প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকাকে ‘বৈশ্বিক জনস্বার্থসামগ্রী’ হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত করোনা-সংক্রান্ত শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে তিনি এই আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় বুধবার ‘হোয়াইট হাউস গ্লোবাল কোভিড-১৯ সামিট: এন্ডিং দ্য প্যানডেমিক অ্যান্ড বিল্ডিং ব্যাক বেটার হেলথ সিকিউরিটি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে আগে ধারণকৃত বক্তব্যে এ কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় ভার্চ্যুয়াল এ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কার্যকরভাবে বিশ্বব্যাপী টিকা দেওয়ার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোভিড-১৯ টিকাকে বৈশ্বিক জনস্বার্থসামগ্রী হিসেবে ঘোষণা করা দরকার।
সম্মেলনে ভাষণে জো বাইডেন কোভিড-১৯ মহামারি অবসানে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার জন্য রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা, ব্যবসায়ী এবং বেসরকারি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো, আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বক্তৃতা করেন।
মার্কিন বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিশীল খাতে মার্কিন বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার লোটে নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে ‘বাংলাদেশ ফরওয়ার্ড: দ্য ফ্রন্টিয়ার ফর গ্রোথ’ শীর্ষক এ ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আইসিটি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, হালকা প্রকৌশল, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, নীল অর্থনীতি, পর্যটন, জ্ঞানভিত্তিক হাইটেক শিল্পসহ অন্যান্য লাভজনক খাতে মার্কিন বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি নিশা বিসওয়াল গোলটেবিল বৈঠক পরিচালনা করেন এবং উদ্বোধনী বক্তব্য দেন। ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ী নেতারাও এতে অংশ নেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের (এফটিএ) বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত। বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি সঠিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফটিএর বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত।
সহযোগিতার রোডম্যাপ তৈরির প্রস্তাব কুয়েতের
কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ সাবাহ আল-খালিদ আল-সাবাহ গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ওই বৈঠকের পর নিউইয়র্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁরা আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে একটি রোডম্যাপ ও একটি অভিযোগ্য কর্মসূচি প্রস্তুত করতে চান।
সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক
শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টিফান লফভেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেন, তাঁর সরকার কর্মীদের স্বার্থের জন্য আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং এ ব্যাপারে তিনি তাঁর পরামর্শ চান। শেখ হাসিনা একই সঙ্গে তাঁকে অবহিত করেন, প্রণোদনা প্যাকেজের কারণে মহামারি করোনাভাইরাস চলাকালেও কোনো বাংলাদেশি পোশাকশ্রমিক চাকরি হারাননি।
নেটওয়ার্ক গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ
প্রধানমন্ত্রী লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করতে নারীনেত্রীদের একটি নেটওয়ার্ক গঠনের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে অনুভব করি, আমরা নারীনেত্রীদের একটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারি, যা আমাদের শুধু একক বৈঠকের জন্য একত্র করবে না, বরং লিঙ্গসমতা অর্জনে বাস্তব পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে একটি শক্তি হিসেবে কাজ করবে।’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির আহ্বানে নারীনেত্রীদের নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বক্তব্য দেন।