১১ খাতে বিনিয়োগ চায় দেশ

১১ খাতে বিনিয়োগ চায় দেশ

শ্রমিকের কম মজুরি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা, পরিকল্পিত শিল্পায়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা—এসব কারণে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের আদর্শ জায়গা। বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া, কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, সমুদ্র অর্থনীতিসহ মোট ১১টি খাত আছে, যেখানে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা আছে। এসব খাতে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা।দুই দিনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রথম দিনে গতকাল রোববার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে এসব বিষয় তুলে ধরেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। তাঁরা বলেন, বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ।

জাতিসংঘের মতে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে ৫০০ বিলিয়ন (প্রতি বিলিয়নে ১০০ কোটি) মার্কিন ডলারের অর্থনীতি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিদেশিদের সামনে এসব চিত্র তুলে ধরে এ দেশে বিনিয়োগের সুবিধা লুফে নেওয়ার আহ্বান জানান সরকারের নীতিনির্ধারকেরা।রাজধানীর র‍্যাডিসন হোটেলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তিনি। আর র‍্যাডিসনে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী, সচিবসহ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। সম্মেলনের প্রথম দিনে পাঁচটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। আজ শেষ দিনে আরও ছয়টি সেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আজ সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শেষ হবে দুই দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন।

এর আগে সবশেষ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজন করেছিল বিডা। দুই বছর পরপর বিনিয়োগ সম্মেলন হওয়ার রীতি থাকলেও প্রায় ছয় বছর পর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করল বিডা। ছয় বছর আগের ওই বিনিয়োগ সম্মেলনে ভারতের আদানি, রিলায়েন্সসহ অন্যান্য দেশ থেকে মোট ১ হাজার ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছিল বাংলাদেশ। যদিও সেটি প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।এবারের সম্মেলন থেকে বড় ধরনের কোনো বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি মিলবে না বলে জানিয়েছেন বিডার কর্মকর্তারা। এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে শুধু বিদেশিদের সামনে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, ভারত, সৌদি আরব, তুরস্ক, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের ১৫টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০০ কোটি ডলারের বা প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। সরকার চাচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে।


দুই দিনের বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন সৌদি আরবের পরিবহনমন্ত্রী সালেহ নাসের আল জাসের। তাঁর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আজ সোমবার মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে যাওয়ার কথা। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে বিনিয়োগ করতে সৌদি সরকারকে দীর্ঘদিন ধরে অনুরোধ জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।এদিকে বাসস জানায়, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিক কূটনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছি। দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি, মুক্তবাণিজ্য চুক্তি এবং সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে কাজ করছি। ভুটানের সঙ্গে পিটিএ স্বাক্ষর করেছি। বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৮টি দেশে একতরফা শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাচ্ছে। ৩৬টি দেশের সঙ্গে দ্বৈত করারোপ পরিহার চুক্তি বলবৎ আছে।’প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অবকাঠামো, পুঁজিবাজার ও আর্থিক সেবা, তথ্যপ্রযুক্তি,ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন, চামড়া, স্বয়ংক্রিয় ও হালকা প্রকৌশল, কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ, পাটবস্ত্র এবং সমুদ্র অর্থনীতি—সম্ভাবনাময় এই ১১ খাতকে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য চিহ্নিত করেছে।


শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে অবকাঠামোসহ সব নীতিগত সহায়তা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ বাংলাদেশ বিশ্বে এখন উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। দেশে ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। আমাদের ১২ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনসম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা আহরণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের আইটি পণ্য রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।’উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, বিনিয়োগ সম্মেলনটি করার উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনার খাতগুলো বিদেশিদের সামনে তুলে ধরা। তিনি বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে গড়ে ৬ শতাংশের ওপরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে ২১ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সরকার বেজা, বিডা, বেপজা, হাইটেক পার্ক করেছে। এসব জায়গায় যে কেউ চাইলে বিনিয়োগ করতে পারবে। বিনিয়োগকারীদের জন্য রয়েছে প্রণোদনা।বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন বলেন, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের অর্জন সত্যিই অভাবনীয়। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বাড়ছে। তবে এখানে আর্থিক খাত ও শিক্ষা খাতে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রধান মার্সি টেম্বন বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন প্রশংসনীয়। এখন সময় এসেছে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সবুজ অর্থনীতির দিকে নজর দেওয়ার।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *