সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আড়াই হাজার ফ্ল্যাট প্রস্তুত

রাজধানীতে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থায় যোগ হচ্ছে আরও ২ হাজার ৪১৬টি ফ্ল্যাট। সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রেখে এসব ফ্ল্যাট নির্মিত হয়েছে আজিমপুর, মিরপুর, মতিঝিল ও মালিবাগ এলাকায়। প্রতি এক হাজার বর্গফুটের একেকটি ফ্ল্যাটে রয়েছে ৩টি বেড রুম, ৩টি বাথরুম, ৩টি বারান্দা, কিচেন কেবিনেট, পৃথক ড্রয়িং ও ডাইনিং রুমসহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। বড় আকারের চারটি প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়েছে, যা খুব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এরই মাধ্যমে ঢাকায় বসবাসরতদের আবাসন ব্যবস্থা ২২ শতাংশে উন্নীত হচ্ছে। এছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকা বাকি আবাসন প্রকল্পগুলো শেষ হলে তা ২৭ শতাংশ হবে।

সংশ্লিষ্ট বলছেন, ২০১৪ সালে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে যান। তিনি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা ৪০ ভাগ নিশ্চিত করার তাগিদ দেন। সরকারপ্রধানের এ অনুশাসন পেয়ে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হাতে নেয় পূর্ত মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আমাদের বড় আকারের চারটি আবাসন প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছে। এগুলো বরাদ্দ দেওয়ার পর রাজধানীতে বসবাসরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আবাসনভোগী হবে প্রায় ২২ শতাংশ। আর আমাদের হাতে থাকা বাকি প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে ২৭ শতাংশ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। আমরা সরকারের নির্দেশে এ আবাসনের পরিমাণ ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অনলাইনে আবেদন নিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বাসা বরাদ্দ দিচ্ছি। নতুন করে নির্মিত প্রায় আড়াই হাজার ফ্ল্যাট উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।’

আজিমপুর : রাজধানীর আজিমপুর সরকারি কলোনিতে সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাট নির্মিত হয়েছে। সেখানে মোট ১৭টি ২০তলা ভবনে ১ হাজার ২৯২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৮টি ভবনে আটশ’ বর্গফুটের ৬০৮টি এবং ৯টি ২০তলা ভবনে এক হাজার বর্গফুটের ৬৮৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। নগরপরিকল্পনাবিদরা জানান, ‘আজিমপুর এস্টেট’ প্রকল্পটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি পথ প্রদর্শনকারী পদক্ষেপ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। চারটি ব্লকে তিন কক্ষবিশিষ্ট ৪৮টি এবং ৩৮টি ব্লকে দুই কক্ষবিশিষ্ট ৪৫৬টি ফ্ল্যাট এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেখানে আবাসিক ঘনত্ব হয় একর প্রতি ৮৫ জন। ১৯৪৯ এর জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ওই বছরের অক্টোবরে সমাপ্ত এ প্রকল্পে গড়ে প্রতিদিন দুটি ফ্ল্যাট নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রকল্প ব্যয় ছিল মাত্র ৭৫ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীতে বিভিন্ন সরকারি অফিসে যে পরিমাণ কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন তাদের মাত্র ১০-১২ শতাংশ আবাসন সুবিধাভোগী। সরকারি বাসার জন্য বাকি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিপুল চাহিদাকে মাথায় রেখে সমস্যা নিরসনে নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে আজিমপুরের মোট ২৪টি ৪তলা ভবন ভেঙে গণপূর্ত অধিদপ্তর নির্মাণ করেছে প্রথম ধাপে ৬টি ২০তলা ভবন। বর্তমানে আরও ১৭টি ভবন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৩টি ২০তলা ভবনে মোট ১ হাজার ৭৪৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছে। নতুন আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। সেখানে মোট ৩৬টি পুরনো ৫তলা ভবন ভাঙা হবে। এই জমিতে ২০তলা ১৫টি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ভবনে ৭৬টি করে মোট ১ হাজার ১৪০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করার কাজটি শুরু হবে আগামী জুলাই মাসে। ১৩ দশমিক ৬২ একর জায়গার এ প্রকল্পে উন্মুক্ত স্থানের পরিমাণ থাকছে ৭৫ শতাংশ। গণপূর্ত অধিদপ্তরের আজিমপুর ডিভিশনের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইলিয়াস আহমেদ ১৭টি ভবনে আমাদের ১২৯২টি ফ্ল্যাট প্রস্তুত করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মিরপুর : রাজধানীর মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে মোট ২৮৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সেখানে একটি ১২তলা ভবনে এক হাজার বর্গফুটের ছয় ইউনিটে মোট ৬৬টি, ২টি ১৩তলা ভবনে ৮৫৯ বর্গফুটের ১৫০টি, ১টি ১৩ তলা ভবনে ৬৫০ বর্গফুটের ৭২ ফ্ল্যাট রয়েছে।

মালিবাগ : নগরীর মালিবাগ এলাকায় ৪টি ২০তলা ভবনে ৪৫৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২টি ২০তলা ভবনে ছয় ইউনিট করে মোট ২২৮টি ফ্ল্যাট এবং ২টি ২০তলা ভবনে ৬৫০ বর্গফুটের ২২৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।

মতিঝিল : ৫টি ২০তলা ভবনে মোট ৩৮০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩টি ২০তলা ভবনে চার ইউনিট করে ৮০০ বর্গফুটের মোট ২২৮টি ও ২টি ২০তলা ভবনে এক হাজার বর্গফুটের ১৫২টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী (মতিঝিল ডিভিশন) আবু জাফর সিদ্দিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে আমরা দিনরাত কাজ করেছি। কাজের মানের বিষয়েও আমাদের তীক্ষè নজর ছিল।’

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি কলোনিগুলোতে ভবনের পাশাপাশি হাঁটার জায়গা, উন্নত ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান, পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণ, খেলার মাঠ, সুইমিংপুল, কমিউনিটি সেন্টার, লাইব্রেরিসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা রাখা হয়েছে। পুরনো জরাজীর্ণ ভবনগুলো ভেঙে সেখানে অধিক লোকের বাসস্থান নিশ্চিত করতেই সরকার বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। এ কাজের সঙ্গে গণপূর্তের দক্ষ প্রকৌশলীগণ সম্পৃক্ত থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করেছে।’

নতুন এসব ফ্ল্যাটে কী ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ঢাকা জোন) মো. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রতি এক হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটে রয়েছে ৩টি বেড রুম, ৩টি বাথরুম, ৩টি বারান্দা, কিচেন কেবিনেট, পৃথক ড্রয়িং ও ডাইনিং রুমসহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। এছাড়া একটি কমিউনিটি ভবন রয়েছে; যেখানে আবাসিকদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় কেনাকাটার জন্য কয়েকটি সুপারশপ থাকবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য একটি হল রুমও আছে।’

Leave a Comment

betvisa