কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অ্যাকাউন্টিং কোর্সটা আমি করাই। আর বিজনেস ডিপার্টমেন্টের করপোরেট ফাইন্যান্স কোর্সের দায়িত্বও আমার। আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে হলে একজন উপাচার্যকে শিক্ষার্থীদের মন বুঝতে হয়। তাদের কী সমস্যা হচ্ছে বা আর কী হলে তাদের জন্য ভালো হয়, এসব যখন উপাচার্যের কাছে সরাসরি তারা বলার সুযোগ পায়, তখন আত্মবিশ্বাস বাড়ে। আস্থা বাড়ে। সে জন্যই আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি থাকা দরকার। আর ক্লাসরুমে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, অন্য কোথাও সেটা পাওয়া যায় না।
করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কী কী পরিবর্তন লক্ষ করছেন?
পরিবর্তন তো হবেই। শিক্ষার্থীরা সহজভাবে চলাচল করতে পারেনি, ক্লাসরুমে আসতে পারেনি। শিক্ষার্থীরা একটা নতুন জীবনে প্রবেশ করেছে। আমরা যেটাকে ইংরেজি ‘নিও নরমাল’ বলছি। আমি দেখেছি শিক্ষার্থীদের কথাবার্তা, অভ্যাস, চাঞ্চল্য—এসবের মধ্যেও পরিবর্তন এসেছে। করোনা মহামারির দেড় বছর পেরিয়ে গেছে। আশার কথা হচ্ছে, আমরা এখন অনেকটাই মোকাবিলা করতে শিখেছি। তবে এই করোনা আমাদের আরও অনেক কিছু শিখিয়েছে। আগে যেমন আমরা মুখোমুখি না বসে মিটিং করার কথা ভাবতে পারতাম না, এখন জুম সফটওয়্যারের মাধ্যমে আমরা যেকোনো জায়গায় বসে মিটিং করতে পারি, সেমিনার করতে পারি। প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে মহামারি আমাদের অনেক এগিয়ে দিয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এই শিক্ষা নিশ্চয়ই আমরা কাজে লাগাব।
করোনায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। অনেকের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। আপনার বিশ্ববিদ্যালয়েও কি এমনটা হয়েছে?স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশকে আমরা বলি একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সুতরাং আমরা শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের অসুবিধা, প্রয়োজনের কথা চিন্তা করেছি সব সময়। প্রতিটি সেমিস্টারে যারা নতুন ভর্তি হচ্ছে, আমরা তাদের ২৫ শতাংশ ওয়েভার (ছাড়) দিয়েছি। যেসব শিক্ষার্থী অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছে, আমরা তাদের অনেক সময় বিশেষ ছাড় দিয়েছি। বেতন মওকুফ করে দিয়েছি বা কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের সুযোগ দিয়েছি। সুতরাং মহামারির আগে যে সংখ্যক শিক্ষার্থী প্রতি সেমিস্টারে নিবন্ধন করত, এখনো তেমনটাই আছে। বরং তার চেয়ে বেড়েছে।
দরিদ্র ছেলেমেয়েরাও যেন পড়তে পারে, সে রকম কোনো প্রকল্প কি আপনাদের আছে?প্রায় এক বছর ধরে ‘প্রান্তিক প্রসার’ নামে একটা প্রকল্প চালু আছে। অর্থনৈতিক বা ভৌগোলিকভাবে যারা প্রান্তিক অবস্থানে আছে, তাদের জন্যই এই প্রকল্প। জেলায় জেলায় আমাদের টিম আছে। বর্তমান বা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেও অনেক দরিদ্র, মেধাবী ছাত্রছাত্রী যোগাযোগ করে। আমরা তাদের বৃত্তির মাধ্যমে পড়ার সুযোগ দিই।এসইউবির ফেসবুক পেজ দেখে মনে হলো ‘অন ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্ট’ থেকে শুরু করে সহশিক্ষা কার্যক্রম—এসবের প্রতি আপনারা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।নিশ্চয়ই। এটা তো স্বীকার করতেই হবে যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কিছুটা ব্যয়বহুল। সুতরাং আমরা যে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি নিচ্ছি, বিনিময়ে তো নিশ্চয়ই তাকে একজন সক্ষম ও চৌকস মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এটাই তো আমাদের দায়িত্ব।
সে জন্য সহশিক্ষা কার্যক্রমকে তো গুরুত্ব দিতেই হবে। যেন সে সুন্দরভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারে, কোনো পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে পারে। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের মাধ্যমে নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেমন বিসিএস পরীক্ষা কীভাবে দিতে হয়, ব্যাংকের পরীক্ষার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হয়, এসবের চর্চাও ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের মাধ্যমে হচ্ছে। আমাদের যে ক্লাবগুলো আছে, তারাও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুকুমারবৃত্তি গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখছে। আমাদের দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে যাঁরা প্রথিতযশা ব্যক্তি আছেন, তাঁদের কথায় শিক্ষার্থীরা নিশ্চয়ই অনুপ্রাণিত হয়। এই ভাবনা থেকে আমরা অনেককে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। যেমন বার্জারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী, এসিআই লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ্ দৌলা, নিটোল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ, শিল্পী মোস্তফা মনোয়ার, তাঁরা বিভিন্ন সময়ে আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।