উম্মে হাবিবা বিনতে আবি সুফিয়ান। ইসলামের একসময়ের অন্যতম দুর্ধর্ষ শত্রুর কন্যা। তার বাবা ছিলেন মক্কার অবিসংবাদিত নেতা। তার মেয়ে স্বামীর সাথেই ইসলাম গ্রহণ করে। যে মেয়েকে তিনি এতদূর পর্যন্ত বড় করেছেন আজ সেই তার শত্রুর দলে যোগ দিচ্ছে! তার পুরো গোত্রের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে! উম্মে হাবিবা (রা.) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অন্য সাহাবিদের মতই বিভিন্ন সমস্যায় ভুগেছেন। তিনি তাদের অনেককেই আবিসিনিয়ায় হিজরত করতে বলেন, অথচ এর নামও মক্কার অনেক মানুষ আগে শুনেনি। অপরিচিত ভূমি, অপরিচিত মহাদেশ, অপরিচিত ভাষা, অপরিচিত সংস্কৃতি। কিন্তু তারা সকল চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলেন যতক্ষণ সেটা আল্লাহর জন্য ছিল। উম্মে হাবিবা (রা.) তার স্বামী উবাইদুল্লাহ ইবনে আল জাহশ এর…
Author: মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া
আরবি ক্যালেন্ডারে সব দিনের মর্যাদা সমান নয়। বরং আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা কিছু দিনকে অন্যান্য দিনের তুলনায় মর্যাদার দিক দিয়ে এগিয়ে রেখেছেন। কিছু দিনে অধিক বারাকাহ রেখেছেন। এটা মহান আল্লাহর মহান প্রজ্ঞা ও রহমতের নিদর্শন। কারণ সব দিন একই হলে আমরা নির্দিষ্ট কিছু দিনে অধিক ইবাদত করতে আগ্রহী হতাম না। বরং, সারা বছর ধরে আমরা একই রকম এনার্জি ধরে রাখতাম। অতএব, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই বরকতময় দিনগুলিতে আমাদের নিজেদের আরো পরিশুদ্ধ করার এবং আমাদের নেক আমলগুলো বৃদ্ধি করার সুযোগ দিচ্ছেন। রমজানের সুপরিচিত শেষ দশ রাত ছাড়াও বছরের একটি বরকতময় সময় হল জিলহজের প্রথম দশ দিন। এটি এমন এক সময় যা…
উম্মে সালামাহ (রা.) আব্দুল্লাহ ইবনে আবদুল আসাদ (রা.) নামক এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। তিনি সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বদর, উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন। এরপরে তিনি ফিরে আসেন, আহত অবস্থায়। এরপরে তিনি আঘাতের কাছে হার মেনে যান যার ফলে উম্মে সালামাহ (রা.) বিধবা হন। তাদের মধ্যে চমৎকার সামঞ্জস্য বিদ্যমান ছিল। উম্মু সালামাহ বলেনঃ “আবু সালামাহ এর চেয়ে উত্তম আর কে হতে পারে?” তাকে কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানাদি আহে, আমি বৃদ্ধ হয়ে পড়েছি যার কারণে আমি বিয়ে করতে পারব না।’ তাছাড়া তার স্বামী তার এতটাই যত্ন নিতেন যে তিনি চিন্তিত ছিলেন যে এরকম যত্ন আর কেউই তার…
উমর (রা.) তার মেয়ের ব্যপারে চিন্তিত ছিলেন। তার মেয়ে খুব অল্প বয়সেই বিধবা হয়ে যান। তাই তিনি তার মেয়ের জন্য ভালো একজন স্বামী খোঁজার সিদ্ধান্ত নিলেন। তাই তিনি তার সবসময়ের সাথী আবু বকর (রা.) এর কাছে গেলেন। আবু বকর (রা.) কোন সিদ্ধান্তই জানালেন না। তাই তিনি এবার গেলেন উসমান (রা.) এর সাথে কথা বলার জন্য। উসমান (রা.) বললেন, ‘আমি আপনাকে শীঘ্রই জানাব এ ব্যাপারে।’ সময় গড়িয়ে গেল কিন্তু উসমান (রা.) পরবর্তীতে কিছু জানালেন না। তাই তিনি তাকে খুঁজতে গিয়ে মসজিদে খুঁজে পেলেন। যখন উসমান (রা.) টের পেলেন যে উমর (রা.) তার কাছে এসে বসেছেন তখন তিনি তার সালাত দীর্ঘায়িত করতে…
ইমরানের স্ত্রী তার গর্ভে এক সন্তানের প্রত্যাশায় ছিলেন। যখন ইমরান-পত্নী নিবেদন করল, হে আমার রাব্ব! নিশ্চয়ই আমার গর্ভে যা রয়েছে তা আমি মুক্ত করে আপনার উদ্দেশে উৎসর্গ করলাম, সুতরাং আপনি আমা হতে তা গ্রহণ করুন, নিশ্চয়ই আপনি শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী। অতঃপর সে যখন তা প্রসব করল, বলল, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি তা প্রসব করেছি কন্যারূপে’। আর আল্লাহই ভাল জানেন সে যা প্রসব করেছে তা সম্পর্কে। ‘আর পুত্র সন্তান কন্যা সন্তানের মত নয় এবং নিশ্চয় আমি তার নাম রেখেছি মারইয়াম। আর নিশ্চয় আমি তাকে ও তার সন্তানদেরকে বিতাড়িত শয়তান থেকে আপনার আশ্রয় দিচ্ছি’। [সূরা আল-ইমরান ৩:৩৫-৩৬] তিনি একজন পুত্রসন্তান চেয়েছিলেন যে মসজিদে থাকবে এবং সর্বক্ষণ আল্লাহর ইবাদতে রত থাকবে। কারণ…
ইলম একটি আরবি শব্দ। এর ব্যাকরণগত অর্থ হল জ্ঞান, জানা, বোঝা, উপলব্ধি করা ইত্যাদি। শরিয়তের পরিভাষায় ইলম হচ্ছে দীনি জ্ঞান। তাই যে কোনো জ্ঞানকেই ইলম বলার সুযোগ নেই। বরং যে জ্ঞানের সাথে দীনের, ধর্মের সম্পর্ক আছে সেটাই ইলম। কেবল এ ধরণের ইলমের ক্ষেত্রেই ইলম অর্জনের ফজিলত প্রযোজ্য হবে। ইসলাম শব্দের অর্থ আনুগত্য করা এবং আত্মসমর্পণ করা। তাই প্রত্যেক মুসলিম কার আনুগত্য করবে, কীভাবে তারা তাদের জীবনযাপন করবে? কীভাবে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করবে? ইত্যাদি জ্ঞানকেই বলা হয় ইলম। দীনি জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে নিয়ত ঠিক থাকা অত্যন্ত জরুরী। ফকিহ বুরহানুদ্দিন মারগিনানি রাহ.-এর সাগরের বুরহানুল ইসলাম জারনুঝি রাহ. বলেছেন, ‘অনেক কাজ বাহ্যিক দৃষ্টিতে…
গাসসানের বাবা তার দুই যুবক সন্তানের চিন্তা-চেতনায় কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ করলেন। গাসসান এবং তার ভাই রামি দুজনেই প্রতিদিন সকালে তাদের বাবার রুমে আসে এবং হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, ‘বাবা, দয়া করে খরচের টাকাটা দিন।’ এ তাদের নিত্যদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়াল। বাবা যখন তাদেরকে হাত খরচের টাকা দেয় তখন তারা শুকরিয়া জানিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে যায়। গাসসানের বাবা তার দুই ছেলেকে এই ব্যাপারটি মনে করিয়ে দিতে চাইলেন যে, তাদের সাথে তার সম্পর্কটা খরচের টাকা দেওয়া-নেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দুই ভাই পরদিন এসে আবারও খরচের টাকা চাইল। কিন্তু বাবা টাকা দিলেন না। বরং ভালোবাসা ও স্নেহ নিয়ে বললেন, “আমি তোমাদেরকে…
আর আমি মূসার মায়ের প্রতি নির্দেশ পাঠালাম, ‘তুমি তাকে দুধ পান করাও। অতঃপর যখন তুমি তার ব্যাপারে আশঙ্কা করবে, তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করবে। আর তুমি ভয় করবে না এবং চিন্তা করবে না। নিশ্চয় আমি তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত করব’। অতঃপর ফির‘আউনের লোকজন তাকে কুড়িয়ে নিল। এর পরিণামতো এই ছিল যে, সে তাদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হবে। ফির‘আউন, হামান ও তাদের বাহিনী ছিল অপরাধী। আর ফির‘আউনের স্ত্রী বলল, ‘এ শিশুটি আমার ও তোমার চক্ষু শীতলকারী, তাকে হত্যা করো না। আশা করা যায়, সে আমাদের কোন উপকারে আসবে। অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে পারি’। অথচ…
যিনি নিজেকে মর্যাদার চূড়ান্ত আসনে সমাসীন করতে পেরেছিলেন, দুনিয়ায় থাকা অবস্থাতেই জান্নাতে নিজের প্রাসাদকে নিশ্চিত করেছিলেন, যিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উম্মতের শ্রেষ্ঠ নারীতে পরিণত হয়েছিলেন তিনি হচ্ছেন খাদিজা বিনতে আল-খুওয়াইলিদ (রা)। তার বাবার নাম খুওয়াইলিদ ইবনে আল-আসাদ। ফাতিমা বিনতে আল-যা’ইদাহ তার মা। তার বাবা যুদ্ধে মারা যান। তার বিয়ে হয়েছিল আতিক বিন আবিদ আল-মাখজুমি এর সাথে। তিনিও কিছুদিন পরে মারা যান। তবে তিনি কিভাবে মারা যান তা জানা নেই। এর কিছুদিন পরেই তার আবার বিয়ে হয় আবু হালা ইবন জারারাহ আত-তামিমি এর সাথে। কিন্তু তিনিও মারা যান অল্পদিনের মধ্যে। যার ফলে বিধবা হিসেবে তার পরিচিতি ঘটে। …
সম্ভব হলে আগে আগেই বিয়ে করুন। এরপর সন্তান নিন। তাদেরকে এমনভাবে বড় করুন যেন তারা দায়িত্ব নিতে শিখে। এরপর যখন আপনার বয়স হয়ে যাবে তখন তারাও আপনার দায়িত্ব নেওয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করবে ইনশাআল্লাহ। আধুনিক সমাজ “ব্যক্তিস্বাধীনতা”-র ওপর অনেক বেশী ফোকাস করে। কিন্তু এটার উলটোপিঠটা কি জানা আছে আমাদের? কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কেউ কি পুরোপুরি স্বাধীন হয়? মানুষ যখন পৃথিবীতে আসে তখন সে পুরোপুরি বাবা-মায়ের স্নেহ-যত্নের ওপর নির্ভরশীল হয়েই আসে। আবার যখন তার বয়স হয়ে যায়, সে তখন তার চেয়ে অল্প বয়সীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এর মাঝামাঝিতে যারা আছে তারা শারীরিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হয় বটে। আধুনিক পশ্চিমা সেকুলার সমাজে যে ব্যক্তির…
সব নারীই সুন্দরী হতে চায়, অতি সুন্দরী হওয়া থাকে তাদের আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু আপনি যতই মেইক আপ বা কসমেটিক লাগান না কেন, হায়ার চেয়ে আর কোনো জিনিসই আপনাকে এতটা সুন্দরী করতে পারবে না। হায়া নারীদের যে সৌন্দর্য প্রদান করে তার সাথে কোনো কিছুর তুলনা চলে না। হায়া কি? হায়া হচ্ছে নিজের ভেতরের অধরা এবং বাহ্যিক বিনয়, নম্রতা, লজ্জাশীলতা, লাজুকতা। নিজেকে রক্ষার জন্য অশ্লীলতা এবং অনৈতিকতা থেকে বিরত থাকার সহজাত গুণ। হায়া নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই। কিন্তু কোনো নারীর ভেতর হায়া না থাকলে সেটা একই সাথে দৃষ্টিকটু, শ্রুতিকটু ও বিরক্তিকর হয়। যে নারী মোটামোটি সুন্দর কিন্তু তার হায়া আছে – তিনি শ্রেষ্ঠ সুন্দরী।…
কুরআনে মেঘের বিজ্ঞানময় বিবরণ মেঘ তৈরি হয় যখন বায়ুতে জলীয় বাষ্প ধুলো বা ধোঁয়ার মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার চারপাশে ঘনীভূত হয়। জলীয় বাষ্প অদৃশ্য। কিন্তু যে পানির ফোঁটাগুলো মেঘ তৈরি করে তা দেখা যায়। মেঘ বিভিন্ন আকার এবং প্রকারের হয়। মেঘ মূলত তিন প্রধান ধরনের: কিউমুলাস, স্ট্র্যাটাস এবং সাইরাস। কিউমুলাস মেঘ দেখতে সাদা তুলোর বলের মত দেখায়। স্ট্র্যাটাস মেঘ সমতল এবং ধূসর। এ ধরনের মেঘ প্রায় গোটা আকাশ ঢেকে দেয়। সাইরাস মেঘ বেশ পাতলা। দেখতে চুলের মতো দেখায়। পানিচক্রে মেঘ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মেঘগুলো গোটা পৃথিবীতে পানি সরবরাহ করতে সাহায্য করে এবং গাছপালা ও প্রাণীদের জন্য আর্দ্রতার…