জানতেই হবে যে কারণে মধ্যবিত্তরা সর্বস্বান্ত
১. ভুল জমি বা ফ্লাট কেনা।
দেশে অসংখ্য রিয়েল এস্টেট কোম্পানি আছে, এরা বরশি ফেলে বসে আছে টোপ গেলার জন্য এবং এ টোপ হচ্ছে মধ্যবিত্ত। কেনার সময় আপনাকে যে জমি দেখানো হয়েছে আসলে তা হয়তো কেনাই হয়নি। জমির মালিককে মাসে দুহাজার টাকা ভাড়া দিয়ে জমির উপর কোম্পানিটি সাইনবোর্ড লাগিয়েছে মাত্র।
এ জমি কিনলেন তো বুড়িগঙ্গায় কষ্টের টাকা বিসর্জন দিলেন। সর্বস্ব হারানো মানুষটির এসব মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কিছুই করার থাকে না। আশেপাশে তাকালেই এদের হাতে পথের ফকির হওয়া অনেককেই দেখবেন।
উল্টাপাল্টা ডেভেলপার থেকে ফ্লাট কিনলেও একই দশা অপেক্ষা করছে।
একটি ভুল জমি বা ফ্লাট ইকুয়াল টু বাকি জীবনের কান্না।
২. অস্বাভাবিক ডিসকাউন্ট দেওয়া কোম্পানি।
এরা পঞ্চাশ হাজার টাকার জিনিস দশ হাজার টাকায় অফার করবে। কমদাম দেখে মধ্যবিত্তরা ঝাঁপ দেবেন। এর মধ্যে সামান্য কয়েকজনকে পণ্য সরবরাহ করা হবে, বাকি অসংখ্য অর্ডারকারিকে দেবে না, সোজা কথায় তাঁদের টাকা মেরে দেওয়া হবে। বঞ্চিতরা এ কোম্পানির মালিককে জীবনেও ধরতে পারবেন না। কারণ তাঁদের টাকায় সে টাউট ইতোমধ্যে শত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে, গড়ে তুলেছে মাস্তান বাহিনী, চড়ে বুলেট প্রুফ গাড়িতে, বাস করে দূর্গে। ক্ষমতাহীন মধ্যবিত্তের সাধ্য নেই তাকে ধরার।
জানতেই হবে যে কারণে মধ্যবিত্তরা সর্বস্বান্ত
৩. ক্রেডিট কার্ড।
নগদ টাকা বের হয়ে যাওয়ার সময় যেমন মন খচখচ করে করে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনার সময় তা করে না। তাই সব কিছু কিনে ফেলতে ইচ্ছে করে। একবারও মনে আসে না যে, ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি প্রায় ত্রিশ পার্সেন্ট সুদ আরোপ করবে। মানে ১০০ টাকার জিনিস আসলে আপনি কিনছেন ১৩০ টাকায়। এটি এমন একটি গর্ত, যেখানে ঢুকা যায়, কিন্তু বের হতে জান বেরিয়ে যায়। মিনিমাম পেমেন্টের গাড্ডায় পড়লে তো জান যাবে কিন্তু ওই গর্ত থেকে বেরুতে পারবেন না।
৪. শেয়ার বাজার।
এটি এমন একটি সুড়ঙ্গ যার ওপর পারে অপেক্ষা করছে অভিজ্ঞ খেলোয়ারেরা। ভালোভাবে এ বাজার না বুঝে সে সুড়ঙ্গে টাকা ঢুকালেন তো অপর প্রান্তে অপেক্ষামান ফিল্ডাররা ক্রিকেট বলের মতো তা খপ করে লুফে নেবে। তার মানে আপনি আউট! পারমানেন্ট আউট। জীবনেও আর খেলার সুযোগ পাবেন না। এরকম আউট হওয়া হতভাগ্য খেলোয়ার আশেপাশেই দেখতে পাবেন।
৫. অতিরিক্ত মুনাফার লোভ।
যখন কোনো প্রতিষ্ঠান বাজারে প্রচলিত বা সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ মুনাফা বা সুদের চাইতে বেশি অফার করে তখনই সে প্রতিষ্ঠানে লাল পতাকা কল্পনা করবেন। মানে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি লালবাতি জ্বালিয়ে ভাগবে, তার টিকিটার খোঁজও আপনি পাবেন না। এরা তো জ্বীন-ভূত না যে বাজারের প্রতিষ্ঠিত অতি বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের চাইতে বেশি মুনাফা দেবে! এটা কি সম্ভব? এদের হাতে কি আলাদীনের চেরাগ আছে? না নেই। তবে আপনার আমানতের টাকায় এ চেরাগ তারা নিজেদের জন্য তৈরি করছে। যেদিন চেরাগটি পুরোপরি জ্বলবে সেদিন আপনার টাকা বস্তায় ভরে ম্যাজিক কার্পেটে চড়ে এরা গায়েব হয়ে যাবে।
কার্পেট রেডি, কেবল উড়াল দেওয়ার অপেক্ষা।
৬. ব্যাবসা করার জন্য অন্যকে টাকা দেওয়া।
আমি এমন মানুষ খুব কম দেখেছি যারা অন্যকে ব্যাবসা করার জন্য টাকা দিয়ে সব হারাননি। দুটো কারণে এটা হয়। প্রথমত যিনি ব্যবসার জন্য টাকা নিয়েছেন তিনি নিজেই মার খেয়েছেন, ফেরত কোত্থেকে দেবেন? দুই নম্বর হলো টাকা মেরে দেওয়া। কয়েকমাস লাভ দিয়ে তারপর অস্বীকার! লাভ তো দূরের কথা আসলই ফেরত পাওয়া যায় না। তাই ব্যাবসা যদি নিজে বুঝেন তাহলে করবেন, না বুঝে লাভের আশায় অন্যকে টাকা দিলেন মানে ব্যাংকের চেক কাটলেন না, নিজের ভাগ্যকেই নিজে কেটে দিলেন। দুনিয়ার কোনো সার্জনের সাধ্য নেই তা জোড়া লাগানোর।
জানতেই হবে যে কারণে মধ্যবিত্তরা সর্বস্বান্ত
৭. অন্ধ প্রতিযোগিতা।
আমাদের একটা বাজে অভ্যাস হলো অন্যদের সাথে অন্ধ প্রতিযোগিতা। পাশের বাসায় ৪২ ইঞ্চি টিভি কেনা হয়েছে! আমারও কিনতে হবে। কেউ গাড়ি কিনেছে! ধারকর্জ করে আমাকেও কিনতে হবে। ফলাফল হচ্ছে, পায়ের নিচের মাটি সরে যাওয়া। এ ইঁদুর দৌড়ের কারণে যখন জীবনে ঘোর বর্ষা নামবে তখন হাতে ছাতা থাকবে না। ফালতু প্রতিযোগিতার কারণে সে ছাতা তো কবেই বিক্রি করে দিয়েছি!
তাহলে কী করবেন?
উত্তর: উপরের কোনোটিই করবেন না। টাকাও নিরাপদ থাকবে, আপনিও নিরাপদ থাকবেন। হাতের ছাতা হাতেই থাকুক, বর্ষাকালের জন্য।
সবার জন্য শ্রদ্ধা, শুভকামনা।
আসুনমায়াছড়াই।
(লেখাটি শেয়ার করা যাবে, করলেই বরং খুশি হবো)
Badal Syed