‘আগামী নির্বাচনে যদি ১০ মার্ডারও হয়, আমি সিরাজুল মাঠ থেকে সরব না’

নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের সাবেক সাংসদ সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেছেন, ‘সামনে নির্বাচন আসবে, যদি সেই নির্বাচনে ১০টি মার্ডারও হয়, আমি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা মাঠ থেকে সরব না। আর আপনারা কেন্দ্র ছাড়বেন না। যত কিছু হোক না কেন। প্রশাসনের লোক বলেন আর দলীয় বলেন, সবকিছুই কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমার পক্ষে মেনটেইন করা সম্ভব।’

শিবপুর উপজেলা যুবলীগ আয়োজিত একটি আলোচনা সভায় মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে এমন বক্তব্য দিয়েছেন সাবেক সাংসদ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে শিবপুরের ইটাখোলায় যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ওই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। সিরাজুল ইসলাম মোল্লার এই বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকসহ অনলাইনে ছড়িয়ে পড়লে নরসিংদী ও শিবপুরে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। অনেকে তাঁর এমন বক্তব্যকে উসকানি হিসেবে দেখছেন।

সাবেক এই সাংসদ তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, ‘আমি সাংসদ থাকাকালীন শিবপুরে কী উন্নয়ন হয়েছে, আর বর্তমানে কী উন্নয়ন হচ্ছে আপনারা তা দেখছেন। ইটাখোলা-সিঅ্যান্ডবি, শিবপুর-দুলালপুর, কামরাব রাস্তা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারতলা ভবন এবং উপজেলা প্রশাসন ভবন, নদী খনন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ আমার মাধ্যমেই হয়েছে। বাংলাদেশের ১৪টি আদর্শ উপজেলার মধ্যে শিবপুর উপজেলার নাম আমি অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম।’

বক্তব্যের একপর্যায়ে মঞ্চে উপস্থিত জেলা যুবলীগের সভাপতি বিজয় গোস্বামী দাঁড়িয়ে সিরাজুল ইসলাম মোল্লার কানে কিছু একটা বলার পর বর্তমান সরকারের উন্নয়ন নিয়ে বক্তব্য শুরু করেন তিনি।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সাংসদ সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘একটি মহল নির্বাচন এলেই সহিংসতা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করে। তাই সামনের নির্বাচনে যদি ১০টি মার্ডারও হয়, তাহলেও কর্মী-সমর্থকেরা যেন মাঠ ছেড়ে না যায়, সেই আহ্বান করেছি। যাতে কেউ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকতে আমি এমন বক্তব্য দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। কেউ যাতে হত্যার রাজনীতি করতে না পারেন, তাঁদের হুঁশিয়ারি দেওয়াই আমার এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য।’

যদিও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান উল্টো কথা। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে হাঁস প্রতীকে নির্বাচন করে সাংসদ হয়েছিলেন সিরাজুল ইসলাম। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীকে নির্বাচন করেন তিনি। সেবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন জহিরুল হক ভূঁইয়া। ওই নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন উপজেলার কুন্দারপাড়া এলাকার একটি কেন্দ্রে মিলন মিয়া নামের আওয়ামী লীগের প্রার্থীর একজন এজেন্ট খুন হন। পরে নৌকার প্রার্থী জহিরুল হক ভূঁইয়ার কাছে হেরে যান সিরাজুল ইসলাম।

ওই ঘটনায় ২ জানুয়ারি হত্যাকাণ্ডের শিকার মিলনের স্ত্রী পারভীন বেগম বাদী হয়ে শিবপুর থানায় সাবেক সাংসদ সিরাজুল ইসলাম ও তাঁর ছোট ভাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুর আলমসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পরে আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান সিরাজুল ইসলাম ও তাঁর ছোট ভাই মাহবুবুর আলম মোল্লা তাজুল।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খান বলেন, শিবপুরের আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য সিরাজুল ইসলাম ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন। পরপর দুবার নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করায় তিনি এখন হয়তো বুঝতে পেরেছেন আওয়ামী লীগ থেকে কখনো মনোনয়ন পাবেন না। তাই আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার লক্ষ্যে কর্মী-সমর্থকদের এসব উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন তিনি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘সিরাজুল ইসলাম মোল্লা সব সময়ই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করেছেন। আগামী নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা হিসেবেই এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। আমি তাঁর এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

Leave a Comment