ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা, সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটছে। আগের ধাপগুলোর মতো পঞ্চম ধাপের ভোটেও সংঘাতময় পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার শঙ্কায় আছেন ভোটাররা। এই শঙ্কার মধ্যেই আজ বুধবার দেশের ৭০৮টি ইউপিতে পঞ্চম ধাপের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।এর আগে চার ধাপে মোট ২ হাজার ৮৪২টি ইউপিতে ভোটের আগে-পরে ও ভোটের দিন বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে সহিংসতায় সারা দেশে এ পর্যন্ত ৭৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দ্বিতীয় ধাপে। ওই ধাপের নির্বাচন ঘিরে ৩০ জন নিহত হন। দ্বিতীয় ধাপে ভোটের দিন সংঘাতে জড়িয়ে ছয়জন এবং তৃতীয় ধাপে সাতজন নিহত হন। চতুর্থ ধাপের ভোটের দিনের সহিংসতায় নিহত হন তিনজন
বেশির ভাগ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও দলের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে।পঞ্চম ধাপের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় চারজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। এর মধ্যে গত ১০ ডিসেম্বর কুমিল্লায় একজন ও ২০ ডিসেম্বর বগুড়ায় একজনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ গত ৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারি ঝিনাইদহের শৈলকুপায় পরপর দুই দিনে দুজন নিহত হন। দুটি হত্যার ঘটনাই শৈলকুপার সারুটিয়া ইউপি নির্বাচন ঘিরে। নিহত দুজনই আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চম ধাপে দেশের ৪৮ জেলার ৯৫টি উপজেলার ৭০৮টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৪০টিতে ইভিএমে (ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন) ভোট নেওয়া হবে। এই ধাপের নির্বাচনে মোট ১৯৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ৪৮ জন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৩৩ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে সদস্য পদে ১১২ জন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৬ হাজার ৪৫৭ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ২৭৪ জন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৭ হাজার ৯৫০ জন ও সাধারণ ওয়ার্ডে সদস্য পদে ২৫ হাজার ২৩৩ জন প্রার্থী হয়েছেন।
দলীয়ভাবে বিএনপি ইউপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। সবশেষ গত ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ৫১ শতাংশ ইউপিতে নৌকার প্রার্থীরা জয়ী হন। বাকি ৪৯ শতাংশ ইউপিতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী, স্বতন্ত্রভাবে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতারা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন।
পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন ঘিরে সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার ও গত সোমবার রাতে দুটি স্থানে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সদস্য প্রার্থী তালাত মাহমুদের বাড়িতে ঢুকে গুলি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউনিয়নের বহলাডাঙ্গা গ্রামের বিশ্বাসপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। তালাত মাহমুদের স্বজনদের দাবি, এ ইউপির আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আহমদ হোসেনের ভাই আবদুস সোবহান ও রাশেদুজ্জামানের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আবদুস সোবহান।রাজশাহীর বাগমারার সোনাডাঙ্গা ও বড় বিহানালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুর ও সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে সোনাডাঙ্গায় চেয়ারম্যান প্রার্থীকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ভোটের এক দিন আগে গত সোমবার এসব ঘটনার কারণে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সংশয় ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।