ঋণচুক্তির আওতায় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আসছে

প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের দেওয়া ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের আওতায় শিগগিরই ওই দেশ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পাচ্ছে বাংলাদেশ। গতকাল বুধবার রাতে ঢাকায় সোনারগাঁও হোটেলে এক ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা এ কথা জানান। তিনি আরো জানান, ওই ঋণের আওতায় সরবরাহের জন্য এরই মধ্যে বেশ কিছু সামগ্রী চিহ্নিত করা হয়েছে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, প্রতিরক্ষা খাতে ওই ঋণচুক্তি হয়েছিল ২০১৭ সালের এপ্রিলে। 

ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের তিন দিনের ঢাকা সফরের প্রথম দিন সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে ওই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রথম দিনে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতির আলোচনায় বাণিজ্য বৃদ্ধি গুরুত্ব পেয়েছে। 

বাণিজ্য সুবিধা বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পর অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধার জন্য যত দ্রুত সম্ভব ‘কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সিপা)’ সইয়ের জন্য ভারত কাজ করছে। এ ছাড়া বাংলাদেশকে ভারতের পক্ষ থেকে আরেকটি ঋণ প্যাকেজ দেওয়ার বিষয়েও কাজ চলছে। 

বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক অন্য কোনো সম্পর্কের সঙ্গে তুলনা হতে পারে না।

র‍্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ককে তৃতীয় কোনো দেশের দৃষ্টিতে দেখে না।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান—চার দেশীয় কোয়াডে বাংলাদেশকে নেওয়ার সম্ভাবনা বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে শ্রিংলা বলেন, ‘কোয়াড’ নামের মধ্যে চার শব্দটি আছে। সেখানে অন্য কোনো দেশকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়নি। 

তিনি বলেন, কোয়াডের মূল বিষয় হলো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সহযোগিতার আগ্রহ। সহযোগিতায় আগ্রহী বা অংশীদার হিসেবে দেখা হলে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। 

ভারতের রাষ্ট্রপতির সফরে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সাক্ষাত্ বা বৈঠকের সম্ভাবনা এবং বিরোধী দলের প্রতি ভারতীয় নীতির বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে সংবাদ সম্মেলনে। এর জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব স্মরণ করিয়ে দেন ২০১৩ সালে তত্কালীন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিলের কথা।

শ্রিংলা বলেন, ২০১৩ সালের ওই ঘটনা ছাড়া অন্যান্য সময়ে ভারতীয় উচ্চ পর্যায়ের অতিথিরা গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক-সাক্ষাৎ করেন। তবে এবার সেটি হচ্ছে না। কারণ রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের এবারের সফরটি দ্বিপক্ষীয় নয়। বিজয় দিবসের মতো একটি বিশেষ উপলক্ষ উদযাপনে তিনি এসেছেন। এই উদযাপনের দিকে দৃষ্টি রাখতেই এবার এ ধরনের কোনো বৈঠক রাখা হয়নি।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের বিশেষ মিষ্টি নিয়ে আসার কারণ প্রসঙ্গে শ্রিংলা বলেন, রাষ্ট্রপতি কোবিন্দের আগ্রহের কারণে ওই উপহার আনা হয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি চেয়েছিলেন এই সফরে ব্যক্তিগত ছোঁয়া দিতে। 

এক প্রশ্নের জবাবে শ্রিংলা বলেন, আগামী বছর বাংলাদেশ-ভারত হাইড্রোকার্বন পাইপলাইন চালু হতে পারে। নেপাল ও ভুটান থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আনলে ট্রানজিট দেশ হিসেবে ভারতও লাভবান হতে পারে। 

সংখ্যালঘু ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, দুই দেশের কাছে গুরুত্বপূর্ণ সব ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। কিছু বিষয় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু হলেও ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলোর অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। 
সীমান্তবিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হবে। বিজিবি দিবস উপলক্ষে আগামী রবিবার ভারতের বিএসএফের প্রধান বাংলাদেশে আসছেন। 

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ব্রিফিংয়ে সূচনা বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের রাষ্ট্রপতির আলোচনায় ১৯৭১ সালের চেতনা ধরে রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। ভারত মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধিকারীদের জন্য নতুন বৃত্তি দেবে। আজ বাংলাদেশে বিজয় দিবসের প্যারেডে ভারতের ১২২ জনের একটি কন্টিনজেন্ট অংশ নেবে। সেখানে ভারতের উইং কমান্ডার টি আশা জ্যোতির্ময় ভারতীয় পতাকা নিয়ে ফ্লাইট থেকে প্যারাসুটসহ লাফ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী ভারতীয়দের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

Leave a Comment