গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার উপায়

প্রচন্ড গরমে নাজেহাল অবস্থা সবার। দিনের বেলা তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে।গ্রামাঞ্চলে বড় গাছের ছায়ায় শীতল হাওয়ার পরশ পাওয়া গেলেও শহরে তা পাওয়া দুষ্কর। ক্রমাগত গাছ কেটে দালান তৈরি করা হয় শহরে। যার কারণে শহরে গরম যেন আরও বেশি। এই গরমে ঘরকে ঠান্ডা রাখার জন্য এয়ার কন্ডিশনার বা এয়ার কুলারের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। কিন্তু এগুলো যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর।

ঘরে গাছ লাগানো:
ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য বারান্দায় ও রুমের কোণে বিভিন্ন গাছ ও ইনডোর প্ল্যান্ট লাগানো যায়। ছায়া দিতে পারে এমন গাছ পূর্ব-পশ্চিম অনুযায়ী লাগালে ভালো, এতে ঘরে সরাসরি সূর্যের তাপ ঢুকতে বাধা পাবে। বারান্দায় বিভিন্ন ফুল গাছ থাকলে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও ফল বা সবজী গাছ লাগালে খাদ্য উৎপাদন ও হবে।

 

 

জানলার চারপাশে ঘাসজাতীয় গাছ লাগালেও ঘর ঠান্ডা থাকবে। অ্যালোভেরা, বস্টন ফার্ন, স্নেক প্ল্যান্ট, চাইনিজ এভারগ্রিন, মানি প্ল্যান্ট, উইপিং ফিগ, অ্যারিকা পাম ইত্যাদি গাছ রাখলে ঘর ঠান্ডা থাকবে। ঘরের মধ্যে গাছ রাখলে তা দেখতেও সুন্দর লাগে, তাপও শুষে নেয়। ঘরে গাছ রাখলে ঘরের মধ্যে তাজা অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। তাই গরমে অন্দরসজ্জায় গাছ ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।

জানালায় ভারী পর্দা :

ঘরে রোদ আটকানোর জন্য ভারী পর্দা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সূর্যের আলো যাতে রুমের ভেতর সরাসরি প্রবেশ করে রুম গরম করতে না পারে সেজন্য জানালায় ভারী পর্দা ব্যবহার করা উচিত। হালকা পর্দা রোদ আটকায় কম।

এখন বাতাসে আর্দ্রতা অনেক কম। যার ফলে সূর্যের আলো না ছড়িয়ে সরাসরি ভূ-পৃষ্ঠে আসছে বলে রোদের তেজ অত্যন্ত প্রখর৷ সকালের মিষ্টি রোদ বেশিক্ষণ থাকে না এখন। সকাল ১১টার পরেই জানালা বন্ধ করে ভারী পর্দা টেনে দিতে হবে। এতে ঘরে তাপ কম ঢুকবে। সূর্যাস্তের সময় বা রাতে পর্দায় হালকা পানি স্প্রে করে জানালা খুলে দিলে সুন্দর ঠান্ডা বাতাস ঢুকবে ঘরে। ঘরে দুই লেয়ারের পর্দা ব্যবহার করা যায়। এতে ঘরে সূর্যের তাপ ঢুকবে না। রোদের তীব্রতা বাড়তে শুরু করলে পর্দা দু’টি টেনে দিতে হবে।

 

বরফ ব্যবহার করা :
ঘর ঠান্ডা রাখার এক সহজ উপায় হলো বরফ বা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা। ফ্যানের নিচে বা সামনে বরফভর্তি বালতি রেখে ফ্যান চালিয়ে দিতে হবে। বরফ না থাকলে এক বালতি ঠান্ডা পানি রেখেও ফ্যান চালানো যায়, এতে গরম কিছুটা হলেও কমবে৷ কিছুক্ষণ পর যখন বরফগুলো গলতে শুরু করবে, তখন বাতাস ঠান্ডা পানি শোষণ করবে এবং চারদিকে ছড়িয়ে দেবে। ফলে, বরফের জন্য ফ্যানের বাতাস ঠান্ডা হবে এবং সারা ঘরে ঠান্ডা বাতাস ছড়াবে।

 

বিছানার চাদর :
রুমের আসবাবে যত হালকা রঙ এর কাপড় ব্যবহার করা যায় তত ভালো হয়। বিছানার চাদর, বালিশের কভারে ব্যবহার করতে হবে সাদা কিংবা হালকা রঙ এর সুতির কাপড়৷ বিছানার চাদর মোটা হলে ঘাম বেশি হয়। সাদা ও হালকা রঙের উপাদান তাপ শোষণ করে না, বরং প্রতিফলিত করে। লিনেন এর বেডশিটও ব্যবহার করা যায়।

 

খুব গাঢ় রং কিংবা ভারি কাপড়রে বদলে প্যাস্টেল শেডের চাদরও বেছে নেয়া যায়। এতে দেখতে ভালো লাগবে, চোখের পক্ষেও আরামদায়ক হবে।

ঘরের সাজসজ্জা :
ঘরে আসবাবপত্র বেশি থাকলে কিংবা অগোছালো থাকলে তা রুমে যেমন ঘিঞ্জি, গুমোট পরিবেশ সৃষ্টি করে, তেমনি অস্বস্তিতে নিজের আরও বেশি খারাপ লাগা শুরু হয়৷ তাই আসবাবপত্র রাখতে হবে সীমিত ও গোছানো। এতে করে দেখতেও ভালো লাগবে, আর ঘরে হাওয়া চলাচল নির্বিঘ্ন হবে।

 

ড্রইংরুমে বড় কার্পেট থাকলে তুলে রাখা ভালো। তার বদলে মেঝেতে জুটের বা মাদুরের লম্বা চাটাই পেতে দিলে শীতল হবে ঘর। ঘরের ছাদ ও কার্নিস অঞ্চলগুলো সাদা রং করে নেয়া যায়। কারণ সাদা রঙ তাপ শোষণ করে না, বরং প্রতিফলিত করে। তাই সাদা রঙ সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মিকে প্রতিফলিত করবে ও বাড়িকে প্রাকৃতিকভাবে শীতল রাখবে।

 

 

দিনের বেলা যতটুকু পারা যায় ঝকঝকে লাইটের ব্যবহার কমাতে হবে, যাতে বাল্বের তাপ ঘর গরম না করে। এতে করে ঘরের গরম আবহাওয়া কিছুটা হলেও কমবে। আর বাতি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এনার্জি সেভিং বাল্ব ও এলইডি লাইট ব্যবহার করা উচিত ৷

 

ডিসওয়াশার, ওয়াশিং মেশিং, ড্রায়ার এমনকি মোবাইল চার্জার ইত্যাদি ছোটখাট যন্ত্রও ঘরের তাপ মাত্রা বাড়ায়। তাই এসকল যন্ত্র ব্যবহার হয়ে গেলে তা বন্ধ করে রাখতে হবে। চুলার গরম ঘরকে আরও উষ্ণ করে তোলে। তাই কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত চুলা বন্ধ করে দেওয়া ভালো। এতে ঘর বাড়তি গরম হবে না।

Leave a Comment