ছাত্রীকে ধর্ষণ ও আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের চতুর্থ দিনে নিজেদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তাঁরা। আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ রাজু বলেন, ‘গতকাল শনিবার থেকে ধর্ষকদের দোসররা ফোন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে। ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরে—সবখানেই হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রশাসনের দায়িত্ব আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিষয়টি গণমাধ্যমের সাহায্যে আমরা সবাইকে জানিয়ে রাখছি।’আবদুল্লাহ রাজু আরও বলেন, গোপালগঞ্জের নানা মহল থেকে ধর্ষণের শিকার ছাত্রীকে নানাভাবে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। বলছে ভুক্তভোগীর দোষেই নাকি তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ভুক্তভোগীকে দোষারোপের এমন ঘৃণ্য চর্চা বন্ধ করতে হবে। চলমান আন্দোলন শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয়, এই আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের সমন্বিত আন্দোলন।
সংবাদ সম্মেলনে ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবিদা সুলতানা বলেন, ‘ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ আমরা এ আন্দোলন থেকে উঠব না। জেলা প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা কোনোভাবে নিশ্চিত করতে পারছে না। তাই আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ এ সময় তিনি গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ সাজা কার্যকরের দাবি জানিয়ে বাকি তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের বেঁধে দেওয়া ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে জনসমক্ষে তাঁদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা ও সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী স্থানীয় লোকজনকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ক্যাম্পাসে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বহিরাগতদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করা এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রশাসন, পুলিশ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভূমিকা সম্পর্কে অবহিত করা ও সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া।
গত বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ও এক ছাত্রী গোপালগঞ্জ শহরের হেলিপ্যাড থেকে নবীনবাগের দিকে ফিরছিলেন। এ সময় চার থেকে পাঁচজন দুর্বৃত্ত তাঁদের গতি রোধ করে। দুর্বৃত্তরা ছাত্রকে মারপিট করে ওই ছাত্রীকে পাশের নির্মাণাধীন জেলা প্রশাসন স্কুল ও কলেজ ভবনে নিয়ে ধর্ষণ করে। রাতে ধর্ষণের খবর ক্যাম্পাসে পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা গোপালগঞ্জ থানা ঘেরাও করেন। এ ঘটনায় ছয়জন আসামিকে র্যাব ও তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।