পলাশীর (ইউপি) চেয়ারম্যান শওকত ও তার স্ত্রী গ্রেফতার

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো: শওকত আলী ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।


ত্রাণ বিতরণের স্লিপ চাওয়াকে কেন্দ্র করে শতবর্ষি বৃদ্ধাকে গলাধাক্কা দিয়ে গুরুতর জখম মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।

বুধবার (২৮ জুলাই) সকালের দিকে আদিতমারী এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ।

এর আগে গত ১৯ জুলাই দিবাগত রাতে আহত শতবর্ষি বৃদ্ধা মোছা:আলেমা বেওয়ার ছেলে মো: নুরুজ্জামান বাদী হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী, তার স্ত্রী মোছা: আনোয়ারা বেগম (৪৭) ও কণ্যা সুহিন আক্তারের (২১) বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

আহত শতবর্ষি বৃদ্ধা মোছা: আলেমা বেওয়া (৯৭) উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের নামুড়ি মদনপুর গ্রামের প্রয়াত ছপির উদ্দিনের স্ত্রী ও রিক্সাচালক মো: নুরুজ্জামানের মাতা।

থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, অতি দরিদ্র আলেমা বেওয়া রিক্সাচালক ছেলে নুরুজ্জামানের সংসারে বসবাস করেন। সাম্প্রতি করোনা ভাইরাস সংক্রমন রোধে চলমান লকডাউনে রিক্সাচালক ছেলের আয় রোজগার কমে যাওয়ায় নিদারুন অর্থ কষ্টে পড়েন পরিবারটি। ঈদের কিছুদিন আগে পলাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী ত্রাণ দেওয়ার কথা বলে বৃদ্ধা আলেমার কাছ থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি গ্রহণ করেন।

এরপরে গত ১৯ জুলাই সকালে চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদে ডাকেন । বৃদ্ধা আলেমা বেওয়া সকালে পান্তা ভাত খেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চলে যান। তখন চেয়ারম্যান তার বাড়িতে রাখা স্লিপ নিয়ে আসতে বললে বৃদ্ধা পরিষদের পাশে চেয়ারম্যানের বাড়িতে যান। সেখানে দুপুর পর্যন্ত স্লিপের জন্য অপেক্ষা করেন ক্ষুধার্ত বৃদ্ধা।

এরপরে , ত্রাণ বিতরণ শেষ করে চেয়ারম্যান বাড়িতে চলে আসলে স্লিপ দাবি করেন বৃদ্ধা। এ সময় চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম ও মেয়ে সুহিন আক্তার বৃদ্ধা আলেমাকে গলাধাক্কা দিলে ক্ষুধার্ত বৃদ্ধা মেঝেতে পড়ে তার দাঁত ভেঙে রক্ত ঝরতে থাকে এবং হাত, পা ও বুকে প্রচন্ড আঘাত পেয়ে সজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।

এই ঘটনার পরে চেয়ারম্যান দ্রুত স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক দিয়ে বৃদ্ধার প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন ।

এরপর, মায়ের অসুস্থ্যতার খবরে রিক্সাচালক ছেলে নুরুজ্জামান স্থানীয়দের সহায়তায় বৃদ্ধা আলেমাকে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় আহত বৃদ্ধার ছেলে নুরুজ্জামান বাদী হয়ে চেয়ারম্যান শওকত আলীকে প্রধান অভিযুক্ত করে চেয়ারম্যানের স্ত্রী ও মেয়ের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে সংবাদ প্রকাশিত হলে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মনসুর উদ্দিন আহত বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ান । তিনি বৃদ্ধাকে অর্থসহায়তা প্রদানসহ ন্যায় বিচার পাইয়ের দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

এদিকে, থানা পুলিশ অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে। সেই মামলায় বুধবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে স্ত্রী আনোয়ারা বেগমসহ চেয়ারম্যান শওকত আলীকে আদিতমারী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আদিতমারী থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো: সাইফুল ইসলাম ঘটানার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান , এ মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

Leave a Comment

betvisa