নোয়াখালীর ডিসির কাছে কাদের মির্জার বিরুদ্ধে সাত চেয়ারম্যান প্রার্থীর অভিযোগ

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে অংশ নেওয়া সাতটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের কর্মী–সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে তাঁরা লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগকারী সাতজন প্রার্থীই কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের অনুসারী। এর মধ্যে আবার তিনটি ইউনিয়নের তিনজন প্রার্থী সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার ভাগনে।ওই সাত ইউপি চেয়ারম্যানের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাদের মির্জা সব কটি অভিযোগই মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে বুধবার সন্ধ্যায় তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সাতটি ইউনিয়নের সাতজন প্রার্থী তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। অথচ এর মধ্যে দুটি ইউনিয়নে তিনি এখন পর্যন্ত কোনো প্রচারণাতেই যাননি।

অভিযোগকারী সাতজন প্রার্থী হলেন সেতুমন্ত্রীর তিন ভাগনে চর পার্বতী ইউনিয়নের মাহবুবুর রশিদ, রামপুরের সিরাজিস সালেকিন ও চর ফকিরার জায়দল হক এবং মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী নজরুল ইসলাম, চর এলাহীর আবদুর রাজ্জাক, চর হাজারীর নুরুজ্জামান, সিরাজপুরে মাঈন উদ্দিন।অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি কোম্পানীগঞ্জের আটটি ইউপির নির্বাচনে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুর কাদের মির্জা তাঁর জনবিচ্ছিন্ন অনুসারীদের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে কেন্দ্র দখল করে নির্বাচিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই চেষ্টার অংশ হিসেবে প্রতিটি ইউনিয়নে কাদের মির্জা তাঁর অনুসারী প্রার্থীদের প্রচারণার নামে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিয়ে গণসংযোগ করছেন। এ নিয়ে প্রতিটি এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে।

ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীদের লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, কাদের মির্জার এসব কর্মকাণ্ডে আসন্ন নির্বাচনে সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অবিলম্বে কাদের মির্জার গাড়িবহরে থাকা সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করা হচ্ছে।সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় ঘোরাফেরা করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাদের মির্জা বলেন, ‘আমি যদি সন্ত্রাসী নিয়ে ঘেরাফেরা করি, প্রশাসন আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। আমি চাই একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচনে আমার প্রার্থীরা হেরে গেলে আমি বিজয়ীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেব। আসল কথা হলো, যাঁরা আমার নামে অভিযোগ করেছেন, তাঁরা সুষ্ঠু নির্বাচন হলে পরাজিত হবেন, এই আশঙ্কায় এমন অপপ্রচার শুরু করছেন।’

সাত চেয়ারম্যান প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বুধবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, ‘অভিযোগগুলো আলাদাভাবে দেওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণাকালে জাতীয় নির্বাচন ও বৃহত্তর নোয়াখালীর দলীয় সাংসদদের নিয়োগ-বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজি নিয়ে কথা বলে আলোচনায় আসেন বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই। একপর্যায়ে কাদের মির্জা তাঁর বড় ভাই ও ভাবিকে নিয়েও নানা সমালোচনামূলক বক্তব্য দেন। এতে স্থানীয় রাজনীতিতে বিভক্তি দেখা দেয়।

দলীয় ওই বিরোধের ছায়া পড়েছে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও। নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে উভয় পক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে দলীয়ভাবে কাউকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। উপজেলার আটটি ইউনিয়নে কাদের মির্জা তাঁর একজন করে অনুসারীকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। অন্যদিকে প্রতিপক্ষ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বাধীন উপজেলা আওয়ামী লীগও প্রত্যেক ইউনিয়নে একজনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। দুই পক্ষ সমানভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের ত্যাগী ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। কিন্তু কাদের মির্জা হুমকি-ধমকি দিয়ে নানাভাবে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছেন।

By নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের অল্প সময়ে গড়ে ওঠা পপুলার অনলাইন পর্টাল রংপুর ডেইলী যেখানে আমরা আমাদের জীবনের সাথে বাস্তবঘনিষ্ট আপডেট সংবাদ সর্বদা পাবলিশ করি। সর্বদা আপডেট পেতে আমাদের পর্টালটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

Related Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *