গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন

গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নগরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন

সৌন্দর্যের সংজ্ঞা ব্যক্তিভেদে একেবারে আলাদা। তবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক সবারই কাম্য। জেনেটিক বৈশিষ্ট্য, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি নানাবিধ কারণে ত্বকের ধরন একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়। আবার শীতে ত্বক যেমন বেশি শুষ্ক থাকে, তেমনি গরমে অনেকের ত্বক হয়ে ওঠে অতিরিক্ত তৈলাক্ত। এই সমস্যা নিয়ে অনেক বিপাকে পড়তে হয়। কারণ, তৈলাক্ত ত্বকে ময়লা আটকে যায় দ্রুত, লোমকূপ বন্ধ হয়ে যায়, ব্রণ বা পিম্পল হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায় দ্বিগুণ। গরমে এই অবাধ্য তেলতেলে ত্বককে কীভাবে নিজের বাধ্যগত করবেন, তা নিয়ে রইল কিছু টিপস। ধৈর্য নিয়ে মাত্র পাঁচটি ধাপ মেনে চললেই হবে।

অয়েল কন্ট্রোল ক্লিনজার ব্যবহার করুন

গরমে সবচেয়ে কাছের ও উপকারী বন্ধু হলো পানি। পান তো করতে তো হবেই, সেই সঙ্গে নিয়মিত ভালোভাবে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে মুখ ধুতেও হবে। অতিরিক্ত গরমে ঘামে ত্বকে চিটচিটে অনুভূতি হয়। ঘাম ও বাইরের ধুলাবালু মুখে আটকে গেলেই ত্বকে অ্যালার্জি, ব্রণ, র‍্যাশ ও পিম্পল রাজত্ব শুরু করে। এসব থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই সারা দিনে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ ধুতে হবে। গরমে মুখে পানির ঝাপটা দিতেও আরাম লাগে। ঘরের বাইরে ব্যবহার করা যেতে পারে বোতলে পানির স্প্রে বা মিস্ট। ত্বক পরিষ্কার রাখার ক্ষেত্রে এমন ক্লিনজার বেছে নিন, যা তেল নিয়ন্ত্রণ করে। বাজারে অনেক ফেসওয়াশ পাওয়া যায়। পিএইচের মান কম, এমন ওয়াটার বেজড ফেসওয়াশ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভালো। টি-ট্রি অয়েল, অ্যালোভেরা কিংবা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড আছে, এমন ফেসওয়াশগুলোও বেছে নিতে পারেন আপনার তৈলাক্ত ত্বকের জন্য।

এরপর টোনার

যাঁদের তৈলাক্ত ত্বক, তাঁদের জন্য শুধু ত্বক ক্লিনজিং করলেই হয় না। এরপর অবশ্যই যেটা মুশকিল আসান হিসেবে কাজ করে তা হলো টোনার। এটি তৈলাক্ত ত্বকের গভীরের ময়লাগুলো পরিষ্কার করে। এ ধরনের ত্বকের জন্য রূপবিশেষজ্ঞরা স্যালিসাইলিক ও গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত টোনার ব্যবহার করতে বলেন। এ ছাড়া নিম, তুলসী ও শসার মতো অর্গানিক টোনারও ব্যবহার করতে পারেন। গরমে এই উপাদানগুলো ত্বককে জীবাণুমুক্ত রাখতেও সাহায্য করে।

ময়েশ্চারাইজিং সব সময়

তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং, তা-ও আবার এই গরমে? এ কথা অনেকে ভাবতেই পারেন না। কিন্তু একটু পড়াশোনা করলেই জানা যাবে, শীতের দিনের মতো গরমের ত্বকে ময়েশ্চারাইজারের প্রয়োজন হয়। তৈলাক্ত ত্বককেও হাইড্রেটেড রাখতে হয়। তৈলাক্ত ত্বকের সবচেয়ে বড় বন্ধু গ্লাইকোলিক অ্যাসিড নামের উপাদানটি। এই অ্যাসিড ত্বকে কোলাজেন তৈরি করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে কোলাজেন কম তৈরি হতে থাকে। রোদে বেশি সময় কাটালেও কোলাজেন নষ্ট হয়ে যায়। প্রতিদিন গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে এসব সমস্যার সমাধান তো হবেই, একই সঙ্গে তেলতেলে ভাব ও বলিরেখাও কমবে। এ ছাড়া হায়ালুরোনিক অ্যাসিডযুক্ত ময়েশ্চারাইজার তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সেরা সমাধান হতে পারে। ত্বকের তেলভাব ব্যালেন্স করে এই অ্যাসিড। স্যালিসাইলিক অ্যাসিডও তৈলাক্ত ত্বকের বন্ধু। এসব উপাদান দেখে ও স্কিন টাইপ বুঝে ময়েশ্চারাইজার কিনুন। আরেকটি জিনিস খেয়াল রাখবেন। তৈলাক্ত ত্বকে সব সময় লাইটওয়েট ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হয়। সঙ্গে এসপিএফ থাকলে আরও ভালো হয়। ত্বকে কোনো ধরনের সমস্যা থাকলে অবশ্যই আগে টেস্টার দিয়ে হাতে লাগিয়ে পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে স্কিন কেয়ার এক্সপার্টের সঙ্গে কথা বলে নিন।

গরমের বন্ধু সানস্ক্রিন

এই গরমে সানস্ক্রিনের কথা ভুলে গেলে কিন্তু একদমই চলবে না। নতুন করে এর উপকারিতার কথা না বললেও হয়। তবে তৈলাক্ত ত্বক যাঁদের, তাঁদের ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া উচিত ওয়াটার বেজড সানস্ক্রিন। সূর্যের রশ্মির কারণে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘরে কিংবা বাইরে, যেখানেই থাকুন, সানস্ক্রিন একেবারে অত্যাবশ্যকীয়। বাইরে বের হওয়ার আধঘণ্টা আগে সানস্ক্রিন লাগালে ঠিকমতো ত্বকে বসবে। থাকবে অনেকক্ষণ।

সঠিক লাইফস্টাইল

জীবনধারার প্রভাব স্কিনের ওপর পড়ে। শুধু বাইরে থেকে ত্বকের পরিচর্যা করলেই হবে না, ভেতরের রুটিনও ঠিক রাখতে হবে। তাই প্রয়োজন সঠিক ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন। সবার আগে চলে আসে খাদ্যাভ্যাসের কথা। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। মৌসুমি ফল খেতে হবে। যে ফলে পানির পরিমাণ বেশি, সেগুলো খেলে ত্বকের ডি-হাইড্রেশন হবে না। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম শরীর ও মনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর প্রভাব ত্বকেও পড়ে। ঘুম কম হলে চোখের নিচে কালো দাগ হয়ে যায়। রাতে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন হয়। সকাল শুরু করুন শরীরচর্চার মাধ্যমে। সব সময় নেতিবাচক চিন্তা করবেন না। কারণ, দুশ্চিন্তা কিংবা স্ট্রেস ত্বকে বিরূপ প্রভাব ফেলে। গরমে তেলজাতীয় খাবার এড়িয়ে যান। এতে ব্রণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মনে রাখবেন, আপনার সঠিক লাইফস্টাইলের ওপর নির্ভর করে আপনার ত্বকের সৌন্দর্য ও সুস্থতা।

জারা’স বিউটি লাউঞ্জ অ্যান্ড স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ ফারহানা রুমির কিছু পরামর্শ রইল পাঠকদের জন্য…
দিনে অন্তত দুইবার সঠিক পদ্ধতিতে মাইল্ড ফেসওয়াশের সাহায্যে মুখ পরিষ্কার করা জরুরি। ডি-হাইড্রেশনের কারণে ডেড স্কিন সেল রিমুভাল রেট অনেক স্লো হয়ে যায়। ফলে ত্বকের যত্ন নিতে স্কিনের ধরনভেদে সপ্তাহে এক থেকে তিন দিন পর্যন্ত স্ক্রাবিং করুন। স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন টমেটো ও চালের গুঁড়া। তবে একটি বিষয় লক্ষ করতে হবে, দুইবারের বেশি ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে যাবেন না। কেননা, এতে স্কিন আরও ড্রাই ও ডি-হাইড্রেটেড হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব কমানোর জন্য মুখ ধোয়ার পর টোনার বা রোজওয়াটার ব্যবহার করলে আরও ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। ত্বকের যত্ন নিতে স্কিনকে পানিশূন্যতা থেকে বাঁচাতে এবং স্কিনের ঔজ্জ্বল্য ও তারুণ্য ধরে রাখতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা জরুরি।

গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন
গরমে তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন

গরম ও আর্দ্রতার কথা মাথায় রেখে একটি ওয়াটার বেজড বা জেল ফর্মুলার ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন। রোদে বেরোনোর জন্য সানব্লকসমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন, ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিবার ত্বক ধুয়ে নিয়ে হবে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালো করে ত্বক পরিষ্কার করে তারপরই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। আরেকটি বিষয়, অতিরিক্ত গরমে অনেকেরই একটি সাধারণ সমস্যা হয় তা হলো ‘ওপেন পোরস’ ত্বকের টি জোন বা দুই পাশে এবং থুতনিতে পোরস বড় হয়ে যায়, সে ক্ষতে ত্বকে সব সময় আইস থেরাপি নিতে হবে, এতে ধীরে ধীরে পোরস মিনিমাইজ হবে। মুখে স্ক্রাবিং করার পর মুখ ধুয়ে টোনার এবং টোনার ত্বকে সেট হলে একটি ভালো মানের সিরাম ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত সিরাম ব্যবহারে ত্বক হেলদি হয় এবং পোরস মিনিমাইজ হয়ে যায়। দিনে ডে ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার ও রাতে ভিটামিন ই-সমৃদ্ধ নাইট ক্রিম ব্যবহারে ত্বক হেলদি ও উজ্জ্বল থাকবে।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *