বিশ্বের প্রথম কুরআন-অনুপ্রাণিত পার্ক: ‘কুরআনিক পার্ক’, দুবাই!!
মানুষ জীবনে কোন না সময়ে বিভিন্ন পার্কে গিয়ে থাকে, হতে পারে তা স্থানীয় কোনো পার্ক, রিক্রেশনাল পার্ক অথবা কোনো অ্যামিউজমেন্ট পার্ক। কিন্তু কখনও কি শুনেছেন পবিত্র কোরআন শরীফ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি এক ‘ কুরআনিক পার্ক’ সম্পর্কে ??
হ্যাঁ, ঠিক এই ধরণের একটি পার্ক- ই বানিয়ে পুরো বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহর । এই পার্ক এখন দুবাইয়ের ‘ব্র্যান্ড নিউ’ আকর্ষণ । কুরআনিক পার্ক দুবাইয়ের রিক্রেশনাল রিজিওন আল-খাওয়ানিজ -এ অবস্থিত। এটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয় ২০১৯ সালের ৩০ মার্চ। পার্ক কতৃপক্ষ জানিয়েছে যে, এই পার্কে প্রবেশের জন্য কোনো ধরণের ফি দিতে হবে না কাউকই!!
প্রায় ৬৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে এই পার্ক বানানো হয়েছে। এই পার্কের মূল উদ্দেশ্য হলো সকল বিশ্বাসের মানুষকে একত্রিত করা এবং পবিত্র কুরআন সম্পর্কে মানুষকে প্রকৃত ধারণা দেয়া। তাই কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ঘটনা ও বিষয়ের উপর ভিত্তি করে এর আদলেই গড়ে তোলা হয়েছে পার্কটিকে। এই পার্কে পবিত্র কিতাবের সৌন্দর্য ও অলৌকিকতাকে সকল ধর্মের মানুষের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে ।
ইসলামের বিভিন্ন ঘটনাগুলোকে বর্ণনা করার জন্য এই পার্কে জিওগ্রাফিক, ল্যান্ডস্কেপিং ও ইকোলজিকাল সিস্টেম ব্যবহার করে বিজ্ঞানসম্মত রূপক নিদর্শন তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও টেকনোলজির সাহায্যে ইসলামের বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সাফল্যকেও যথাযথভাবে চিত্রিত করা হয়েছে।
কুরানিক পার্কে প্রথমেই রয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন প্রধান প্রবেশপথ, একটি ইসলামি বাগান, শিশুদের খেলার জন্য নির্ধারিত জায়গা, কুরআনের মহিমা প্রদর্শনের স্থান, উমরাহ কর্ণার, মরুদ্যান, একটি গ্লাস হাউজ, পাম বাগান সহ আরো অনেক আকর্ষণীয় স্থান।
গ্লাস হাউজ কুরানিক পার্কের একটি প্রধান আকর্ষণ বলা যায়। এর মধ্যে রয়েছে কুরআন ও সুন্নাহে উল্লেখিত ৫৪টি গাছপালা এবং এসকল গাছপালা লাগানো হয়েছে ইকোলজিকাল পন্থায়। বিশেষ গুণসম্পন্ন গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে জলপাই গাছ, ডুমুর গাছ, কালো মেহেদি, অ্যালোভেরা, তেঁতুল গাছ, যব, গম, ডালিম গাছ ইত্যাদি। এবং এই গাছগুলো কুরআনে কিভাবে, কখন, কোন ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, তার বর্ণনাও দেয়া রয়েছে। গ্লাস হাউজে আরো আছে একটি অবজারভেশন ডেক যেখান থেকে পুরো জায়গার সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব।
পুরো পার্ক জুড়ে রয়েছে পাম বাগান ও ফলের বাগান সহ মোট ১২টি বাগান। এছাড়াও গ্লাস হাউজ জুড়ে এবং, পার্ক জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা সোলার প্যানেলের ট্রে গুলোর উপর চোখে পড়বে অ্যারোবিক ক্যালিগ্রাফি। একটি শিক্ষা কর্ণারও রয়েছে পার্কে যেখানে সকলকে বিশেষ করে শিশুদের ধারণা দেয়া হয় হজ্ব ও উমরাহ সম্পর্কে।
পার্কের আরেকটি আকর্ষণীয় স্থান হলো ‘মিরাকেল ক্যাভ’। এটি মূলত মনুষ্য তৈরি একটি গুহা যেখানে বর্ণিত হয়েছে ইসলামে সংঘটিত বিভিন্ন অলৌকিক ও বিস্ময় কিছু ঘটনা। যেমন- কুদরতি রাস্তার নিদর্শন , ইসা (আ) এর জীবন্ত পাখি নির্মাণের নিদর্শন ইত্যাদি।
আধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এখানে তৈরি করা হয়েছে ডিজিটাল থিয়েটার। যেখানে প্রদর্শন করা হবে ইসলামী ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ভিডিও চিত্র ও ডকুমেন্টারি ক্লিপস ।এছাড়াও পার্কে আরও রয়েছে ওয়াটার ফলস্, রানিং ট্র্যাক, সাইক্লিং ট্রাক, ওপেন প্লেগ্রাউন্ড সহ কুরআনের আলোকে স্থাপিত নানা ধরণের স্থাপনা ও আয়োজন।
ইতোমধ্যে কুরআনিক পার্ককে টাইম ম্যাগাজিন ‘ওয়ান অব দ্য ওয়ার্ল্ড গ্রেটেস্ট প্লেসেস’ বলে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। পার্ক কতৃপক্ষ হতে জানা যায়, এটি নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে দুবাই মুদ্রায় প্রায় ২৭ মিলিয়ন অর্থ। ২০১৩ সাল থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমিক ভাবে তিন টি ধাপে এই পার্কের কাজ সম্পন্ন হয়। জানা যায় যে, দুবাইয়ের অন্যান্য দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাগুলোর মতোই পর্যটকদের নজর কাটতে সক্ষম এই কুরআনিক পার্ক।
Reporter: Marzia Mustari Progga