Close Menu
    Facebook X (Twitter) Instagram
    রংপুর ডেইলী
    • Home
    • Rangpur
    • International
    • Islamic
    • Life Style
    • Insurance
    • Health
    Facebook X (Twitter) Instagram
    রংপুর ডেইলী
    Life-story

    আয়িশা বিনতে আবু বকর রা.-এর জীবনী

    মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়াBy মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়াJune 21, 2023Updated:January 11, 2025No Comments17 Mins Read
    content_AishaBintAbuBakr-01

    আয-যুহরী বলেন, “যদি আয়িশা (রা.) এর জ্ঞানকে একত্রিত করা হয় এবং তাকে অন্যান্য সব নারীর জ্ঞানের সাথে তুলনা করা হয় তাহলে তাঁর জ্ঞানই অন্য সকলকে ছাড়িয়ে যাবে।” (উইমেন অ্যারাউন্ড দি ম্যাসেঞ্জার, পৃষ্ঠা ৬৫)

    স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ভালোবাসা, আচরণ, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিভিন্ন অভ্যাস এবং ঘরের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কাজকর্ম সম্পর্কিত হাদিসগুলোর কথা আয়িশা (রা.) ছাড়া চিন্তাই করা যায় না। যদিও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্য স্ত্রীরাও বর্ণণা করেছেন, কিন্তু তিনিই ছিলেন তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

    উরওয়াহ (রহ.) হতে বর্ণিত,’…রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে উম্মু সালামাহ! আয়িশা (রা.) এর ব্যাপারে তোমরা আমাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহর কসম, তোমাদের মধ্যে আয়িশা (রা.) ছাড়া অন্য কারো শয্যায় থাকাকালীন আমার উপর ওহী নাযিল হয়নি।’ (সহীহ বুখারি, ৩৭৭৫)

    আল মুসতাদরাকে আল হাকিম বর্ণনা করেন, “শরিয়াহর এক চতুর্থাংশ আহকামই আয়িশা(রা.) হতে বর্ণিত।”

    তিনি মেডিসিনেও অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি নারীদের ভেতরে সবচেয়ে জ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে মাত্র ৮ বছর পাঁচ মাস সময় কাটিয়েছেন কিন্তু তিনি যেন সব বিষয়ে জ্ঞান রাখতেন।

    আয়িশা (রা.) এর সাথে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিশেষ সম্পর্ক ছিল। একদিন তারা যুদ্ধ শেষে ফিরে আসছিলেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সৈন্যবাহিনীকে তাঁর আগে যাবার নির্দেশ দিলেন এবং তিনি আয়িশা (রা.) এর সাথে পিছনে থেকে গেলেন। তিনি বললেন, “হে আয়িশা, তুমি কি আমার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করতে চাও?”  আয়িশা (রা.) হ্যাঁ সূচক জবাব দিলে তাদের মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। সেসময় আয়িশা (রা.) এর বয়স কম ছিল, তাই তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে হারিয়ে দিতে সক্ষম হন। কিন্তু বছরখানেক পরেই তাদের মধ্যে আবার দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। এইবারে আয়িশা (রা.) হেরে যান। তিনি বলেন, ‘এবার আমার বয়স কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল আর শরীর ভারি হয়ে গিয়েছিল। তাই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে হারিয়ে দিয়েছেন। দৌড়ের শেষে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে এসে তাঁর কাঁধ আমার কাঁধে স্পর্শ করে বলেন, এখন আমরা সমান-সমান। তুমি আমাকে প্রথমবার হারিয়েছিলে, দ্বিতীয়বারে আমি তোমাকে হারালাম।”

    রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর যে স্ত্রীকে অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদা দান করেছিলেন এবং যাকে তিনি অধিক ভালোবাসতেন তিনি আর কেউ নন বরং আয়িশা বিনতে আবু বকর আস-সিদ্দিক (রা.) যিনি উম্মুল মুমিনীন হিসেবে পরিচিত।

    তাঁর বাবা ছিলেন শ্রেষ্ঠ সাহাবি আবু বকর (রা.)। তাঁর মায়ের নাম উম্মে রুমান বিনতে আল-আমির। আবু বকর (রা.) সামান্য কয়েকজন সাহাবিদের একজন যারা কোনদিন কোন মূর্তিপূজা করেননি। তাই বোঝাই যায় তিনিও পরিবারে উত্তম পরিবেশ পেয়েছিলেন।

    তিনি নবুওয়াতের পঞ্চম বর্ষে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে তাঁর বিয়ে ঠিক হয় তাঁর ছয় বছর বয়সে। তিনি তাকে বিয়ে করেন মদিনায় হিজরতের পর এবং আনুষ্ঠানিকভাবে আয়িশা (রা.) নয় বছর বয়সে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে বসবাস শুরু করেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেননি, বরং আল্লাহই তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আয়িশা (রা.) কে বিয়ে করার। তাঁর বয়স কম হবার কারণে তাঁর মুখস্থ করার দক্ষতা ছিল, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সংস্পর্শে বেশিদিন থাকতে পেরেছেন।

    তিনি প্রচুর জানতেন এবং প্রচুর হাদিস বর্ণনাও করেছেন যেগুলোয় সন্দেহের অবকাশ নেই। এজন্য যারা উম্মাহকে ধ্বংস করতে চায়, তারা আয়িশা (রা.) এর মধ্যে দোষ খুঁজে বেড়ায়। কারণ যদি তাকে অপছন্দ করানো যায়, তাহলে তাঁর বর্ণনাকেও অগ্রাহ্য করা যাবে। ফিতনাবাজরা আবু হুরাইরা (রা.) কেও ছোট করার চেষ্টা করে। কারণ তাকে যদি ছোট করা যায়, তাহলে দ্বীনের অনেক বিষয়ই সংশয়ে পড়ে যাবে, কারণ তিনিও প্রচুর হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাই তাদেরকে নিয়ে যারা বাজে মন্তব্য করে তাদের থেকে সাবধান থাকাটাও আমাদের কর্তব্য।

    রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আয়িশা (রা.) এর মধ্যকার দাম্পত্যজীবন একজন স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক কেমন হবে তাঁর সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। আয়িশা (রা.) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছোট্ট একটি ঘরে থাকতেন যা আল-মসজিদ আল-নববীর সাথে সংযুক্ত ছিল। তিনি বলেন, “রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইতিকাফ করতেন তখন তিনি তাঁর মাথা আমার ঘরে ঢুকিয়ে দিতেন যেন আমি তাঁর চুল ঠিক করে দিতে পারি। কখন কখনো আমি তাকে আমার ঘর থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মসজিদে সরবরাহ করতাম ।”

    তিনি ঘরের অবস্থা সম্পর্কে বলেন, “চল্লিশ দিন পার হয়ে যেত কিন্তু রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ঘরে কোন বাতি বা আগুন জ্বলত না।” অর্থাৎ তাদের রান্না করার মত কিছু ছিল না, বাতি জ্বালাবারও তেল ছিল না। তারা শুধু খেজুর আর পানি খেয়েই দিনাদিপাত করতেন।

    আয়িশা (রা.) এর গাল গোলাপী বর্ণের ছিল। তাঁর গালে লজ্জায় রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে হুমায়রা নাম ধরে ডাকতেন। তিনি তাকে হাসাতেন, আয়িশা (রা.) হাসলে তাঁর গোলাপী গালে রক্তিমাভা ছড়িয়ে যেত।

    আয়িশা (রা.) বর্ণনা করেন, যখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পান করতেন তখন তিনি খুঁজে নিতেন কোথায় হতে আয়িশা (রা.) পান করেছেন।  এরপরে তিনি তাঁর দিকে তাকিয়ে সেখানেই মুখ লাগিয়ে পান করতেন আর তাকিয়ে দেখতেন তাঁর স্ত্রীর গাল লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। আয়িশা (রা.) কোন গোশত খেলে তিনি যেখান থেকে গোশত চিবিয়েছেন তাঁর কাছ থেকে সেই গোশতটি নিয়ে তিনি কামড় দেয়া জায়গা খুঁজে বের করতেন এবং সেখানেই কামড় দিতেন এবং তাঁর স্ত্রী আবার লজ্জায় লাল হয়ে যেতেন। কিভাবে আমরা এমন একজন নারীর বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারি? তিনি তো শ্রেষ্ঠ নারীদের একজন, জান্নাতীদের একজন, যাকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবচেয়ে বেশী ভালোবাসতেন।

    একদিন আবিসিনিয়ার কিছু লোক তাদের ধনুক দিয়ে মসজিদেই খেলছিলেন কারণ সেদিন ঈদের দিন ছিল। আয়িশা (রা.) তাদের খেলা দেখতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ব্যাপারটি বললেন যেন তিনি তাকে সেখানে নিয়ে যান খেলা দেখানোর জন্য। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নিয়ে গেলেন। তিনি মসজিদের সামনে তাদের খেলা দেখতে লাগলেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়িশা (রা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আয়িশা, তোমার কি দেখা হয়েছে?’ তিনি বললেন, ‘না।’ তিনি তাকে আবার একই কথা জিজ্ঞেস করলেন এবং একই উত্তর পেলেন। আয়িশা (রা.) বলেন, ‘তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আমাকে প্রথম জিজ্ঞেস করেছিলেন তখনই আমার যথেষ্ট দেখা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি দেখতে চেয়েছিলাম তিনি আমাকে কতটা ভালোবাসেন, তিনি আমাকে কতক্ষণ তাঁর কাঁধে ধরে রাখতে পারবেন।”

    আয়িশা (রা.) একদিন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে বিতর্ক করছিলেন। বিতর্কের এক পর্যায়ে তাঁর গলার স্বর উঁচু হতে থাকে। তাঁর বাবা আবু বকর (রা.) এটা শুনে ফেলেন। তিনি রেগেমেগে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলেনঃ কোন সাহসে তাঁর মেয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে স্বর উঁচু করে! আয়িশা (রা.) চিৎকার করছিলেন কিন্তু তাঁর বাবাকে দেখামাত্রই ভয় পেয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়েন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু বকর (রা.) কে বাধা দিলেন, এরপরে আবু বকর (রা.) সেখান থেকে চলে যান। যাবার পর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়িশা (রা.) কে জিজ্ঞেস করেন, “তোমার বাবার হাত থেকে তোমাকে রক্ষার পরে আমার ব্যাপারে তোমার ধারণা কিরুপ?” আবু বকর (রা.) কিছুক্ষণ পরেই ফিরে এলেন এবং আয়িশা (রা.) ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাসাহাসি শুনতে পেলেন। তাই তিনি বললেন, ‘যেভাবে আমাকে আপনাদের সমস্যায় জড়িত করেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে আপনাদের আনন্দেও আমাকে শরিক করুন।’

    রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়িশা (রা.) কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হে আয়িশা, আল্লাহর কসম, তুমি না বললেও আমি জানি কখন তুমি আমার উপর খুশি থাকো আবার কখন আমার উপর নাখোশ থাকো।” আয়িশা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে রাসূলুল্লাহ, আপনি কিভাবে জানেন?’ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যখন তুমি আমার উপর খুশি থাকো তখন বল মুহাম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রবের কসম, আর যখন রেগে থাকো তখন বল ইব্রাহিমের (আ.) রবের কসম।’ তিনি (রা.) বলেন, ‘হে রাসূলুল্লাহ, আমি হয়ত আপনার নাম সবসময় মুখে নেই না কিন্তু আপনি সবসময়ই আমার হৃদয়ে আছেন।’

    আয়িশা (রা.) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সর্বোচ্চটা দিয়ে ভালোবাসতেন। তাঁর বিরুদ্ধে কিছুই সহ্য করতে পারতেন না। একবার ইহুদীর এক দল রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তারা রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম দেবার বদলে বললঃ আস-সামু আলাইকুম অর্থাৎ আপনার ধ্বংস হোক।  রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদেরও। কিন্তু আয়িশা (রা.) রেগে গিয়েছিলেন। তিনি রেগে বললেন, ‘তোমাদের উপর ধ্বংস ও আল্লাহর গজব পতিত হোক।’

    রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিভিন্ন কষ্টকর সময় পার করেছেন আর তাঁর স্ত্রী হিসেবে তাকেও (রা.) একই ধরণের অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে। হিজরতের পঞ্চম বছরে তিনি আয়িশা (রা.) কে তাঁর সাথে যুদ্ধে নিয়ে যান।

    আবূ রাবী সুলাইমান ইবনু দাউদ (রহঃ) … নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মিথ্যা অপবাদকারীরা যখন তার সম্পর্কে অপবাদ রটনা করল এবং আল্লাহ তা থেকে তার পবিত্রতা ঘোষনা করলেন। রাবীগণ বলেন, আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে বের হওয়ার ইচ্ছা করলে স্বীয় সহধর্মিণীদের মধ্যে কুর’আ ঢালার মাধ্যমে সফর সংগিণী নির্বাচন করতেন। তাদের মধ্যে যার নাম বেরিয়ে আসত তাকেই তিনি নিজের সঙ্গে নিয়ে যেতেন। এক যুদ্ধে যাওয়ার সময় তিনি আমাদের মধ্যে কুর’আ ঢাললেন, তাতে আমার নাম বেরিয়ে এলো। তাই আমি তার সঙ্গে (সফরে) বের হলাম। এটা পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পরের ঘটনা।

    আমাকে হাওদার ভিতরে সাওয়ারীতে উঠানো হতো, আবার হাওদার ভিতরে (থাকা অবস্থায়) নামানো হতো। এভাবেই আমরা সফর করতে থাকলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ যুদ্ধ শেষ করে যখন প্রত্যাবর্তন করলেন এবং আমরা মদিনার কাছে পৌছে গেলাম তখন এক রাতে তিনি (কাফেলাকে) মনযিল ত্যাগ করার ঘোষণা দিলেন। উক্ত ঘোষনা দেওয়ার সময় আমি উঠে সেনাদলকে অতিক্রম করে গেলাম এবং নিজের প্রয়োজন সেরে হাওদায় ফিরে এলাম। তখন বুকে হাত দিয়ে দেখি আযফার দেশীয় সাদাকালো পাথরের তৈরি আমার একটা মালা ছিড়ে পড়ে গেছে। তখন আমি আমার মালার সন্ধানে ফিরে গেলাম, এবং সন্ধান কার্য আমাকে দেরী করিয়ে দিলো। ওদিকে যারা আমার হাওদা উঠিয়ে দিতো তারা তা উঠিয়ে যে উটে আমি সওয়ার হতাম, তার পিঠে রেখে দিলো। তাদের ধারনা ছিলো যে, আমি হাওদাতেই আছি। তখনকার মেয়েরা হালকা পাতলা হতো, মোটা সোটা হতো না। কেননা খুব সামান্য খাবার তারা থেতে পেতো। তাই হাওদায় উঠতে গিয়ে ভার তাদের কাছে অস্বাভাবিক বলে মনে হল না।

    তদুপরি সে সময় আমি অল্প বয়স্ক কিশোরী ছিলাম এবং তখন তারা হাওদা উঠিয়ে উট হাকিয়ে রওনা হয়ে গেলো। এদিকে সেনাদল চলে যাওয়ার পর আমি আমার মালা পেয়ে গেলাম। কিন্তু তাদের জায়গায় ফিরে এসে দেখি, সেখানে কেউ নেই। তখন আমি আমার জায়গায় এসে বসে থাকাই মনন্থ করলাম। আমার ধারনা ছিল যে, আমাকে না পেয়ে আবার এখানে তারা ফিরে আসবে। বসে থাকা অবস্থায় আমার দু চোখে ঘুম নেমে এলে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সাফওয়ান ইবনু মুআত্তাল, যিনি প্রথমে সুলামী এবং পরে যাকওয়ানী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, সেনা দলের পিছনে (পরিদর্শক হিসেবে) থেকে গিয়েছিলেন। সকালের দিকে আমার অবস্থান স্থলের কাছাকাছি এসে পৌছলেন এবং একজন ঘুমন্ত মানুষের অবয়ব দেখতে পেয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। পর্দার বিধান নাযিলের আগে তিনি আমাকে দেখেছিলেন। সে সময় তিনি উট বসাচ্ছিলেন, সে সময় তার ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ শব্দে আমি জেগে গেলাম। তিনি উটের সামনের পা চেপে ধরলে আমি তাতে সওয়ার হলাম। আর তিনি আমাকে নিয়ে সাওয়ারী হাকিয়ে চললেন।

    সেনাদল ঠিক দুপুরে যখন অবতরণ করে বিশ্রাম করছিল, তখন আমরা

    সেনাদলে পৌছলাম। সে সময় যারা ধ্বংস হওয়ার, তারা ধ্বংস হল। অপবাদ রটনায় যে নেতৃত্ব দিয়েছিল, সে হল (মুনাফিকের সরদার) আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালুল। আমরা মদিনায় উপনীত হলাম এবং আমি এসেই একমাস অসুস্থতায় ভোগলাম। এদিকে কিছু লোক অপবাদ রটনাকারীদের রটনা নিয়ে চর্চা করতে থাকল। আমার অসুস্থার সময় এ বিষয়টি আমাকে সন্দিহান করে তুললো যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তরফ থেকে সেই স্নেহ আমি অনুভব করছিলাম না, যা আমার অসুস্থতার সময় সচরাচর আমি অনুভব করতাম। তিনি শুধু ঘরে প্রবেশ কলে সালাম দিয়ে বলতেন কেমন আছ? আমি সে বিষয়ের কিছুই জানতাম না। শেষ পর্যন্ত খুব দুর্বল হয়ে পড়লাম।

    (একরাতে) আমি ও উম্মু মিসতাহ্ প্রয়োজন সারার উদ্দেশ্যে ময়দানে বের হলাম। আমরা রাতেই শুধু সে দিকে যেতাম। এ আমাদের ঘরগুলোর নিকটবর্তী স্থানে পায়খানা বানানোর আগের নিয়ম। জংগলে কিংবা দুরবর্তী স্থানে প্রয়োজন সারার ব্যাপারে আমাদের অবস্থাটা প্রথম যুগের আরবদের মতই ছিলো। যাই হোক, আমি এবং উম্মু মিসতাহ বিনত আবূ রুহম হেটে চলছিলাম। ইত্যবসরে সে তার চাঁদরে পা জড়িয়ে হোচট খেলো এবং (পড়ে গিয়ে) বললো মিসতাহ এর জন্য দুর্ভোগ। আমি তাকে বললাম, তুমি খুব খারাপ কথা বলেছ। বদর যুদ্ধে শরীক হয়েছে, এমন এক লোককে তুমি অভিশাপ দিচ্ছ! সে বলল, হে সরলমান! (তোমার সম্পর্কে) যে সব কথা তারা উঠিয়েছে, তা কি তুমি শুনোনি? এরপর অপবাদ রটনাকারীদের সব রটনা সম্পর্কে সে আমাকে অবহিত করলো।

    তখন আমার রোগের উপর রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলো। আমি ঘরে ফিরে আসার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, কেমন আছো? আমি বললাম, আমাকে আমার পিতা-মাতার কাছে যাওয়ার অনুমতি দিন। তিনি (আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তখন তাদের (পিতা-মাতার) কাছ থেকে এ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাচ্ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি আমার পিতা-মাতার কাছে গেলাম। তারপর আমি মাকে বললাম, লোকেরা কি বলাবলি করে? তিনি বললেন, বেটি! ব্যাপারটাকে নিজের জন্য হালকাভাবেই গ্রহন কর। আল্লাহর কসম! এমন সুন্দরী নারী খুব কমই আছে, যাকে তার স্বামী ভালোবাসে আর তার একাধিক সতীনও আছে; অথচ ওরা তাকে উত্ত্যক্ত করে না।

    আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ্। লোকেরা সত্যি তবে এসব কথা রটিয়েছে? তিনি (আয়িশা) বলেন, ভোর পর্যন্ত সে রাত আমার এমনভাবে কেটে গেলো যে, চোখের পানি আমার বন্ধ হল না এবং ঘুমের একটু পরশও পেলাম না। এভাবে ভোর হল। পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াহীর বিলম্ব দেখে আপন স্ত্রীকে বর্জনের ব্যাপারে ইবনু আবূ তালিব ও উসামা ইবন যায়দকে ডেকে পাঠালেন। যাই হোক; উসামা পরিবারের জন্য তার (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভালোবাসার প্রতি লক্ষ্য করে পরামর্শ দিতে গিয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম (তার সম্পর্কে) ভালো ছাড়া অন্য কিছু আমরা জানিনা, আর আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিছুতেই আল্লাহ্ আপনার পথ সংকীর্ণ করেননি। তাকে ছাড়া আরো অনেক মহিলা আছে। আপনি না হয় বাঁদীকে জিজ্ঞাসা করুন সে আপনাকে সত্য কথা বলবে।

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন (বাঁদী) বারীরাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন। হে বারীরা! তুমি কি তার মধ্যে সন্দেহজনক কিছু দেখতে পেয়েছ? বারীরা বলল, আপনাকে যিনি সত্যসহ পাঠিয়েছেন, তার কসম করে বলছি, না তেমন কিছু দেখিনি এই একটি অবস্থায়ই দেখেছি যে তিন অল্পবয়স্কা কিশোরী। আর তাই আটা-খামীর গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সেই ফাকে বকরী এসে তা খেয়ে ফেলে। সে দিনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মসজিদে) ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালুলের ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচার উপায় জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার পরিবারকে কেন্দ্র করে যে লোক আমাকে জ্বালাতন করেছে, তার মুকাবিলায় কে প্রতিকার করবে? আল্লাহর কসম, আমি তো আমার স্ত্রী সম্পর্কে ভালো ছাড়া অন্য কিছু জানিনা। আর এমন ব্যাক্তিকে জড়িয়ে তারা কথা তুলেছে, যার সম্পর্কে ভালো ছাড়া অন্য কিছু আমি জানিনা আর সে তো আমার সাথে ছাড়া আমার ঘরে কখনও প্রবেশ করত না।

    তখন সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম, আমি তার প্রতিকার করবো। যদি সে আউস গোত্রের কেউ হয়ে থাকে, তাহলে তার গর্দান উড়িয়ে দিব; আর যদি সে আমাদের খাযরাজ গোত্রীয় ভাইদের কেউ হয়, তাহলে আপনি তার ব্যাপারে আমাদের নির্দেশ দিবেন, আমরা আপনার নির্দেশ পালন করব। খাযরাজ গোত্রপতি সা’দ ইবনু উবাদা (রাঃ) তখন দাঁড়িয়ে গেলেন। এর আগে তিনি ভালো লোকই ছিলেন। আসলে গোত্র প্রীতি তাকে পেয়ে বসেছিলো। তিনি বললেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আল্লাহর কসম! তুমি তাকে হত্যা করতে পারনে না, সে শক্তি তোমার নেই। তখনি উসায়িদ ইবনুল হুযাইর (রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, তুমিই মিথ্যা বলছ। আল্লাহর কসম! আমরা অবশ্যই তাকে হত্যা করে ছাড়ব। আসলে তুমি একজন মুনাফিক। তাই মুনাফিকদের পক্ষ হয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়েছে। এরপর আউস ও খাযরাজ উভয় গোত্রই উত্তেজিত হয়ে উঠলো। এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে থাকা অবস্থায়ই তারা (লড়াইয়ে) উদ্যত হল। তখন তিনি নেমে তাদের চুপ করালেন। এতে সবাই শান্ত হল আর তিনিও নীরবতা অবলম্বন করলেন।

    আয়িশা (রাঃ) বলেন, সেদিন সারাক্ষণ আমি কাঁদলাম, চোখের পানি

    আমার শুকালনা এবং ঘুমের সামান্য পরশও পেলাম না। আমার পিতা-মাতা আমার পাশে পাশেই থাকলেন। পুরো রাত দিন আমি কেদেই কাটালাম। আমার মনে হল, কান্না বুঝি আমার কলিজা বিদীর্ণ করে দিবে। তিনি (আয়িশা) বলেন, তারা (পিতা-মাতা) উভয়ে আমার কাছেই বসা ছিলেন, আর আমি কাঁদছিলাম। ইতিমধ্যে এক আনসারী মহিলা ভিতরে আসার অনুমতি চাইল। আমি তাকে অনুমতি দিলাম। সেও আমার সঙ্গে বসে কাঁদতে শুরু করল। আমরা এ অবস্থায় থাকতেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবেশ করে (আমার কাছে) বসলেন, অথচ যে দিন থেকে আমার সম্পর্কে অপবাদ রটানো হয়েছে সেদিন থেকে তিনি আমার কাছে বসেননি। এর মধ্যে একমাস কেটে গিয়েছিল। অথচ আমার সম্পর্কে তার কাছে কোন ওয়াহী নাযিল হল না।

    তিনি (আয়িশা) বলেন, এরপর হামদ ও সানা পাঠ করে তিনি বললেন, হে আয়িশা! তোমার সম্পর্কে এ ধরনের কথা আমার কাছে পৌছেছে। তুমি নির্দোষ হলে আল্লাহ্ অবশ্যই তোমার নির্দোষিতা ঘোষনা করবেন। আর যদি তুমি কোন গুনাহে জড়িয়ে গিয়ে থাক, তাহলে আল্লাহর কাছে তাওবা ও ইসতিগফার কর। কেননা, বান্দা নিজের পাপ স্বীকার করে তওবা করলে আল্লাহ তাওবা কবুল করেন। তিনি যখন তার বক্তব্য শেষ করলেন, তখন আমার অশ্রু বন্ধ হয়ে গেল। এমনকি এক বিন্দু অশ্রুও আমি অনুভব করলাম না। আমার পিতাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমার তরফ থেকে জওয়াব দিন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, আমি বুঝে উঠতে পারি না, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কি বলব? এরপর আমার (মা-কে) বললাম, আমার তরফ থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথার জওয়াব দিন। তিনিও বললেন, আল্লাহর কসম! আমি বুঝি উঠতে পারি না, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে কি বলব?

    আমি তখন অল্প বয়স্কা কিশোরী! কুরআনও খুব বেশী পড়িনি। তবুও আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমার জানতে বাকী নেই যে, লোকেরা যা রটাচ্ছে, তা আপনারা শুনতে পেয়েছেন এবং আপনাদের মনে তা বসে গেছে, ফলে আপনারা তা বিশ্বাস করে নিয়েছেন। এখন যদি আমি আপনাদের বলি যে, আমি নিষ্পাপ আর আল্লাহ জানেন, আমি অবশ্যই নিষ্পাপ, তবু আপনারা আমার সে কথা বিশ্বাস করবেন না। আর যদি আপনাদের কাছে কোন বিষয় আমি স্বীকার করি, অথচ আল্লাহ জানেন আমি নিষ্পাপ তাহলে অবশ্যই আপনারা আমাকে বিশ্বাস করে নিবেন। আল্লাহর কসম, ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) এর পিতার ঘটনা ছাড়া আমি আপনাদের জন্য কোন দৃষ্টান্ত খুজে পাচ্ছি না। যখন তিনি বলেছিলেন, পূর্ণ ধৈর্যধারনই আমার জন্য শ্রেয়। আর তোমরা যা বলছো সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই আমার সাহায্যকারী।

    এরপর আমি আমার বিছানায় পার্শ্ব পরিবর্তন করে নিলাম। এটা আমি অবশ্যই আশা করছিলাম যে, আল্লাহ আমাকে নির্দোষ ঘোষনা করবেন।

    কিন্তু আল্লাহর কসম! এ আমি ভাবিনি যে, আমার ব্যাপারে কোন ওয়াহী নাযিল হবে। কুরআনে আমার ব্যাপারে কোন কথা বলা হবে, এ বিষয়ে আমি নিজেকে উপযুক্ত মনে করি না। তবে আমি আশা করছিলাম যে, নিদ্রায় আল্লাহর রাসূল এমন কোন স্বপ্ন দেখবেন, যা আমাকে নির্দোষ প্রমাণ করবে। কিন্তু আল্লাহর কসম! তিনি তার আসন ছেড়ে তখনও উঠে যাননি এবং ঘরের কেউ বেরিয়েও যায়নি, এরই মধ্যে তার উপর ওয়াহী নাযিল হওয়া শুরু হয়ে গেল এবং (ওয়াহী নাযিলের সময়) তিনি যে রূপ কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতেন, সে রূপ অবস্থার সম্মুখীন হন। এমনকি সে মুহুর্তে শীতের দিনেও তার শরীর থেকে মুক্তার ন্যায় ফোটা ফোটা ঘাম ঝরে পড়তো।

    যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ওয়াহীর সে অবস্থা কেটে গেল, তখন তিনি হাসছিলেন। আর প্রথম যে বাক্যটি তিনি উচ্চারন করলেন তা ছিল এই যে, আমাকে বললেন, হে আয়িশা! আল্লাহর প্রশংসা করো। কেননা, তিনি তোমাকে নির্দোষ ঘোষনা করেছেন। আমার মাতা তখন আমাকে বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যাও। (কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর) আমি বললাম, না, আল্লাহর কসম! আমি তার কাছে যাবো না এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো প্রশংসাও করব না। আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেন ‏إِنَّ الَّذِينَ جَاءُوا بِالإِفْكِ عُصْبَةٌ مِنْكُمْ যথন আমার সাফাই সম্পর্কে নাযিল হল তখন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! নিকটাত্মীয়তার কারণে মিসতাহ্ ইবনু উসাসার জন্য তিনি যা খরচ করতেন, আয়িশা (রাঃ) সম্পর্কে এ ধরনের কথা বলার পর মিসতার জন্য আমি আর কখনও খরচ করবো না।

    তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করলেন ‏وَلاَ يَأْتَلِ أُولُو الْفَضْلِ مِنْكُمْ وَالسَّعَةِ‏)‏ إِلَى قَوْلِهِ ‏(‏غَفُورٌ رَحِيمٌ‏ তোমাদের মধ্যে যারা নিয়ামতপ্রাপ্ত ও স্বচ্ছল, তারা যেন দান না করার কসম না করে আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মেহেরবান। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম। আমি অবশ্যই চাই আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন। এরপর তিনি মিসতাহ্ কে যা দিতেন, তা পুনরায় দিতে লাগলেন।

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যায়নাব বিনতে জাহাশকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি বললেন, হে যায়নাব! (আয়িশা সম্পর্কে) তুমি কি জানো? তুমি কি দেখছো? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার কান, আমি আমার চোখের হিফাজত করতে চাই আল্লাহর কসম তার সম্পর্কে ভালো ছাড়া অন্য কিছু আমি জানিনা। আয়িশা (রাঃ) বলেন, অথচ তিনই আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। কিন্তু পরহেযগারীর কারণে আল্লাহ তার হিফাযত করেছেন।

    আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এই গুজব ছড়ানোর প্রধান কারিগত। তাকে বলা হত মুনাফিকদের সর্দার। আয়িশা (রা.) এর নির্দোষিতা প্রমাণের জন্য কুরআনে দশটি আয়াত নাযিল হয়েছে।

    আয়িশা (রা.) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে তাঁর জীবদ্দশা পর্যন্ত অতিবাহিত করেছেন। ১১ হিজরিতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে যান, সেখান থেকে তিনি আর কখনই সুস্থ হতে পারেন নি। আয়িশা (রা.) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অন্তিম মূহুর্ত বর্ণণা করেন। তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পবিত্র মস্তক আমার বুকের উপর শায়িত ছিল। সেসময় আমার ঘরে আমার ভাই আব্দুর রহমান প্রবেশ করে। তার মুখে সিওয়াক ছিল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিসওয়াকের দিকে তাকালেন। আমি জানতাম রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিসওয়াকটি চাইছেন তাই আমি আব্দুর রহমানের কাছ থেকে মিসওয়াকটি নিলাম। আমি মিসওয়াকটি চিবিয়ে নরম করে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে দিলাম। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মুখ এবং দাঁত মিসওয়াক দিয়ে পরিষ্কার করলেন। তারপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার তাঁর মাথা আমার বুকে রাখলেন এবং তার হাত আসমানের দিকে প্রসারিত করলেন।  তিনি বলছিলেন, ‘আমাকে মহিমান্বিত প্রতিপালকের কাছে নিয়ে যাও।’ তখনই আমি বুঝেছিলাম রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দুনিয়ায় থাকা অথবা আল্লাহ কর্তৃক তাঁর আত্মাকে নেবার যেকোন একটি বাছার সুযোগ দেয়া হয়েছে।’

    আয়িশা (রা.) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মারা যান তখন তাঁর মাথা আমার বুক এবং ঘাড়ের মাঝে ছিল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মৃত্যূর পর আয়িশা (রা.) মদিনাতেই থেকে যান। সাহাবিরা সবসময়ই তার কাছে যেতেন বিভিন্ন হাদিসের ব্যাখ্যা জানার প্রয়োজনে। সাহাবিরা (রা.) যখন কোন বিষয়ে মতপার্থক্যে লিপ্ত হতেন তখন এর মীমাংসার জন্য তারা আয়িশা (রা.) এর কাছেই যেতেন।

    উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রা.) ৮৫ হিজরির ১৭ নং রামাদানে মৃত্যুবরণ করে জান্নাতে পাড়ি জমান।

    মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া
    • Website

    আমার নাম মাহাজাবিন শরমিন প্রিয়া। আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছি। ইসলাম, প্রযুক্তি এবং গণিতসহ বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখিতে আমার গভীর আগ্রহ রয়েছে। আমার জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে আমি পাঠকদের জন্য অর্থবহ ও আকর্ষণীয় কন্টেন্ট তৈরি করার চেষ্টা করি। মাহাজাবিনের লেখা বিষয়বস্তু তথ্যসমৃদ্ধ এবং পাঠকের জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গি বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে প্রমাণিত হয়।

    Related Posts

    মানুষ কেন সমালোচনা করে?

    January 2, 2025

    টাকা নাকি জীবন

    January 2, 2025

    আবু লুবাবা রা. ও জায়িদ ইবনু সাবিত রা.-এর জীবনী

    September 13, 2023
    Leave A Reply Cancel Reply

    সাম্প্রতিক
    • সুস্থ যৌনজীবনের জন্য জরুরি ১০টি পরামর্শ
    • গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর যত্নের সম্পূর্ণ গাইড
    • ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর ও মনকে সুস্থ রাখার কৌশল
    • ডিপ্রেশন মোকাবিলায় প্রাকৃতিক সমাধান
    • ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা
    • শিশুদের সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করার উপায়
    • শীতকালে সুস্থ থাকার ৭টি টিপস
    • গরমে সুস্থ থাকার জন্য করণীয় ও বর্জনীয়
    • শরীরের জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব
    • মানসিক চাপ কমিয়ে সুস্থ থাকার কৌশল
    • শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়
    • চোখের সুস্থতা বজায় রাখার ঘরোয়া টিপস
    • হার্টের যত্নে কোন খাবার বেশি খাবেন
    • উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রাকৃতিক পদ্ধতি
    • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ উপায়
    • প্রেমে একে অপরকে সময় দেওয়ার গুরুত্ব
    • দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে নতুন করে সাজানোর কৌশল
    • প্রেমে আস্থা নষ্ট হলে কীভাবে ফিরিয়ে আনবেন
    • সোশ্যাল মিডিয়ায় রিলেশনশিপ পরিচালনার টিপস
    • প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে রাগ কমানোর ৫টি পদ্ধতি
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.