অনেকের মুখেই শুনি, অনেকেই বলে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই যেন হারিয়ে গেছে। কখনো কখনো আমার নিজেরও এমন হয়।
কেন এমন হয়? এটা থেকে বের হবার উপায় কী?
আসুন এই বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ করি।
জীবনে এমন কিছু সময় আসে যখন নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হয়। কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না, বিষণ্নতা আর হতাশায় অন্তর ছেঁয়ে যায়। চোখ বন্ধ করলেই দু’ফোটা অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ে। খুব পছন্দের বইটিও ধুলোমলিন হয়ে পড়ে থাকে টেবিলের একটি কোণায়। সেদিকেও যেন ভ্রুক্ষেপ নেই।
ইমানি দূর্বলতা কিংবা গুনাহর কারণে সাধারণত এমনটা হয়ে থাকে। তাই সর্বপ্রথম আপনাকে খুঁজতে হবে, আপনি এখন বা কিছুদিন আগে কোনো গুনাহর সাথে লিপ্ত ছিলেন কি-না! যদি খুঁজে পান, তবে মনে করার চেষ্টা করুন সেই গুনাহর জন্য আপনি আল্লহর নিকট তাওবা করেছেন কি না। যদি না করে থাকেন তাহলে এখনই সেই সময়। দ্রুত ২ রাকাত তাওবার নামাজ পড়ে নিন। সিজদাহে লুটিয়ে কান্না করুন, নিজের গুনাহর দরুন নিজের নফসের উপর জুলুম করার কারণে। যদি তা সম্ভব না হয় তবে অধিক হারে ইস্তেগফার পাঠ করুন।
এছাড়া আরো কিছু কাজ করতে পারেন। যেমন-
১। দিনে তিনবার ১৫ মিনিট করে নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করুন।
নিয়মঃ মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে গভীর নিঃশ্বাস নিন। নিঃশ্বাস নেবার সময় ভাবুন, আমি বুক ভরে অক্সিজেন নিচ্ছি।
এরপর কিছুক্ষণ দম আটকে রাখুন। এই সময় ভাববেন, অক্সিজেন আমার ব্রেইন, হার্ট, কিডনী, পাকস্থলি, ফুসফুস সব ওয়াশ করে দূষিত পদার্থ বের করে আনছে।
এরপর ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। এই সময় ভাববেন, শরীরের যত দূষিত পদার্থ, কার্বন ডাই অক্সাইড, টক্সিন, দুশ্চিন্তা, খারাপ চিন্তা, ভয় সব বের করে দিচ্ছি।
২। গা ঘামানো ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করতে পারেন। এটা আপনার হার্ট ভাল রাখবে, আপনার অপ্রয়োজনীয় দুশ্চিন্তা দূর করবে।
৩। প্রকৃতির মাঝে বিচরণ করবেন। সবুজ ঘাস, লতা পাতা, পাখি ইত্যাদি সব মনোযোগের সাথে অবলোকন করবেন। প্রকৃতির সৌন্দর্য আপনার চোখে ধরা দিবে। যা আপনাকে মানসিকভাবে উৎফুল্ল রাখবে।
৪। পছন্দের লেখকের বই পড়ুন।
৫। হসপিটালের আইসিইউ থেকে ঘুরে আসুন। অথবা ক্যানসারের লাস্ট স্টেপে আছে এমন কোনো বাচ্চা বা তরুণের সাথে দেখা করুন এবং তাদের সাথে গল্প করে কিছু সময় কাটিয়ে আসুন।
এতে করে নিজের জীবনের জন্য রবের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ আপনাআপনিই জাগ্রত হবে, ইন শা আল্লহ।
৬। ইয়াতীমখানা যান, ফুটপাতে যেসব বাচ্চারা ভিক্ষা করছে বা ফুল বিক্রি করছে, তাদের সাথে আলাপ করুন। এতে আপনার নিজের অবস্থানটা আপনার কাছে ক্লিয়ার হয়ে যাবে।
৭।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ুন।
৮। অনুবাদসহ কুরআন তিলাওয়াত করুন নিয়মিত। তাহলে আপনার নিজের জীবন সমন্ধে একটা ভালমত ধারণা পাবেন। সেই সাথে পাবেন যদি গাইডলাইন।
৯। বিভিন্ন ইসলামিক স্কলার যেমন, মুহাম্মাদ হবলস, তারেক জামিল, মুফতি মেন্ক…এনাদের লেকচার শুনতে পারেন।
১০। দুশ্চিন্তাগ্রস্থদের জন্য খুব সুন্দর একটি দুআ হাদিসে এসেছে। নিম্মোক্ত দুআটি সবসময়ই পড়বেন।
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।
আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ‘ঊযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালা‘ইদ দ্বাইনে ওয়া গালাবাতির রিজা-লি
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দো‘আটি বেশি বেশি করতেন।
(বুখারী, ৭/১৫৮, নং ২৮৯৩)
ইন শা আল্লহ, বেঁচে থাকার প্রেরণা পাবেন। জীবনকে খুব ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারলে এরকম চিন্তা আর আসবে না, ইন শা আল্লহ!