জাপানী শিশু দুটিকে পারিবারিক পরিবেশে রাখতে একমত মা–বাবা

জাপান থেকে আসা দুই শিশুকে পারিবারিক পরিবেশে রাখার ব্যাপারে একমত মা-বাবা। তবে সেটা কবে বা কীভাবে, সে সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি তাঁরা। তাই শিশুদের এখনো থাকতে হচ্ছে পুলিশি হেফাজতের উইমেন সাপোর্ট সেন্টারে।

আজ রোববার জাপানি নাগরিক এরিকো নাকানোর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, তাঁরা সমঝোতায় পৌঁছাননি। তবে সমঝোতার কাছাকাছি পৌঁছেছেন। দুই পক্ষই শিশুদের পারিবারিক পরিবেশে রাখার ব্যাপারে একমত। আজই সন্ধ্যার কিছু পর শিশুদের বাবা ইমরান শরীফের আইনজীবীর সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে।

এ নিয়ে আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে কথা হতে পারে। তাঁরা চান একটি ফ্ল্যাটে সন্তানদের রাখার ব্যবস্থা করতে, যেখানে মা–বাবা দুজনেই দেখা করার সুযোগ পাবেন। তবে মা এরিকো নাকানো একটু বেশি সময় থাকতে চান। তিনি সন্তানদের সঙ্গে রাতে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছেন।

অন্যদিকে শিশুদের বাবা ইমরান শরীফ বলেছেন, সমঝোতার পথে এক পাও এগোননি তাঁরা। বৃহস্পতিবার দুই পক্ষের আইনজীবী, তিনি ও তাঁর স্ত্রী বৈঠকে বসেছিলেন। তাঁর স্ত্রীর দিক থেকে সমঝোতার কোনো ইঙ্গিতই ছিল না।
ইমরানের মতে, এরিকো নিশ্চিত যে তিনি মামলায় জিতে যাবেন এবং সন্তানদের নিয়ে টোকিও চলে যাবেন। প্রথম থেকেই তিনি সন্তানদের জাপান দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় রাখতে চাইছেন। তাহলে তিনি আর সন্তানদের দেখতে পাবেন না।

এর বাইরেও আজ ইমরান শরীফ একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন। তাতে তিনি অভিভাবক অধ্যাদেশ আইন ১৮৯০–এর ৭ ধারা ও রাষ্ট্রপতির আদেশ/ নাগরিকত্ব আদেশ-১৯৭২–এর ধারা ২–এর উল্লেখ করেছেন। তিনি মনে করেন, অভিভাবকত্ব আইন মানা হলে তিনিই সন্তানদের পাবেন। সন্তানদের নিয়ে এরিকো জাপানে চলে গেলে তিনি আর সন্তানদের নিয়মিত দেখতে পাবেন না এই আশঙ্কা থাকে।

ইমরান শরীফ বলেন, এরিকো নাকানো বাংলাদেশে থেকে যেতে চাইলে তিনি তাঁকে স্বাগত জানাবেন। এ ব্যাপারে তাঁর কোনো আপত্তি নেই। তাঁর তৃতীয় সন্তান জাপানে নানির কাছে আছে। তিনি তার সঙ্গে দেশে আসার পর থেকে কথাও বলতে পারেননি।

২০০৮ সালে ইমরান শরীফ ও এরিকো নাকানো জাপানের টোকিওতে বিয়ে করেন। তাঁদের তিনটি সন্তান আছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা, ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে বিরোধের জেরে এরিকো বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। ইমরান এ সময় তাঁর দুই সন্তানকে নিজের কাছে এনে রাখেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন ইমরান। পরে সন্তানের জিম্মা চেয়ে তিনি বাংলাদেশের আদালতে মামলা করেন।

এদিকে জাপানের আদালত এ বছরের মে মাসে এরিকোর অনুকূলে সন্তানদের দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ পেয়ে এরিকো বাংলাদেশে আসেন। ৩১ আগস্ট সন্তানসহ ইমরানের আদালতে হাজির হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই সিআইডি ইমরানের বারিধারার বাসা থেকে সন্তানদের নিয়ে উইমেন সাপোর্ট সেন্টারে রাখে। আদালতের নির্দেশে এই শিশুরা প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত মায়ের সঙ্গে এবং ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত থাকছে বাবার সঙ্গে।

Leave a Comment