জুনিয়রদের ঘুম থেকে তুলে রাতভর নির্যাতন করলেন ২ ছাত্রলীগ নেতা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলে রাতভর দুই জুনিয়র কর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সিনিয়র দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। রবিবার ভোর ৪টার দিকে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। 

এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত দুজন হলেন উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের চতুর্থ বর্ষের সিফাত উল্লাহ সিফাত এবং আধুনিক ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটের অধীনে ইংলিশ ফর স্পিকারস অব আদার ল্যাঙুয়েজেস বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান অর্পণ। তাদের সঙ্গে ছিলেন একই সেশনের তাহসিন, মারফ এবং রেদওয়ান। 

তারা সবাই ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী। এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে মারধরের কারণে মূল অভিযুক্ত দুজনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল।  

ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী হলেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল ইসলাম এবং থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের একই সেশনের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম। আরিফুল ইসলাম হল সংসদের সদ্য সাবেক সদস্য। 

তারা দুজন বর্তমানে হলের বাইরে অবস্থান করছে বলে জানা যায়। 

ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী জানান, আমরা দুজন রাতে ঘুমাচ্ছিলাম। রাত ২টা ৪০ মিনিটের দিকে আমাদের ইমিডিয়েট সিনিয়র সিফাত ও মাহমুদুর রহমান আমাদের তাদের রুম ৩৫১ তে ডেকে নিয়ে যায়। তখন আমরা বললাম, এত রাতে আমাদের কেন ডাকছেন? তখন তারা বলে, আগে রুমে আয়। এরপর আমরা রুমে গেলে আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে এবং মারধর করে। 

আরিফুল ইসলাম জানান, আমরা রাজনৈতিকভাবে আমাদের ইমেডিয়েট সিনিয়রদের থেকে এগিয়ে যাচ্ছি এতে তাদের মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তাই তারা ব্যক্তিগত ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে আমাদের ওপর নির্যাতন শুরু করেছে। আমাদের পরীক্ষা থাকার কারণে আমরা প্রোগ্রাম ও গেস্টরুমে অনিয়মিত হয়ে যাই। তাই তারা আমাদের ওপর চড়াও হয় এবং নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে আমি অসুস্থ হয়ে মাটিতে ঢলে পড়ি। মারার সময় আমাদের দুপুর ১২টার মধ্যে সব জিনিসপত্র নিয়ে হল থেকে বের না হলে মেরে টাঙ্কিতে ফালাই রাখমু বলে হুমকি দেয়। 

অভিযুক্ত সিফাত উল্লাহ সিফাত বলেন, সামনে হল সম্মেলন। আর আমি ভালো অবস্থানে আছি। তাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। 

শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী ও গ্রুপ নিয়ন্ত্রক ইমরান সাগর বলেন, তারা তো আমার ছোটভাই। বিষয়টি আমি মীমাংসা করে দেব। আমি জানতাম তারা রাতে বসবে। কিন্তু এতে কোনো মারধরের ঘটনা ঘটবে তা আমি জানতাম না। খোঁজখবর নিয়ে বিষয়টি সমাধান করা হবে। 

মাস্টারদা সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মকবুল হোসেন ভুঁইয়া বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা প্রক্রিয়াধীন। আমি এতটুকু বলতে পারি আপাতত। আলাপ-আলোচনার পর বাকি প্রক্রিয়া আমরা বিবেচনা করব। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হয়েছি এবং সার্বিক খোঁজ-খবর নেয়ারর জন্য হল প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। হল প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

Leave a Comment