গ্রেনেড হামলার ভুক্তভোগীরাই জানেন জীবন কীভাবে চলছে

প্রতিনিয়ত মৃত্যুযন্ত্রণা বয়ে চলছি

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের একজন ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মাহবুবা পারভিন। ওই হামলায় মারাত্মক আহত হয়ে ৭২ ঘণ্টা আইসিইউতে ছিলেন তিনি। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছেন। বাঁচবেন কি না, তা নিয়ে ছিল শঙ্কা।

মাহবুবা পারভিন বলেন, ‘উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে। ২৫ দিন পর আমার জ্ঞান ফেরে। তখন থেকেই প্রতিদিন প্রতিক্ষণ যন্ত্রণা ভোগ করছি। এমন কষ্ট যে, চিৎকার করে কেঁদেছি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত একটি রাতেও ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না।’

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে আহতদের অনেকে হাসপাতালে মারা যান। সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সামবেশে যোগ দিতে সাভার থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এসেছিলেন মাহবুবা পারভিন। তিনি বলেন, ‘দুপুরের রান্না করছিলাম তখন। হঠাৎ স্বেচ্ছাসেবক লীগের অ্যাডভোকেট মঞ্জিলা আপার ফোন। তিনি বললেন, ঢাকায় সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে যোগ দিতে হবে। আমি রান্না যতটুকু করেছি, ততটুকু রেখেই সমাবেশে আসার প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। ছেলেকে বললাম, যা আছে, তাই দিয়ে খাও। রাতে এসে রান্না করে খাওয়াবো।’

‘সাভার থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এসে আইভি আপার (আইভি রহমান) পাশে পেছনের একটি ট্রাকের চাকার সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। আপার (শেখ হাসিনা) বক্তব্য শেষ হওয়ার ঠিক আগেই বিকট শব্দ হলো। শুধু চিৎকার আর চিৎকার। আমি পড়ে গেলাম। এরপর আর আমার কিছুই মনে নেই,’ বলেন মাহবুবা পারভিন।

সেই ভয়াবহ ক্ষণের বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখে-মুখে আতঙ্ক ভর করে মাহবুবার। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার এক সাইড প্যারালাইজড হয়েছিল। বাম হাত, বাম পা অবশ হওয়ায় আমাকে দাঁড় করাতে পারছিল না। স্বেচ্ছসেবক লীগের প্রচার সম্পাদক আশীষ কুমার মজুমদার আমাকে সেখান থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যান। আমার ভাই যখন ডাক্তারের কাছে আমার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলেন, তখন ডাক্তার বলেছিলেন, উনি বেঁচে আছেন না কি মরে গেছেন, তা ৭২ ঘণ্টা পর বোঝা যাবে।’

এত বছরেও শরীরের ভেতরে থাকা স্প্লিন্টারের কারণে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না জানিয়ে মাহবুবা বলেন, ‘মাঝে মাঝেই রাতে চিৎকার করে কেঁদে উঠি। পায়ের মধ্যে স্প্লিন্টারগুলো কাটার মতো বিঁধে। যন্ত্রণা সইতে না পেরে নিজেই ব্লেড দিয়ে পা কেটে স্প্লিন্টার বের করতে চেয়েছিলাম। প্রতিনিয়ত মৃত্যুযন্ত্রণা বয়ে চলছি।’

চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং সার্বিক খোঁজ-খবর রাখায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান মাহবুবা পারভিন। তিনি বলেন, ‘ওই হামলায় তিনি নিজের (শেখ হাসিনা) কথা চিন্তা না করে আমাদের চিকিৎসা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন, নির্দেশনা দিয়েছেন, খোঁজ নিয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠিয়েছেন।’

‘২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পর শুধু ভুক্তভোগীরাই জানেন তাদের জীবন কীভাবে চলছে। কতটা যন্ত্রণা, কষ্ট নিয়ে প্রতিটি দিন পার করেন তারা। প্রতিদিনই আমাদের বেঁচে থাকার লড়াই,’ বলেন মাহবুবা পারভিন।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *