দেশে পড়াশোনা শেষ করার পরে চিনে গিয়ে সেখানের এক মহিলাকে ভালোবেসে বিয়ে করে দেশেই ফেরেনি এক যুবক, সঙ্গে নিয়ে এসেছেন সেই দেশের মুরগির ডিম। আর সেই ডিম দিয়ে এখন নিজের বাড়ির এলাকাতে গড়ে তুলেছেন চিনা মুরগির খামার। বাংলাদেশের আবহাওয়াতে ওই মুরগি বেশ মানিয়ে নিয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই চিনা মুরগির ওজন বেশি হয় বলে এই ব্যবসা করে দেশের অনেকেই আর্থিকভাবে লাভবান হবেন বলে মনে করেন গাইবান্দা সদরের পলাশপাড়ার বাসিন্দা মো. ফিরোজ আলম।
ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যা নিয়ে পড়ার পরে ফিরোজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচার নিয়ে পড়া শেষ করে ২০১১ সালে স্কলারশিপ নিয়ে চিনে যান। একটি সেমিনারে গিয়ে পরিচয় হয় সেখানের এক কলেজের ফাইন আর্টসের শিক্ষক ওয়াং লু ফিং(সুফি)-র সঙ্গে। তাকে ভালোবেসে ২০১১ সালে বিয়ে করেন। তখন থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা দুই-দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি ব্যবসাও শুরু করেন।
ফিরোজ জানান, বিভিন্ন সময় আসাযাওয়ার সময় চিন থেকে বেশ কিছু ডিম নিয়ে এসেছিলেন। করোনার সময়ে সুফি খানিকটা শখেই গাজীপুরের কালীগঞ্জের নগরভেলা গ্রামে জমি ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলেন মুরগির শেড। চিন থেকে নিয়ে আস ডিম কৃত্রিমভাবে ফুটিয়ে ১৩ জাতের ৮৪টি বাচ্চা হয়। ওই বাচ্চাগুলো নিয়ে তারা এসএস রেয়ার ব্রীড এগ্রো ফার্ম নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। এক বছরেই তাদের খামারের বিভিন্ন জাতের চিনা মুরগীর সংখ্যা বেড়ে এখন সাড়ে তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে।
খামারে সাদা রঙের চাইনিজ সিল্কি, সাদা-কালো রঙের লু হেই চি (চাইনিজ দেশী), কালো রঙের কাদাকনাথ ও লালচে রঙের হুং ইয়াও জি লালন পালন হচ্ছে। এখান থেকেই সারা দেশে চাইনিজ মুরগির ব্যবসা ছড়িয়ে দিতে চাইছেন তারা। সিল্কি মুরগি ছমাসে দেড়-দুই কেজি ওজনের হয়।লু হেই চি মুরগি ৪/৫ মাসে আড়াই কেজির মত এবং হুং ইয়াও জি মুরগি ৫মাসে ৫ কেজির মতো ওজন হয়। এরা যে ডিম দেয় তা দেশি মুরগির চেয়ে বেশি এবং আকারে বড়।
‘এখন চিনা জাতের মুরগি নিয়ে আমাদের দেশে ব্যবসা করার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কারণ আমাদের দেশের আবহাওয়াতে এরা টিকে থাকতে পারে এবং মৃত্যুহারও কম। এই মুরগির খামার করে মাসে ৪০ হাজার টাকা আয় সম্ভব’ বলেও জানান ফিরোজ এবং সুফি।
গাজীপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ এসএম অকিল উদ্দিন বলেন, আমাদের দেশের আবহাওয়া চিনা জাতের মুরগি পালনের উপযুক্ত। আমরা ইতিমধ্যেই এই খামারটি পরিদর্শন করেছি। বিদেশি মুরগি পালন সম্প্রসারিত হলে এর একটা বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে।