টেনশন দূর করার দোয়া

পারিপার্শ্বিক নানা কারণে আমাদের মধ্যে টেনশনের আবির্ভাব ঘটে। আপনি এইসব টেনশন হতে কিভাবে মুক্ত থাকবেন? আজ জেনে নিন টেনশন দূর করার কয়েকটি দোয়া।

দুনিয়াবি নানা ব্যস্ততার মধ্যেও আপনি যতোই ব্যথিত বা চিন্তিত হোন না কেনো হতাশ হওয়ার কিছু নেই। দুনিয়াতে ভালো-মন্দ অবস্থা সবার জীবনেই আসে- সেটিই স্বাভাবিক। আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা ছিলেন আমাদের নবী-রাসূলগণ (আ.)। তাদেরকেও আল্লাহ সবচেয়ে বেশি বিপদের মুখোমুখি করেছেন। এটি হয়ে থাকে কেবলমাত্র ঈমানী পরীক্ষার জন্য। তাই মাথা ঠাণ্ডা রেখে সঠিক অবস্থানে থাকলে সাফল্য আপনি পাবেনই। আপনার অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থায় তাই মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। এমন কোনো সমস্যায় নিপতিত হলে ছুটে আসুন আল্লাহর দরবারে। তিনি আমাদের সকল সমস্যা ও টেনশন হতে মুক্ত করবেন। আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিপদে পড়তে কয়েকটি দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে এসব দোয়া পড়বে, আল্লাহ তার সকল সমস্যার সমাধান করে দেবেন। যে কারণে আপনার কষ্টের কারণ দূর হয়ে যাবে। আসুন দোয়াগুলো কি জেনে নিই।

দোয়া
ইমাম আহমদ ও তিরমিজি (রহ.) সহিহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, সা‘দ ইবন আবী ওয়াক্কাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মাছের পেটে অবস্থানকালে জুন্নুন বা মাছওয়ালা তথা ইউনুস (আ.) যে দোয়া পড়েছেন, এটি যে কোনো মুসলমান যে কোনো সময় পড়বে, আল্লাহ অবশ্যই তার দোয়া কবুল করবেন।’ (তিরমিজি : ৩৫০৫; মুসনাদ আহমাদ : ১৪৬২)।

দোয়াটি (আরবী) হলো–

لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

বাংলা উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা ছুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যোলিমীন।

এর অর্থ হলো : ‘আপনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, আপনি সপ্রশংস মহান, নিশ্চয় আমি জুলুমকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’

দোয়া
ইমাম আহমদ (রহ.) আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বিপদ বা দুশ্চিন্তায় এই দোয়াটি পড়বে, আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা দূর করবেন এবং তার বিষাদকে আল্লাহ্ আনন্দে পরিণত করে দেবেন।’ (মুসনাদ আহমাদ : ৪৩১৮)।

দোয়াটি (আরবী) হলো–

اللَّهُمَّ إِنِّي عَبْدُكَ، وَابْنُ عَبْدِكَ، ابْنُ أَمَتِكَ، نَاصِيَتِي بِيَدِكَ، مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ، عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ، أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ، سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِي كِتَابِكَ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ، أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِي عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ، أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيعَ قَلْبِي، وَنُورَ صَدْرِي، وَجِلَاءَ حُزْنِي، وَذَهَابَ هَمِّي

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নী আব্দুকা অবনু আব্দিকা অবনু আমাতিকা, না-সিয়াতী বিয়য়াদিকা, মা-দ্বিন ফিইয়্যা হুকমুকা, আদলুন ফিইয়্যা ক্বাদ্বা-উকা, আসআলুকা বিকুল্লিস্মিন হুয়া লাকা সাম্মাইতা বিহী নাফসাকা আউ আনযালতাহূ ফী কিতাবিকা, আউ আল্লামতাহূ আহাদাম মিন খালক্বিকা, আও ইস্তা’সারতা বিহী ফী ইলমিল গাইবি ইন্দাক; আন তাজআলাল ক্বুরআনা রাবীআ ক্বালবী অনূরা সাদরী অজিলাআ হুযনী অযাহাবা হাম্মী।

এর অর্থ হলো : হে আল্লাহ, নি:সন্দেহে আমি তোমার দাস, তোমার দাসের পুত্র এবং তোমার দাসীর পুত্র, আমার ললাটের কেশগুচ্ছ তোমার হাতে। তোমার বিচার আমার জীবনে বহাল। তোমার মীমাংসাও আমার ভাগ্যলিপিতে ন্যায়সঙ্গত। আমি তোমার নিকট তোমার প্রত্যেক সেই নামের অসিলায় প্রার্থনা করছি- যে নাম তুমি নিজে নিয়েছো, বা তুমি তোমার গ্রন্থে অবতীর্ণ করেছো, বা তোমার সৃষ্টির মধ্যে কাওকে তা শিখিয়েছো, বা তুমি তোমার গায়বি ইলমে নিজের নিকট গোপন রেখেছো, তুমি কুরআনকে আমার হৃদয়ের বসন্ত করো, আমার বক্ষের জ্যোতি করো, আমার দুশ্চিন্তা দূর করার ও আমার উদ্বেগ চলে যাওয়ার কারণ বানিয়ে দাও।

দোয়া
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) হতে সহিহ বুখারি এবং মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, নবী (সা.) বিপদের সময় বলতেন :

দোয়াটি (আরবী) হলো–

«لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ العَلِيمُ الحَلِيمُ، لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ العَرْشِ العَظِيمِ، لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الأَرْضِ رَبُّ العَرْشِ الكَرِيمِ»

বাংলা উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আলীমুল হালীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আযীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়ারাব্বুল আরদি ওয়ারাব্বুল আরশিল কারীম।

এর অর্থ হলো : আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য মাবুদ নেই; যিনি সর্বজ্ঞ, সহিষ্ণু। আল্লাহ্ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; যিনি মহান আরশের প্রতিপালক। আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য আরাধ্যও নেই; যিনি আকাশমণ্ডলি, পৃথিবী এবং সম্মানিত ‘আরশের অধিপতি। (সহিহ বুখারি : ৭৪২৬)।

উপরোক্ত দোয়াতেই আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা, অংশীদারিত্বের অস্বীকৃতি এবং নিজের যাবতীয় ভুলের স্বীকারোক্তিও রয়েছে। তাই নিজের দোয়া কবুলের জন্য এই দোয়াগুলোর বৈশিষ্ট্য রক্ষা করতে চাইলে অবশ্যই আপনার যে কোনো টেনশন-পেরেশানি দূর হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর রহমত ছাড়া আমরা কখনও দুনিয়াতে এবং আখিরাতে কামিয়াবি হতে পারবো না। তাই সব সময় বিপদে আপদে তাঁকেই স্মরণ করতে হবে এবং তাঁর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে হবে।

Leave a Comment