সরকার স্বৈরাচারী হলে জনতাও শক্তিনির্ভর পথে যায়ঃ চরমোনাই পীর

কুমিল্লার পূজামণ্ডপে ঘটনার সূত্রপাত থেকে পরবর্তী প্রতিটি ঘটনায় প্রশাসনের ব্যর্থতা স্পষ্ট বলে অভিযোগ করেছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেছেন, ৫০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে এ ধরনের ব্যর্থতা কল্পনাতীত। অতিমাত্রায় দলীয়করণের কারণে প্রশাসনে এই অদক্ষতা তৈরি হয়েছে।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে আজ শনিবার দুপুরে পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম এ কথা বলেন।
সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল বলেন, দেশে যখন একদলীয় শাসন চলে এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে যখন সরকার কোণঠাসা করে রাখে, তখন অনিয়ন্ত্রিত বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়া একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে তারই বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে। তা ছাড়া সরকার যখন স্বৈরাচারী ও শক্তিনির্ভর হয়, তখন যেকোনো সামাজিক সমস্যার সমাধানে জনতার মধ্যেও শক্তিনির্ভর পন্থার প্রাবল্য দেখা দেয়।

সম্প্রতি একজন প্রতিমন্ত্রী যেভাবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন, তাতে মানুষের ক্ষোভ আরও বেড়েছে।

‘গণবিক্ষোভ’ দমনে পুলিশের গুলি চালানোর সমালোচনা করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির। তিনি বলেন, কুমিল্লার ঘটনার পর জনরোষ তৈরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক এবং সেই রোষে মানুষ বিক্ষোভ করবে, তা-ও স্বাভাবিক। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর অল্পতেই এমন চরমপন্থা গ্রহণ করার প্রবণতা জনস্বাধীনতা, নাগরিক বোধ ও সভ্যতার জন্য ভয়ের কারণ। যার ফলে চাঁদপুরে পুলিশের গুলিবর্ষণ পাঁচজনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। এর আগে ভোলায়, হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেও একই ঘটনা ঘটেছে।

কুমিল্লার ঘটনা–পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেশী দেশের গণমাধ্যম ও সরকারি দলের নেতাদের প্রতিক্রিয়ারও সমালোচনা করেন চরমোনাই পীর। তিনি বলেন, তাঁদের এই ধরনের আগবাড়ানো প্রতিক্রিয়া আধুনিক জাতি রাষ্ট্রের নীতি-নৈতিকতার লঙ্ঘন এবং এর অন্তরালে ভূরাজনীতির নোংরা কৌশলের আভাস পাওয়া যায়। প্রতিবেশী দেশকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলাতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর বার্তা দিতে হবে। পাশাপাশি দেশের একশ্রেণির সংবাদমাধ্যম, রাজনৈতিক সংগঠন ও সুশীল সমাজও যেভাবে কুমিল্লার ঘটনাকে ধর্মকে কেন্দ্র করে একচোখা বয়ান দাঁড় করিয়েছে, তা হতাশাজনক। এটি বন্ধ করতে হবে।

চরমোনাই পীর ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন, ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি সরকারিভাবে নির্মাণ, পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান, তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার করাসহ ১০ দফা দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ; প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানি, খন্দকার গোলাম মাওলা, মাহবুবুর রহমান; যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, আমিনুল ইসলাম ও আশরাফুল আলম; সহকারী মহাসচিব আবদুল কাদের, ইমতিয়াজ আলম ও কে এম আতিকুর রহমান; কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ বেলায়েত হোসেন; আহমদ আবদুল কাইয়ূম প্রমুখ।

Leave a Comment