ঞপ্তিকে ‘অরুচিকর’ বলে আখ্যা দেন তিনি।


প্রক্টর বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ ধরনের কাজ কেউ প্রত্যাশা করে না। কোনো ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য বা কোনো দাবিদাওয়া থাকলে হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে হবে। কাজটি যাঁরা করেছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, তাঁরা যেন সেগুলো তুলে নিয়ে যান।’মোহাম্মদ মকবুল হোসেন ভূঁইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও ‘নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তির’ বিষয়ে বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

Leave a Comment