ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার দুই ব্যক্তি ২২ দিন কারাগারে ছিলেন। ১৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাঁরা মুক্তি পেয়েছেন। কোনো অপরাধ না করে কারাভোগ করায় তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।বিনা অপরাধে কারাভোগ করা ওই দুই ব্যক্তি হলেন ক্ষেতলাল উপজেলার মহব্বতপুর সাখিদারপাড়া গ্রামের শফিউল ইসলাম (৫০) ও মঞ্জুরুল ইসলাম (২৮)। তাঁরা সম্পর্কে শ্বশুর-জামাতা। ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রমাণিত হওয়ায় জয়পুরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন এবং তাঁদের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। ওই আদেশ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ তাঁদের মুক্তি দেয়।
ভুক্তভোগী শ্বশুর শফিউল ইসলাম ও জামাতা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, গত ২৮ ডিসেম্বর রাতে তাঁরা খাওয়া শেষে নিজেদের বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েন। গভীর রাতে ক্ষেতলাল থানার পুলিশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে শ্বশুর ও জামাতার বাড়ি ঘেরাও করে। একপর্যায়ে পুলিশ বাড়ির ভেতরে ঢুকে তাঁদের দুজনের নাম জিজ্ঞাসা করে। তাঁরা নিজেদের নাম বলেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের নামে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর সিল ও বিচারকের স্বাক্ষরযুক্ত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখান। এরপর পুলিশ তাঁদের হাতকড়া পরিয়ে ক্ষেতলাল থানায় নিয়ে যায়।
শফিউল ও মঞ্জুরুল ইসলাম আরও বলেন, ২৯ ডিসেম্বর ক্ষেতলাল থানা-পুলিশ তাঁদের দুজনকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (ক্ষেতলাল) বিচারক আতিকুর ইসলামের আদালতে হাজির করে। তাঁরা আইনজীবীর মাধ্যমে ওই আদালতের বিচারকের কাছে জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁদের জয়পুরহাট জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেন। জয়পুরহাট কারাগার থেকে ৭ জানুয়ারি তাঁদের ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ১৮ জানুয়ারি তাঁরা ছাড়া পান। সেখানে থাকা অবস্থায়ই তাঁরা ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় কারাগারে ছিলেন বলে জানতে পারেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর মামলা নম্বর ৭২/২০২০-এর গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় শ্বশুর শফিউল ইসলাম ও জামাতা মঞ্জুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলার বাদী তাহমিনা রহমান। এ মামলায় তাহমিনা তাঁর স্বামী এস এম আবদুস সামাদকে আসামি করেন। এজাহারে আসামির বাড়ি পাবনার সদর উপজেলার চরপ্রতাপপুর উল্লেখ করা হয়। যৌতুক দাবি করার অভিযোগে তাহমিনা রহমান স্বামীর বিরুদ্ধে ওই মামলা করেছিলেন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, শ্বশুর ও জামাতাকে গ্রেপ্তারের পর জয়পুরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারকের কাছে খণ্ড নথি পাঠানো হয়। ঢাকার ওই আদালতের বিচারক ৭২/২০২০ নম্বর মামলার নথি পর্যালোচনা করে শফিউল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলাম নামের কেউ এ মামলার আসামি নন এবং তাঁদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জাল ও ভুয়া বলে জয়পুরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫ জানুয়ারি একটি আদেশের অনুলিপি পাঠান। ওই আদেশের অনুলিপি পেয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলম কারাগারে থাকা শফিউল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলামকে ১১ জানুয়ারি অব্যাহতি দেন এবং তাঁদের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে বিচারক জাহাঙ্গীর আলম জাল ও ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রস্তুত করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ডিবি পুলিশকে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলেন।
শফিউল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে ও আমার জামাতাকে ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করে ২২ দিন কারাগারে রাখা হয়েছিল। আমাদের মতো আর যেন কোনো নির্দোষ ব্যক্তি ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় কারাভোগ ও হয়রানির শিকার না হয়। বিনা অপরাধে কারাভোগের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ মহব্বতপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হাকিম বলেন, ‘শফিউল ইসলাম ও তাঁর জামাই মঞ্জুরুল ইসলাম কৃষিকাজ করেন। ঢাকার আদালতে কীভাবে তাঁদের নাম গেল, এটা আমরা জানতে চাই।’
গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় শফিউল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যেভাবে ইস্যু করা হয়, তার সবই ছিল।নীরেন্দ্রনাথ মণ্ডল, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ক্ষেতলাল থানাএ বিষয়ে ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নীরেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় শফিউল ইসলাম ও মঞ্জুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যেভাবে ইস্যু করা হয়, তার সবই সঠিক ছিল।’জয়পুরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছিল। পরে ওই দুই ব্যক্তির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ভুয়া বলে নিশ্চিত হয়ে আদালত তাঁদের দুজনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। ঘটনাটি ডিবি পুলিশ তদন্ত করছে।