চট্টগ্রাম ওয়াসা এই অর্থবছরে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ২১৪ কোটি টাকা। কিন্তু প্রথম পাঁচ মাসে (নভেম্বর পর্যন্ত) আয় হয়েছে মাত্র ৬০ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র সাড়ে ২৭ শতাংশ। আয় ঠিকমতো না হলেও নিজের বেতন-ভাতা ঠিকই বৃদ্ধি করতে চান সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম ফজলুল্লাহ।আজ সোমবার ওয়াসার ৬৫তম বোর্ড সভায় অন্যতম আলোচ্য সূচি ছিল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহর বেতন-ভাতা বৃদ্ধি। বর্তমানে তাঁর মূল বেতন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এখন তিনি চান সাড়ে চার লাখ টাকা। অর্থাৎ একলাফেই ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা বা দেড় শ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির আবেদন করেছেন তিনি।
ব্যবস্থাপনা পরিচালকের এই আবেদনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বোর্ড সদস্যরা। তাই সভায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বেতন বৃদ্ধির আবেদনের বিষয়টি যাচাই–বাছাই করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুহম্মদ ইবরাহিমকে।আজ সোমবার ভার্চ্যুয়ালি এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বোর্ড চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে সরাসরি কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। তবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহর মুঠোফোনে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত বছরের ৪ মে অনুষ্ঠিত ৬১তম বোর্ড সভায়ও এ কে এম ফজলুল্লাহর বেতন-ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছিল। তখন বোর্ড দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছিল। এর প্রধান ছিলেন তৎকালীন বোর্ড সদস্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সত্যজিৎ কর্মকার। সদস্য ছিলেন বোর্ড সদস্য শওকত হোসেন। তবে ওই কমিটি কোনো সভা করেনি এবং প্রতিবেতনও জমা দেয়নি। ফলে নতুন করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।এই প্রসঙ্গে শওকত হোসেন বলেন, করোনা মহামারির কারণে তাঁরা কোনো সভা করতে পারেননি। তাই প্রতিবেদনও দেননি। এখন নতুন করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। তবে আগামী বোর্ড সভায় প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, করোনা মহামারির সময় গত বছরের মে মাসে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির আবেদন করেছিলেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ। ওই সময় ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের বেতন পৌনে দুই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছিল।গত বছরের ২২ জুন ‘চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডিও বেতন বাড়াতে চান’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওয়াসার নথিপত্র অনুযায়ী, এ কে এম ফজলুল্লাহের মূল বেতন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তিনি চান সাড়ে ৪ লাখ টাকা। তাঁর আবেদন মতে, ঢাকা ও খুলনা ওয়াসার এমডিদের মূল বেতন চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির দ্বিগুণ বা তার বেশি। তাই নিজের বেতন-ভাতা বাড়ানোর আবেদন করেছেন।
২০১১ সালে ঢাকা ওয়াসার আদলে চট্টগ্রাম ওয়াসাতেও এমডি পদ তৈরি করা হয়। এমডি পদে নিয়োগ পান তৎকালীন চেয়ারম্যান এ কে এম ফজলুল্লাহ। তিনি ২০০৯ সালের ৬ জুলাই চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০২০ সালে ১ অক্টোবর আরও তিন বছরের জন্য তাঁকে এমডি পদে নিয়োগ দেয় সরকার। এ কে এম ফজলুল্লাহ একসময় ওয়াসায় কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৮ সালে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে অবসরে যান তিনি।ওয়াসার নথিপত্র অনুযায়ী, শুরু থেকে এ কে এম ফজলুল্লাহকে মাসে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি। এরপর তাঁর মূল বেতন নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, আপ্যায়ন, বিশেষ ভাতাসহ মিলিয়ে মোট পান ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা, যা ২০১৬ সালের মে মাস থেকে কার্যকর হয়।
এমডি যখন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির চেষ্টায় আছেন, তখন গত ১২ বছরে অন্তত ১০ বার ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে। করোনাকালেও পানির দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা এ বছরের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হচ্ছে। ২০১৩ সালে এক হাজার লিটার পানির দাম ছিল ৬ দশমিক ৫৮ টাকা। এখন সে পানির দাম ১৩ টাকা ২ পয়সা।চট্টগ্রাম ওয়াসার এক বোর্ড সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, এখন করোনাকাল চলছে। ওয়াসার আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও সন্তোষজনক নয়৷ এর মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক একলাফেই কয়েক গুণ বেতন বৃদ্ধি করতে চান। যা বিস্ময়কর।