সিলেটের জৈন্তাপুরের শাড়িঘাট হাইস্কুলে ২০২০ সালে শিক্ষার্থী ছিল ৭৪৬ জন। এক বছর পর ২০২১ সালে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী কমে দাঁড়ায় ৬৮৪ জনে। বিদ্যালয়টির ১৪ জন শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে যায় গত বছর। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কাছে এই তথ্য দিয়েছে বিদ্যালয়টি।
সরকারের প্রাথমিক তথ্য বলছে, শাড়িঘাট হাইস্কুলের মতো করোনাকালে সারা দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে মোট শিক্ষার্থী এক বছরের ব্যবধানে কমেছে। সাধারণত প্রতিবছর শিক্ষার্থী বৃদ্ধির প্রবণতা থাকলেও ২০২১ সালে মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী আগের বছরের তুলনায় ৬২ হাজার ১০৪ জন কমেছে। অথচ মাধ্যমিকে গত বছর প্রায় ২০০ বিদ্যালয় বেড়েছে। তবে কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বেড়েছে বর্তমানে দেশে মোট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২০ হাজার ২৯৪টি।
শাড়িঘাট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বদিউল আলম বলেন, তিনি বাল্যবিবাহ বন্ধে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু করোনায় বন্ধের সময় কিছু শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে যায়। আবার অভিভাবকের আয় কমে যাওয়ায় কিছু শিক্ষার্থী শ্রমে নিযুক্ত হয়েছে। করোনাকালে এসব কারণে কিছু শিক্ষার্থী কমেছে।
ব্যানবেইসের প্রাথমিক যে তথ্যের কথা বলা হচ্ছে, তাতে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী কমার কথা বলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) প্রতিবছর সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। অনলাইনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ২০২১ সালে সংগ্রহ করার পর এখন প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। ব্যানবেইসের প্রাথমিক তথ্য বলছে, দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে এখন মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ১ লাখ ৯০ হাজার ২২ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ১ কোটি ২ লাখ ৫২ হাজারের বেশি।
মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী কমেছে
দেশে এখন প্রাথমিক-পরবর্তী স্তরগুলোতে (ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে উচ্চশিক্ষা ও পেশাগত শিক্ষা) মোট শিক্ষার্থী ২ কোটি ৪ লাখ ৫১ হাজারের বেশি, যা ২০২০ সালে ছিল ১ কোটি ৯৪ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি। অর্থাৎ মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী কমলেও অন্যান্য স্তর মিলিয়ে প্রাথমিকের পরের স্তরগুলোতে মোট শিক্ষার্থী বেড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যানবেইসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার ভাষ্য, তাঁরা প্রাথমিকভাবে জানতে পারেন, মাধ্যমিকের অনেক শিক্ষার্থী শ্রমে জড়িয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে অনেকেই তৈরি পোশাকশিল্পে চাকরি নিচ্ছে। মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী কমার এটি একটি কারণ হতে পারে। তবে যেমনটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, সে রকম পরিমাণ শিক্ষার্থী কিন্তু কমেনি। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছরের মধ্যে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হয়নি। আবার গত বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হয়েছে শুধু গ্রুপভিত্তিক তিন বিষয়ে। এর ফলে কখনো সব শিক্ষার্থী পাস করেছে বা কখনো শতভাগের কাছাকাছি শিক্ষার্থী পাস করেছে। এ জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থী বেড়েছে। এ ছাড়া ২০২০ সালে মাধ্যমিক স্তরে বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই সব শিক্ষার্থী ওপরের ক্লাসে উঠছে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং অষ্টম শ্রেণির জেএসসি পরীক্ষাও দুই বছর হয়নি। ফলে পাস-ফেলজনিত কারণে বিদ্যালয় ছাড়ার কারণ ছিল না। শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহের মতো কিছু কারণে মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী কম হওয়ার কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলে আসছিলেন, করোনার এই সংকটের কারণে বাল্যবিবাহ, ঝরে পড়া, শিশুশ্রমসহ নানামুখী প্রভাব পড়তে পারে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২০ সালে ঝরে পড়ার হার ছিল ৩৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। তবে ২০২১ সালে কত শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ল, সেই হিসাব এখনো বের করতে পারেনি ব্যানবেইস।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ বলেন, ব্যানবেইসের প্রাথমিক যে তথ্যের কথা বলা হচ্ছে, তাতে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী কমার কথা বলা হচ্ছে। এটা হতেই পারেই। তবে তথ্যের নির্ভরযোগ্যতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আর ওপরের শ্রেণিতে শিক্ষার্থী বৃদ্ধির কারণ হতে পারে পরীক্ষায় সবার পাস করা বা অধিকাংশের পাস করার বিষয়টি। কারণ, যখন একজন শিক্ষার্থী ওপরের স্তরে চলে যায়, তখন কষ্ট করে হলেও শেষ করতে চায়। তবে এসব বিষয়ে আরও বিশ্লেষণ হওয়া দরকার।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ বলেন, ব্যানবেইসের প্রাথমিক যে তথ্যের কথা বলা হচ্ছে, তাতে মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী কমার কথা বলা হচ্ছে। এটা হতেই পারেই। তবে তথ্যের নির্ভরযোগ্যতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আর ওপরের শ্রেণিতে শিক্ষার্থী বৃদ্ধির কারণ হতে পারে পরীক্ষায় সবার পাস করা বা অধিকাংশের পাস করার বিষয়টি। কারণ, যখন একজন শিক্ষার্থী ওপরের স্তরে চলে যায়, তখন কষ্ট করে হলেও শেষ করতে চায়। তবে এসব বিষয়ে আরও বিশ্লেষণ হওয়া দরকার।